করোনা ভাইরাস রিকভারি ফান্ড গঠন নিয়ে মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েছে ইউরোপের দেশগুলো। গত ১৯‌শে জুন ২৭ বিলিয়ন ইউরোর একটি তহবিল গঠনের লক্ষ্যে ইউরোপের ২৭টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার-প্রধানগণ এক ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হন ব্রাসেলসে। ইউরোপিয়ান কমিশনের ডাকে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে অংশগ্রহণকারী ইউরোপিয়ান নেতারা কোনো মতৈক্য ছাড়াই বৈঠক শেষ করেন।

বৈঠকে অংশ নিয়ে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল বলেন, এ রকম একটি ফান্ড গঠনে ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচাইতে গভীর অর্থনৈতিক মন্দায় নিপতিত হবে ইউরোপ। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্বসহকারে দেখছে না।

মেরকেল বলেন, ইউরোপ এখন খুবই জটিল একটা সময়ের মাঝে এসে পড়েছে। কিন্তু ইউরোপের নেতাদের সাথে যখন টেলিফোনে কথা বলি তখন তারা বিষয়টি আদৌ বুঝতে পারছেন কি না, বুঝতে পারি না। অথচ বাস্তবতা এমন যে চলতি ২০২০ সালেই ইইউ-র অনেক সদস্য দেশের অর্থনীতি ১০ পারসেন্ট পর্যন্ত ডুবে যাবে।

জার্মানির চ্যান্সেলর পরে সাংবাদিকদের জানান, এ আলোচনা মধ্য-জুলাই পর্যন্ত চলবে।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাকরোঁ আগামী মাসের মধ্যেই এ ব্যাপারে একটা ঐকমত্যে আসার জন্য ইউরোপিয়ান নেতৃবর্গের প্রতি আবেদন জানান। তাকে সমর্থন দেন জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল।

আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম ও নেদারল্যান্ডস বলেছে, চলমান আলোচনায় কোনো মতৈক্য না হলেও তাদের সঙ্কট মোচনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হোক।

তবে এ ফান্ডের আকার, ঋণ ও অনুদানের ভারসাম্য এবং অর্থ পাওয়ার যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে ইউরোপের নেতারা প্রথম থেকেই মতবিরোধে জড়িয়ে পড়েন। বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রিয়া, সুইডেন ও ডেনমার্কের নেতারা শর্তবিহীন ঋণ দেয়ার একেবারেই পক্ষপাতী নন। তারা জানতে চান, আপনারা কি ঋণ পাচ্ছেন তাই নিচ্ছেন, নাকি এ ঋণ বিনিয়োগ করবেন? জানা দরকার, এ ঋণের অর্থ কোথায় বিনিয়োগ করবেন এবং তা কতটুকু লাভজনক। কিন্তু কিছু-কিছু দেশের ভাব দেখে মনে হয়, তারা বলতে চাচ্ছে, আমাদের টাকা দাও, তাহলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।

এ রকম সন্দেহপ্রবণ একটি দেশের এক কূটনীতিক বলেন, এ ফান্ডের অর্থ কোথায় দিচ্ছি, কাকে দিচ্ছি, কীভাবে তা খরচ হচ্ছে এবং তা থেকেই বা কি সুফল মিলবে, সবকিছু বিচার-বিবেচনা না-করে আমরা প্রথমেই 'ইয়েস' বলে বসবো না।

ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজক ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মাইকেল পরে সাংবাদিকদের জানান, এ বিষয়ে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে উপনীত হতে আগামী জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে ইউরোপিয়ান নেতাদের সরাসরি অংশগ্রহণে আরেকটি বৈঠক ডাকা হবে।

সৈয়দ আতিকুর রব
ডাবলিন, আয়ারল‌্যান্ড