যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশ কর্মকর্তার হাতে কৃষ্ণাঙ্গ হত্যার ঘটনায় চলমান বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, শুক্রবারও বেশ কয়েকটি শহরে আন্দোলনকারীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এদিকে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, সহিংস বিক্ষোভের মুখে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
২৫ মে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের বৃহত্তম শহর মিনিয়াপলিসে পুলিশ জর্জ ফ্লয়েড নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করলে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে তাকে আটক করতে গিয়েছিল পুলিশ। একজন প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের ভিডিওতে দেখা গেছে, হাঁটু দিয়ে তার গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য। নিহত ফ্লয়েড নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। কৃষ্ণাঙ্গদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন ফ্লয়েড। হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
৪৬ বছর বয়সী এই কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই মিনিয়াপোলিস উত্তাল হয়ে ওঠে। মঙ্গল ও বুধবার বিক্ষোভকারীরা পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ান। বেশ কয়েকটি ভবন ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। শুক্রবার হোয়াইট হাউসের বাইরে কয়েকশ বিক্ষোভকারী বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। মিনেসোটা, নিউ ইয়র্ক ও ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। উত্তেজিত প্রতিবাদকারীরা বৃহস্পতিবার মিনিয়াপোলিসের একটি থানাও জ্বালিয়ে দিয়েছে। মিনেসোটার গভর্নর অঙ্গরাজ্যের সবচেয়ে বড় এ শহরটিতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনায় মিনিয়াপোলিস পুলিশ বিভাগ তাদের চার কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করে। এদের মধ্যে ফ্লয়েডের ঘাড়ে হাঁটু তুলে দেয়া ৪৪ বছর বয়সী ডেরেকও আছেন। গ্রেফতারের পর ডেরিকের বিরুদ্ধে ফ্লয়েডকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার তাকে আদালতে হাজির করার কথা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনাকে 'ভয়ানক ব্যাপার' বলে অ্যাখ্যা দিয়েছেন। নিহত আফ্রিকান-আমেরিকানের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন ডিসিতে হোয়াইট হাউসের কাছে জড়ো হওয়া বিক্ষোভকারীরা ফ্লয়েডের ছবি হাতে বিক্ষোভ দেখান ও 'আমি শ্বাস নিতে পারছি না' স্লোগান দেন। এ প্রতিবাদ কর্মসূচির সময় হোয়াইট হাউস অস্থায়ীভাবে লকডাউন করে দেয়া হয়; গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের এ বাসভবনের প্রবেশ ও বেরিয়ে যাওয়ার পথগুলো বন্ধ করে দেন।
ফ্লয়েডের মৃত্যুর প্রতিবাদে টানা বিক্ষোভ চলা মিনিয়াপোলিস ও সেইন্ট পল শহরে শুক্র ও শনিবার রাত ৮ থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। দোকান লুটপাট ও ভবন-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ঠেকাতে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিউ ইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, শিকাগো, ডেনভার, হিউস্টন, লুইজভিল, ফিনিক্স, কলম্বাস ও মেম্ফিসসহ যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি শহরে শুক্রবার পুলিশের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা আটলান্টায় বেশ কয়েকটি ভবনে ভাংচুর চালিয়েছে, পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে। ডালাসে প্রতিবাদকারীদের ইট-পাথর ছোড়ার পর পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুড়েছে।