ব্রিটেনে অ্যামনেস্টি তথা অবৈধদের সাধারণ ক্ষমার বিষয়টি এখন সবার আলোচনার বিষয়। আলোচনার প্রধান কারণ হচ্ছে মরণঘাতি করোনাভাইরাসের কারনে অবৈধদের চিকিৎসা, বাসস্থান ও জীবিকা নির্বাহে ব্যঘাত হওয়া।
এদেশে যারা সরকারের অনুমোতি ছাড়া বাস করছেন তাদের অনেকেই কাজের অধিকার না থাকলেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়ম লংঘন করে আয় করতেন এতদিন। কিন্তু লকডাউনের কারনে সেসব প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। এ কারনে তাদের বেঁচে থাকার জন্য মানবিক দিক বিবেচনা করে অ্যামনেস্টির বিষয়টি আবারো সামনে এসেছে।
এরই মধ্যে ব্রিটেনের মেইনস্ট্রিমের ২০টিরও বেশি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও চার্চের পুরোহিতরা ডকুমেন্ট ছাড়া অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার অনুমোতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে। আর সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিদের কাছে চিঠি দিয়ে এবং অনলাইনে পিটিশন করে আবেদনের চিন্তা করছে বিভিন্ন কমিউনিটির মানুষ। এছাড়া ব্রিটেনের প্রতিবেশি পর্তুগাল অভিবাসী ও এসাইলাম প্রার্থীদের করোনাভাইরাসের কারনে সাময়িকভাবে বৈধতার সুবিধা দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে। ইতালীতে করোনার কারনে অবৈধদের সাধারণ ক্ষমা করে বৈধ হওয়ার ঘোষনা দিয়েছে। আর তাই ব্রিটেনেও এমনেস্টি এ বিষয়ে জোর আন্দোলন ও প্রচারনা চালাচ্ছে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকার কি ভাবছে তাদের নিয়ে?
ব্রিটেনে এখন সেই প্রধানমন্ত্রী শাসন ক্ষমতায় যিনি দেশটির রাজধানী লন্ডনের মেয়র থাকাবস্থায় অবৈধদের সাধারণ ক্ষমার বিষয়ে চিন্তা করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছিলেন। আবার তিনি যখন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তখনও সরকারের কাছে আবেদন করেন বিশেষ বিবেচনায় অবৈধদের বৈধতা দিতে। এছাড়া তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বে তখন 'উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারীতে' জড়িয়ে পড়ে ব্রিটেন। সে সময়ও নির্দিষ্ট সংখ্যক অবৈধদের বৈধতা দিতে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে জোর গলায় দাবি করেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে। নাম তার আলেকজেন্ডার বরিস জনসন। ব্রিটেনের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘদিন সাংবাদিকতায় থাকা এই ব্যক্তি রাজনীতিতে এসে একের পর এক সফলতা দেখিয়ে লক্ষ্যে পৌছে এখন দেশের প্রধানমন্ত্রী। ব্রিটেনের কট্ররপন্থী রাজনৈতিক দল কনজার্ভেটিভ পার্টি বা টোরী পার্টির দলীয় প্রধান হয়ে কাজ করছেন তিনি। এই দলটি দেশের ইমিগ্রেন্ট তথা অভিবাসীদের সহায়ক নয় বলে ধরা হয়। অপর পক্ষে বিরোধী লেবার পার্টিকে ব্রিটেনের অভিবাসীদের সহায়ক দল বলে মনে করা হয়। তাই টোরী পার্টির মেয়র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে অভিবাসীদের পক্ষে এমন জোরালো ও সহায়ক ভূমিকা রাখায় সবাই আশ্চর্য হয়েছিল বৈকি। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দেখেছে, ওই কনজার্ভেটিভ বা টোরী পার্টির ২০১৯ এর নির্বাচনী মেনোফেস্টোতে অবৈধদের এমনেস্টির বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি ছিলো না। আর নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পাওয়ার পরও অবৈধদের এমনেস্টির বিষয়ে কোন যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে না ওই টোরী পার্টি। যদিও গত বছরের জুলাই মাসে সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন অবৈধদের বৈধতা দিতে তার নীতিগত সমর্থন আছে বলে জানান। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগী হয়ে এমনেস্টির বিষয়ে কোন কাজ করতে দেখা যায়নি।
অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে 'উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারী' কি ? ১৯৪০ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ব্রিটেনে পাড়ি দেওয়া উইন্ডরাশ জেনারেশন অভিবাসীদের অনেকেই দেশটিতে অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিলেন। (ওই অভিবাসীদের বড় একটা অংশ উইন্ডরাশ নামক জাহাজে ব্রিটেনে পাড়ি দিয়েছিল তাই তাদের উইন্ডরাশ জেনারেশন বলা হয়)। ব্রিটিশ সরকারের অভিবাসন নীতির কারণে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়।
২০১৮ সালের এপ্রিলে এমন অবৈধ অভিবাসীদের দেশ থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন তখনকার বিদায়ী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। ওই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, কয়েক বছরে ১০ শতাংশের বেশি অবৈধ অভিবাসীকে যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এটি ফাঁস হওয়ার জেরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ২৯ এপ্রিল রাতে পদত্যাগে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাম্বার রাড। সে সময় নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পান পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত অভিবাসী পরিবারের সন্তান সাজিদ জাভিদ। অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের বিষয়টি পরিচিতি পায় 'উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারি' নামে। ১৯৭৩ সালের আগে কমনওয়েলথ নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেওয়া অনেকেও ওই উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বিপাকে পড়েছেন।
উইন্ডরাশ কেলেঙ্ককারীসহ আরো কয়েকটি ঘটনায় সরকার আইনগত সমস্যায় পড়তে পারে বলে আশংকা করে কয়েকজন সংসদ সদস্য। ওই ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রিটেনে বাস করা কয়েক হাজার উগান্ডার অধিবাসী যারা দীর্ঘ ৪০ বছর বাস করেও স্থায়ী হওয়ার ক্ষেত্রে আইনগত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল। আবার রয়েছে ৬৯ বছরের এক কানাডিয়ান প্রতিবন্দ্বী , যিনি ১৯৭১ সাল থেকে ব্রিটেনে বাস করেও স্থায়ী হতে পারছিলেন না। ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় তাকে দেশ ত্যাগ করার নির্দেশ দিলে প্রশ্নের মুখে পড়ে সরকার। এমনই নানা কারনে সরকারকে যেনো বিপাকে পড়তে না হয় সেজন্য (১০ বছরের বেশি ব্রিটেনে কোন ধরনের অপরাধ না করে বাস করা) ডকুমেন্ট ছাড়া অভিবাসীদের একটি নিয়মের মধ্যে স্থায়ীবাসের পন্থা বের করার অনুরোধ করেন বরিস জনসন। কিন্তু তখনকার প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বরিসের প্রস্তাবের বিরোধীতা করে সে সময় বলেছিলেন, সব অবৈধদের সাধারণ ক্ষমা জনগন দেখতে চায় না। তাই আমরা এর নানা দিক চিন্তা ভাবনা করে তবেই সিদ্ধান্ত নেবো।
এরপর ব্রেক্সিট চুক্তির অচলাবস্থার কারনে ক্ষমতা থেকে সরে দাড়াঁন থেরেসা মে। টোরী পার্টির প্রধান হিসেবে প্রধামন্ত্রীর দায়িত্ব পান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন। কিন্তু ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পাস করাতে ব্যর্থ হন তিনিও। ফলে নতুন করে নির্বাচন অনিবার্য হয়ে পড়ে। নির্বাচনে একক সংখ্যা গরিষ্ঠ আসন পেয়ে জয় লাভ করে টোরী পার্টি। এতে আবারো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পান বরিস। কিন্তু ক্ষমতায় এসে পুরোনো প্রতিশ্রুতি ভুলে যান তিনি। বৈধ কাগজপত্র ছাড়া বসবাসরত অভিবাসীদের বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে দেশটির কর্তৃপক্ষ। সরকারের এমন অবস্থান বদলে হতাশা তৈরি হয় অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে। কেননা এ সংক্রান্ত আগের ঘোষণা তাদের আশাবাদী করে তুলেছিল।
সে সময় পার্লামেন্টে বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি ডাঃ রোজেনা এলিন খান প্রশ্নোত্তর পর্বে অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়ে সরকারের বক্তব্য জানতে চান। জবাবে অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী ভিক্টোরিয়া এটকিনস জানান, সরকার একটি অভিবাসন নীতিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে। এটি নিরাপদ ও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য দেশের মানুষদের ব্রিটেনে স্বাগত জানায়। একইসঙ্গে এটি অবৈধ অভিবাসনকে বাধা দেয়।
সরকারের এমন আচরণে ব্যাপক সমালোচনা করে অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা আদায়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন। এমনই একটি সংগঠন ফোকাস অন লেবারি এক্সপ্লয়টেশন (ফ্লেক্স)। ওই সংগঠনে প্রধান নির্বাহী লুসিয়া গ্রান্ডাক বলেন, ব্রিটেনে বসবাস ও কাজের বৈধ অনুমোদনহীন মানুষকে সাধারণ ক্ষমা দিলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত হতো। সরকারও লাভবান হতো। আরেকটি সংগঠন রেনিমেইড ট্রাস্টের ডিরেক্টর ওমর খান বলেন, অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দিতে প্রধানমন্ত্রীর পূর্ব প্রতিশ্রুত সাধানরণ ক্ষমার বিষয়টি ছিল নিছকই কথার কথা। নির্বাচনে ভোট পাওয়ার আশায়। তা এখন প্রমাণিত হয়েছে।
সম্প্রতি কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে অন্যান্য দেশের মতো ব্রিটিশ সরকার লকডাউনের ঘোষনা দেয়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে ওইসব অভিবাসী যাদের এদেশে বাস করার যথাযথ ডকুমেন্ট নাই অথবা যাদের এদেশে কাজের অনুমোতি নেই। এছাড়া ওই অভিবাসীদের অনেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে তাদের প্রতি মানবিক আচরনের প্রশ্ন সামনে চলে আসে। এমনই দুর্যোগের সময় দেশটির পার্লামেন্টের বিভিন্ন পার্টির ৬০ জন এমপি সবার জন্য ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে অনুরোধ করে। তাদেরই একজন লিবারাল ডেমোক্রেটিক পার্টির হোম এফেয়ার্স মুখপাত্র ক্রিসটাইন জারডাইন বলেন, জনগনের সবার স্বাস্থ্যসেবার জন্যই চিকিৎসা সেবা অত্যাবশ্যকীয়। তবে বিশেষত করোনাকালে এটা বেশি প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, উইন্ডরাশ কেলেঙ্কারীর মতো খারাপ অভিজ্ঞতার পরও এদেশের অনেক অভিবাসীকে চিকিৎসা নিতে হেনস্থের শিকার হতে হচ্ছে, যা অপ্রত্যাশিত।
এমপিদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সরকারও মানবিক দিক বিবেচনা করে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (এনএইচএস) নির্দেশ দিয়েছে করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য এদেশে বৈধভাবে আছে কিনা তা যাচাই না করতে। এদিকে পর্তুগাল এবং ইতালীর অবৈধদের করোনার সময় বিশেষ সুবিধার ঘটনায় ব্রিটেনেও গুজব রটে যায়, এদেশে এমনেস্টি দিবে সরকার।
প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ সরকার এবিষয়ে এখনো কিছু ঘোষনা করেনি।
আর করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে সরকারের কাছে এমনেস্টির জন্য যে পিটিশন করা হয়েছিল তাও সরকার বাতিল করে দিয়েছে। তবে ৩রা মে, ২০২০ গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা যায়, ব্রিটেনে ডকুমেন্ট ছাড়া অভিবাসী, এসাইলাম প্রার্থী ও শরনার্থীদের অস্থায়ীভাবে দেশটিতে থাকার অনুমতি দেয়ার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে ২০টিরও বেশি চ্যারিটি ও চার্চের পুরোহিতরা।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বরাবর লিখা খোলা চিঠিতে তারা বলেছে, ওই অভিবাসীরা এই মহাদুর্যোগে সরকারের পাবলিক ফান্ড না পাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। এদের অনেকে পার্কে বা রেল ও বাস স্টেশনে বাস করতে বাধ্য হচ্ছে। আবার অনেকে অন্যের সহায়তায় কারো বাসায় বাস করলেও নানা কারনে পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছে এবং অনেকে ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের শিকার হচ্ছেন। সরকার সম্প্রতি তাদের জন্য ফ্রি চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করলেও তাদের অনেকে নানাধরনের ভয়ে সেসব সুবিধা নিতে যাচ্ছে না। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর চ্যারিটি সংস্থাগুলো তাদের জরুরী সহায়তা দিলেও তা এখন আর সম্ভব হচ্ছে না। আবার লকডাউনের কারনে সহজে চলাচল না করতে পারায় তারা নানা ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছে। ওই অভিবাসীদের অস্থায়ীভাবে থাকার অনুমোতি দিলে শুধু তারাই উপকৃত হবে না, সরকারও উপকৃত হবে। কারন অভিবাসীদের অনেকে চিকিৎসা ও অন্যান্য কাজে অভিজ্ঞ। এছাড়া ওসব অভিবাসীরা দীর্ঘদিন এদেশে বাস করায় অন্যান্য কাজে পারদর্শী হয়ে উঠেছে ও এখানকার পরিবেশের সাথে মিশে গেছে। করোনাকালে ও পরবর্তী সময়ে সরকার তাদের কাজে লাগাতে পারে।
এ বিষয়ে বরিস সরকারের এক মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে জানান, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এদেশে বাস করছে এমন কারো করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দিলে সরকার তাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা সহায়তা দিবে। এক্ষেত্রে তাদের কোন ধরনের ইমিগ্রেশন স্ট্যাটাস পরীক্ষা করা হবে না। এনএইচএসকে আমরা এমনটাই জানিয়ে দিয়েছি। তবে কেউ যদি এদেশে স্থায়ীভাবে বাস করতে চায় তবে তাদের অবশ্যই আইনগতভাবে করতে হবে। কারো এদেশে আইনগতভাবে বাসের অধিকার না থাকলে তাদের জন্য সরকার পাবলিক ফান্ডের ব্যবস্থা করতে পারবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি আইনজীবি তারেক চৌধুরী ও নাশিদ রহমান এক ফেইসবুক লাইভ আলোচনায় জানান, করোনার কারনে এমনেস্টির বিষয়টি এখন আরো মানবিক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এশিয়ান কমিউনিটির কেউ অবৈধদের সাধারণ ক্ষমা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তারা বলেন, অন্যান্য কমিউনিটির সাথে আলোচনা করে এবং ব্রিটেনের সব এমপির সাথে যোগাযোগ করে ভালভাবে প্রস্তুতি নিয়ে একটি পিটিশন করলে ভাল ফল পাওয়া যেতে পারে।
ডিপলক সলিসিটর্সে কর্মরত আরেক আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ডকুমেন্ট ছাড়া অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করছে। এ জন্য সব কমিউনিটি মিলে কাজ করলে কিছু একটা হতে পারে। ব্রিটেনে এসাইলাম আবেদন করলে প্রার্থীদের কাজের অধিকার থাকে না। আবেদনের পর দীর্ঘদিন কোন রেজাল্ট না পাওয়ায় অধিকাংশ প্রার্থী মানবেতর জীবনযাপন করে।
এছাড়া এসাইলাম প্রার্থীরা আবেদনের পর এক বছরের মধ্যে কোন রেজাল্ট না পেলে তাদের যে কাজের অধিকার দেয়া হয় তা প্রার্থীদের কোন কাজে লাগে না। ওই কাজের অধিকারে যে কোন কাজ করার অনুমতি থাকলে এসাইলাম প্রার্থীরা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। তাদের কাজের অধিকারের জন্য সরকারে কাছে জোর দাবী জানানো দরকার।
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে 'ওভার স্টেয়ার রেগুলেশন ২০০০' নামে আইন করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় নীতিমালার মধ্যে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের ব্রিটেনে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিলো। তারপর জুলাই ২০০৬ সালে আটকে পড়া ৪ লাখ ৫০ হাজার ফাইলের ওপর ৫ বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয় গ্রহণ করেছিলো, যা বহুলভাবে 'লিগ্যাসি' নামে পরিচিত। তার মধ্যে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষকে বিভিন্নভাবে বৈধতা দেওয়া হয় এবং ফাইলগুলো বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রত্যাখান করে ২০১১ সালে লিগেসির পরিসমাপ্তি ঘটে।
এর আগে ২০১০ সালের ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির তৎকালীন প্রধান নিক ক্লেগ ব্রিটেনে অবৈধভাবে বসবাসকারীদের বিভিন্ন শর্তের মাধ্যমে বৈধতা প্রদানের প্রস্তাব করেছিলেন, যার নাম ছিলো 'রুট টু সিটিজেনশিপ'। তার প্রস্তাবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো ছিল, আবেদনকারীকে ব্রিটেনে অন্তত ১০ বছর বসবাসের প্রমাণ থাকতে হবে এবং কোন অপরাধের রেকর্ড থাকা যাবে না। আবেদনকারীকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী হতে হবে।
এছাড়া তাকে একটি নির্ধারিত পদ্ধতিতে নাগরিকত্ব অর্জনের নীতিমালা প্রদান করা হবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেটা পূরণ করতে হবে।
ইউরোপের দেশগুলোতে অবৈধ অভিবাসীদের সাধারণ ক্ষমার আওতায় নিয়ে বৈধভাবে বসবাসের স্বীকৃতি দেওয়ার সংস্কৃতি বিদ্যমান রয়েছে। স্প্যানিশ সরকার গত ২০ বছরে ছয়বার এমন করে সাধারণ ক্ষমার আওতায় অনথিভুক্তদের বৈধতা দিয়েছে। ইতালি সরকার সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে ৫ বার।
মাহবুব আলী খানশূর
ব্রিটেন প্রবাসী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
লন্ডন, ইউ কে