মাস শেষ হতে চললো, প্রবাসীদের সংকটও ঘনীভূত হওয়া শুরু হলো। অনেকেই মাসের শেষে এবার বেতন পাবেন না, পেলেও অনেকে আংশিক পাবেন। অনেকেই সম্পূর্ণ বেকার। দেশে অবস্থিত পরিবারের মাসিক ভরণপোষণের খরচ হয়তো পাঠানো হবে না।

বেকারত্বের বোঝা, অর্থকষ্ট ও মানসিক যাতনার চাপে অনেকের অসুস্থ হয়ে যাবার সম্ভাবনাও প্রবল। প্রতিকার সহজ নয়। এদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত, তাই টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করতে হবে। আনডকুমেন্টেড, ভিজিট ভিসায় চাকুরী খুঁজতে আসা প্রবাসীদের এমনিতেই তো ত্রিশংকু অবস্থা, তার উপর যোগ হলো করোনা সংকটে বৈধদেরও চাকুরীচ্যুতি, বেতন বন্ধ অথবা অর্ধেক বেতন। এদেশে আমাদের প্রবাসীদের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই সরকারি অথবা প্রাতিষ্ঠানিক চাকুরী করেন, একটি বিশাল সংখ্যা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, তবে বেশীর ভাগই বৈধ/অবৈধ শ্রমজীবী। বড় বড় ব্যবসায়ীরাও আছেন তবে তা হাতে গোনা। এই করোনা সংকটে বড় ব্যবসায়ীরাও কঠিন বিপাকে পড়েছেন। বড় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমাদের এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাই আবার হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমজীবীদের নিয়োগ দিয়ে থাকেন। তাই সমস্যার তিন গেরো! এই হাজার হাজার শ্রমজীবীর কর্মসংস্থান করা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও আমাদের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের যদি বাঁচিয়ে রাখা যায় তাহলে হয়তো এদের কর্মসংস্থানের কিছু একটা ব্যবস্থা হবে। এদেশের সরকারও বেশ কিছু প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন কিন্তু তা মূলত প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর প্রতিষ্ঠানের জন্যই। আমাদের বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এতে তেমন উপকৃত হবেন না। আমাদের সরকার দেশে অবস্থিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য যেমন প্রনোদনা ঘোষণা করেছেন, প্রবাসী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্যও অনুরূপ প্রণোদনা এখন সময়ের দাবী। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন জনতা ব্যাংক ব্যবসায়িক ভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং এদের বেশ কয়েকটি শাখাও আছে। এই ব্যাংকের মাধ্যমেই সরকার সহজ শর্তের ঋণ প্রনোদনা হিসেবে দিতে পারেন। এতে পুঁজি হারানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা আবার দাঁড়িয়ে যেতে পারেন। আমাদের বিশ্বাস এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা দাঁড়াতে পারলে হাজার হাজার শ্রমজীবীরাও উপকৃত হবেন। এসব শ্রমজীবীদের নিয়োগের শর্তেই ঋণ দেয়া যেতে পারে। এই করোনা সংকটে অনেক প্রবাসী পরিবার পরিজন নিয়েও দুর্ভোগে পড়েছেন। সহজ শর্তে ব্যক্তিগত ঋণে উনারাও উপকৃত হবেন। এই ব্যক্তিগত ঋণ শুধুমাত্র স্কুল ফি-এর জন্যও দেয়া যেতে পারে।

বিশ্বব্যাপী এই অর্থনৈতিক মন্দা ভয়াবহ রূপ নেয়ার আগেই আমাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সরকারের কাছে আমাদের আকুল আবেদন থাকলো এই প্রনোদনার বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য। আমাদের বিশ্বাস সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা এই সংকট অবশ্যই কাটিয়ে উঠবো এবং আমরা প্রবাসীরাই বরাবরের মতো দেশের অর্থনীতির একটি ভিত হয়ে থাকবো।

নওশের আলী, দুবাই প্রবাসী
সমাজকর্মী ও সাংস্কৃতিক সংগঠক
দুবাই, ইউ নাইটেড আরব আমিরাত