ইতিহাসে পৃথিবী সৃস্টির পরে এতটা নীরব আর কখনো হয়েছিলো কি- না জানা যায়নি। বিরামহীনভাবে ভাবে পৃথিবীর উপর চলেছে অত্যাচার।
বায়ূ দূষন, শব্দ দূষন, গাছ কেটে পরিবেশের বিপর্যয়, অপরিকল্পিত নগরী, বর্জ্য ফেলে-ক্ষমতার জোরে নদী দখলে নাব্যতা রোধ থেকে শুরু করে পরিবেশ ধ্বংসের এক আদিম খেলায় মেতে উঠেছিলো পৃথিবীর মানুষগুলো। সারা পৃথিবীর মত বাংলাদেশের অবস্থাও ছিল ভয়াবহ।
পৃথিবী যে মাঝে মাঝে বিপর্যয়ের সুরসুরি দেয়নি, তা নয়। ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃস্টি, অনাবৃস্টি, খরা, জলোচ্ছাসে তার অসহায়ত্বের কথার যানান দিয়েছিলো বহুবার। আমলে নেয়নি এ গ্রহের অসুস্থ মস্তিস্কের মানব জাতিরা। করোনা ভাইরাসের কারনে পৃথিবীর প্রায় ৭০-৮০ ভাগ মানুষ এখন গৃহবন্দী।
নিজেকে বাঁচানোর প্রতিনিয়ত চেস্টায় দূরে রাখছি- আত্বীয় স্বজন, পাড়া পড়শী, কর্মক্ষেত্র, সমুদ্র সৈকতে বসে ঢেউয়ের গর্জন, পূর্ন জোছনায় নস্টালজিক মনের ঝুম বৃস্টির শব্দ। সবই বিসর্জনে একটু শুদ্ধ অক্সিজেন নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পরাজিত সৈনিকের মত ধূসর, মলিনের এলোমেলো কারুকাজ এখন মানব সভ্যতায়। জতিসংঘে জলবায়ূু সন্মেলনে পরিবেশ রক্ষায় যত পদক্ষেপ নেয়া হত, তার সিংহভাগই আলোর মুখ দেখতোনা শুধু পৃথিবীর মোড়ল রাস্ট্রগুলোর জন্য।
বিশ্বে যে কয়টি দেশ সবচেয়ে বেশী কার্বন নিঃসরন করে, তার ভিতর- চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ভারত অন্যতম। এর ভিতর চীন একাই পৃথিবীর ২৮% কার্বন নিঃসরন করে থাকেন। আন্তর্জাতিক জলবায়ূ ও পরিবেশ গবেষনা কেন্দ্র থেকেও পরিবেশ বিপর্যয়ে সব রাস্ট্রগুলোকে এগিয়ে আসতে বললেও কার্যত কোন ফল আসেনি। আজ করোনা ভাইরাস ঠেকাতে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই রাস্তাঘাট ফাঁকা। নেই ব্যাস্ত রাস্তার দীর্য গাড়ীর সারি, নেই আকাশ জোরা দূষিত বায়ূ, নেই মিল কারখানার বর্জ্যে নদীর পানির লাল, নীল, বেগুনীর পৈশাচিক খেলা।
পৃথিবী আজ নিঃশ্বাস নিচ্ছে বুক ভরে। মনুষ্য সৃস্টির দূর্গন্ধময় খাঁচা থেকে বের হয়ে আজ নিলাদ্রী এক অপ্সরী। পৃথিবী যত দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে, মানুষের বেঁচে থাকার সময়কালও তত বেড়ে যাবে। এক করোনা পৃথিবীর মানুষদের যা বুঝিয়ে দিয়ে গেল- তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন আলোয় খুব শীঘ্র এক নতুন ভোর দেখার অপেক্ষায় পুরো মানবজাতি।
জুয়েল সৈয়দ
গলওয়ে, আয়ারল্যান্ড
৩০শে এপ্রিল, ২০২০