মক্কায় নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। এই প্রথমবারের মতো দেশটির কোনো শহরে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পদক্ষেপ নেয়া হলো। খবর গালফ নিউজের। মক্কার মেয়র ওসামা আল বার বলেন, এ কেন্দ্র থেকে প্রতি বছর ৩৮৫ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে।

এর মধ্যে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদিত হবে সৌরশক্তি থেকে। ১৬ সেপ্টেম্বর রিয়াদে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে আল বার জানান, সৌদি আরবের কোনো শহরেরই নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র নেই। আমরাই মুসলিম বিশ্বে প্রথমবারের মতো নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র স্থাপন করতে চাই। তাই বিষয়টি নিয়ে আমরা বেশ আশাবাদী। জানা গেছে, সৌরশিল্প নির্মাণে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার ১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করছে। ২০৩২ সালের মধ্যে সৌরশক্তি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সাহায্যে চাহিদা মেটানোই দেশটির লক্ষ্য। ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সির মহাপরিচালক আদনান আমিন বলেন, মক্কার এ কর্মসূচিটি মধ্যপ্রাচ্যের অন্য শহরগুলোর জন্য একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। ১৮ সেপ্টেম্বর লন্ডনে আমিন জানান, বিশ্বব্যাপী মক্কা পরিচিত শহর হওয়ায় এ প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি খুবই সাধারণ একটি পদক্ষেপ। আগামী ২৫ বছরে সৌদি আরব জ্বালানি আমদানিকারক দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। তাই এ প্রকল্প তুলনামূলকভাবে সস্তা হবে। জেদ্দার রেড সি পোর্ট থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মক্কায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। তবে দেশটিতে প্রতি বছর জনসংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।

সৌদি আরবের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ৮৬ শতাংশই তেল রফতানির ওপর নির্ভরশীল। দেশটি অপরিশোধিত তেল রফতানি কমানোর উদ্দেশ্যে বর্তমানে প্রাকৃতিক গ্যাস এবং সৌরশক্তি উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। মক্কার মেয়র জানান, গৃহীত এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করবে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাটমিক অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি এবং সৌদি অ্যারাবিয়ান অয়েল কোম্পানি। এ ছাড়া প্রকল্পটির দায়িত্ব গ্রহণের প্রতিযোগিতায় শামিল হয়েছে সৌদি বিন লাদিন গ্রুপ এবং এসিডব্লিউএসহ বিভিন্ন গ্রুপ। এ প্রকল্পের কাজ আগামী বছরের জুনেই শুরু করা উচিত বলে তিনি মনে করেন। এ প্রকল্পে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আলোর চাহিদা পূরণে ব্যবহার করা হবে। এছাড়া পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হলে মক্কার বিদ্যুৎ খাতে ব্যয়ও কমবে। আল বার বলেন, আমরা সব সুবিধার পথই উন্মুক্ত রাখতে চাই। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই সৌরশক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। মক্কায় দৈনিক ৪ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হয়। এগুলোও বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি জানান।

এদিকে প্রতি বছরই সৌদি আরবে বিদ্যুতের চাহিদা ৮ শতাংশ করে বাড়ছে। অন্যদিকে দেশটিতে জনসংখ্যাও বার্ষিক ৩ দশমিক ২ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকারের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালে দেশটির জনসংখ্যা ২ কোটি ৫০ লাখ ছাড়িয়েছে। চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৫৮ লাখ হজযাত্রী মক্কা নগরী পরিভ্রমণে এসেছেন। ২০১২ সালের শেষে আরও ১৮ লাখ পর্যটক যোগ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাই মক্কায় বিদ্যুতের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে।

অনলাইন ডেস্ক