মহানবী (সা.) কে অবমাননার বিরুদ্ধে কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করতে দেবে না ফ্রান্স। এরপরও যদি কোনো ব্যক্তি বিক্ষোভ করার চেষ্টা করে তাহলে তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড ভোগ করার পাশাপাশি নয়শ’ ডলার জরিমানা গুনতে হবে। 

ফ্রান্সের মুসলমানরা শনিবার প্যারিসের গ্রান্ড মসজিদের সামনে রাসূলের (সা.) অবমাননার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে তাদের সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, এ ধরনের কোনো বিক্ষোভ কর্মসূচি করতে দেয়া হবে না। এর আগেই ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুসলমানদের বিক্ষোভ নিষিদ্ধ ঘোষণা করার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে কোনো কোনো সংগঠন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের চিন্তা করছে। এদিকে বুধবার ফ্রান্সের সাময়িকী ‘শার্লি এবদো’তে রাসূল (সা.)-কে অবমাননা করে কার্টুন ছাপানোর পর ফরাসি মুসলমানরা আরো বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। এর আগেও গত বছর রাসূলের কার্টুন ছেপেছিল ওই পত্রিকা। সে সময় মুসলমানরা পত্রিকাটির অফিসে আগুন দিয়েছিল। বিশ্লেষকরা বলছেন, ফ্রান্স সরকার পুরোপুরি দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করছে। তারা রাসূলের অবমাননা বাক স্বাধীনতা হিসেবে দাবি করলেও এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করছে। কার্টুনে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা.) কে কটাক্ষ করার প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ শুরুর আগেই স্পর্শকাতর কিছু দেশে দূতাবাস বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল ফ্রান্স ৷ তবে বিক্ষোভ ঠিকই চলছে৷

ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবিটি নিয়ে তোলপাড় থিতু হওয়ার আগেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়াতে শুরু করেছে একটি কার্টুন। এ কার্টুনের বিষয়বস্তুও ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের কষ্ট পাওয়ার মতো। ফ্রান্সের সাপ্তাহিক চার্লি হেব্দোতে প্রকাশিত হয়েছে এটি। সেখানেও ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবির মতো হাসির খোরাক বানানো হয়েছে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে৷ তবে এ কার্টুন বাজারে আসার পরই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ফরাসি সরকার৷ দূতাবাসগুলোতে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷ কিছু দেশে দূতাবাস আপাতত বন্ধ৷

এদিকে ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবির বিরুদ্ধে শনিবার যে বিক্ষোভ হওয়ার কথা তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কার্টুনটি কাউকে আঘাত দিয়ে থাকলে তিনি বা তাঁরা আদালতে যেতে পারেন, তবে অন্য কোনোভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা উচিত নয়, কারণ, ফ্রান্স সবার মত প্রকাশের নিশ্চয়তা দেয়, এমনকি কার্টুন প্রকাশেরও। এসব কারণে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ মুসলমানদের ক্ষোভ আরো বেড়েছে। আফগানিস্তান আর ইরানে বিক্ষোভ হয়েছে ফরাসী দূতাবাসের সামনে। মিছিলকারীরা তখন ফ্রান্স নিপাত যাক, ফ্রান্স নিপাত যাক স্লোগান দেন৷ এ সময় ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবির জন্যও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা। তবে ফরাসি মুসলমানদের একটি সংগঠন কার্টুন প্রকাশ করায় চার্লি হেব্দো পত্রিকার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, শুক্রবার মসজিদে সবাইকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানানো হবে।

এদিকে কারো ধর্মকেই কেউ যেন খাটো করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে আইন প্রনয়ণ করার ভাবনা গুরুত্ব পাচ্ছে জার্মানিতে। জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স পেটার ফ্রিডরিশ বলেছেন, তিনিও চান প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্মানুভূতির প্রতি আরো বেশি সম্মান দেখাক। ইনোসেন্স অফ মুসলিমস ছবির কারণে সিন্ডি লি গার্সিয়া নামের এক অভিনেত্রীর নামও উঠে এসেছে বিশ্বের প্রায় সব মাধ্যমের খবরে। যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিনেত্রী ছবির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভুল ধারণা দিয়ে অভিনয় করানোর কারণে মামলা ঠুকে দিয়েছেন বিতর্কিত ছবিটির প্রযোজকের বিরুদ্ধে।

অনলাইন ডেস্ক