পাকিস্তানের বন্দরনগরী করাচির একটি তৈরি পোশাক কারখানায় সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ৩১৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

মঙ্গলবার দিবাগত মধ্যরাতে করাচির বলদিয়া টাউনে অবস্থিত কারখানাটিতে আগুন লাগে বলে জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। আগুন লাগার পরপরই করাচি নগরীর ফায়ার সার্ভিসের সবগুলো ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য সারারাত ধরে চেষ্টা করে। এ সময় অনেক শ্রমিক কারখানার ভেতর আটকে পড়ে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা আবদ্ধ কারখানাটির ছাদ ও দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। তবে বিষাক্ত ধোঁয়া এবং আগুনের লেলিহান শিখার কারণে তাদের সে প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারখানাটির আটকে পড়া শ্রমিকদের মধ্যে প্রায় সবাই আগুনের পুড়ে অথবা ধোঁয়ায় নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন। বালদিয়া টাউনের হাব রিভার রোডে অবস্থিত কারখানাটিতে মৃতদের মধ্যে অনেক নারী ও শিশু আছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, আগুনের ভয়াবহ উত্তাপ থেকে নিজেদের বাঁচাতে অনেক শ্রমিক এ সময় কারখানার জানালা দিয়ে নিচে লাফিয়ে পড়েন। এভাবে নামতে গিয়ে কমপক্ষে ৬৫ জন শ্রমিক আহত হয় বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ২ হাজার বর্গগজের কারখানাটিতে আগুনের উৎপত্তির সময় কয়েকশ’ শ্রমিক কর্মরত ছিলো বলে জানা গেছে। কারখানার ভেতর তল্লাশি ও অনুসন্ধান এখনও শেষ না হওয়ায় পরবর্তীতে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের উৎপত্তির কারণ এখনও জানা সম্ভব হয়নি। সিন্ধু প্রদেশের শিল্পমন্ত্রী রউফ সিদ্দিকি জানান, কারখানার মালিককে বর্তমানে এ ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ব্যাপারে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রেহমান মালিকও এ ব্যাপারে একটি তদন্ত অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। উদ্ধারকর্মীরা জানায়, কারখানাটিতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিলো না। এছাড়া জরুরি পরিস্থিতিতে সেখান থেকে শ্রমিকদের বের হওয়ার জন্য কোনো পথও নেই। জানা গেছে, কারখানাটিতে রাখা রাসায়নিক পদার্থের কারণে সেখানে আগুন আরও তীব্রভাবে ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ শ্রমিক বিষাক্ত ধোঁয়ায় শ্বাস বন্ধ হয়ে মারা গেছেন।

সরকারের দুর্বল নজরদারি ও সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার দুর্নীতি কারণে পাকিস্তানের শিল্পখাতে শ্রমিক নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে লঙ্ঘিত হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আবাসিক বা বাণিজ্যিক এলাকায় অপ্রশস্ত পরিসরে স্থাপিত এ সব কারখানায় গাদাগাদি করে কাজ করতে হয় শ্রমিকদের। সেখানে তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ন্যূনতম ব্যবস্থাও থাকে না। গত মঙ্গলবার রাতেও লাহোরের একটি জুতার কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারায় ২২ শ্রমিক।

সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডের এ ঘটনায় পাকিস্তানের শিল্প কারখানাগুলোতে নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও কাজের পরিবেশের উদ্বেগজনক চিত্র আবারও প্রকাশিত হলো বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এর আগেও  ২০০৯ সালে করাচিতে সংঘটিত অপর এক অগ্নিকাণ্ডে ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এর অর্ধেকই ছিলো নারী ও শিশু। তবে বুধবারের এ অগ্নিকাণ্ডকে সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। পাকিস্তানের বিভিন্ন পক্ষ এ ঘটনায় সরকারের অদক্ষতা ও অযোগ্যতার সমালোচনা করে এর জন্য সরকারকেই দায়ী করছে।

এ, কে, আজাদ -  বার্তা সম্পাদক