জীবনে আমাদের পার হতে হয় নানা চড়াই উৎরাই -এর  মাধ্যমে। মাঝে মাঝে মনে হয় এই বুঝি জীবন সংগ্রামের শেষ প্রান্তে পৌঁছে গেলাম, মুক্তির আর কোন পথ নেই। কিন্তু রাখে আল্লাহ্‌ মারে কে! আসলেই আল্লাহ্‌ যদি চাহেন বাঁচাতে, দুনিয়ার কোন শক্তিই আপনার সামনে বাঁধা হতে পারে না।

তাই হল দুবাইয়ে মুরুর বুকে একেবারে অসহায় অবস্থায় পড়া ১০ বাংলাদেশীর। আল্লাহ্‌ এবং একমাত্র নতুন করে বাঁচার স্বপ্নই শেষ পর্যন্ত তাদের অসহায় অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হল।


খালেজ টাইমসের বরাত দিয়ে জানা যায়, দুবাইয়ে ১০ বাংলাদেশী নির্মাণ শ্রমিককে তাদের নিয়োগকারী কোম্পানি ফেলে যায়। ফলে তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। তারা একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের বাইরে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে!

অবশেষে তাদের জন্য সহায় জুটে গেল। তারা নতুন কাজ পেলেন। ভিসা পেলেন। আর তাই আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন ওই ১০ বাংলাদেশী। খালেজ টাইমসের প্রতিবেদনে ওই ১০ বাংলাদেশীর নাম, ঠিকানা প্রকাশ করা হয়নি।

রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের শোচনীয় অবস্থা দেখে কাজে নিয়োগ করেছে কেলে কনট্রাক্টিং নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই ১০ জনের মধ্যে ৩ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে হেলপার বা সহায়তাকারী, একজনকে ওয়েল্ডার, দু’জনকে স্টিলের কাজে, দু’জনকে কাঠমিস্ত্রি, একজনকে রাজমিস্ত্রি এবং একজনকে সহকারী স্টোর কিপার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, এর আগে তাদেরকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অনেক মাস ধরে বেতন দেয়নি। তাদেরকে সে অবস্থায় তারা পরিত্যক্ত করেছে। কারণ, ওই কোম্পানিকে ঋণ শোধ না করার কারণে আদালত দেউলিয়া ঘোষণা করেছে।

১০ বাংলাদেশীর একজন বলেন, আমরা শুরুতে দলে ৩০ জন ছিলাম। কিন্তু আমাদের অনেক বন্ধুকে তাদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব তাদের আশ্রয়স্থলে ঠাঁই দিয়েছে। তারা চলে যাওয়ার পর আমরা ১০ জন মিলে দুবাই ইনভেস্টমেন্ট পার্কের কাছে প্রচণ্ড গরমে, বিদ্যুত ও পানিবিহীন দিনরাত কাটাচ্ছিলাম। এভাবে কাটছিল আমাদের মাসের পর মাস। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে কোন পরিবর্তন হচ্ছিল না। অবশেষে আল্লাহ আমাদের দিকে মুখ তুলে তাকিয়েছেন।

কেলে কনট্রাক্টিং-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অ্যানড্রু ইলিয়াস বলেন, এ সব অসহায় বাংলাদেশীদের  সহায়তা করতে পেরে    আমরা আনন্দিত বোধ করছি। তাদেরকে আমরা নিয়োগ করায় তারা ফের নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবে। পায়ের নিচে মাটি খুঁজে পাবে। এতে তারা নিজেদের ও দেশে রেখে আসা পরিবারকে সহায়তা করতে পারবে। তারা তাদের এই পরিণতির জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তাদেরকে যে প্রতিষ্ঠান চাকরিতে নিয়োজিত করেছিল তাদেরকে বলা হয়েছিল প্রতিজন শ্রমিককে ২ হাজার দিরহাম ও একটি করে বিমান টিকেট দিতে, যাতে তারা দেশে ফিরতে পারে। কিন্তু তাদের সামান্য দু’একজন তা হাতে পেয়েছেন। এসব মানুষের অনেকেরই পরিবার আছে দেশে। তারা এদের ওপর নির্ভরশীল। ওই সামান্য ক্ষতিপূরণ দিয়ে তাদের কি হয়! তাই আমরা এগিয়ে গিয়েছি তাদের সহায়তা করতে।

অনলাইন ডেস্ক