মিশরে সেনাপ্রধানকে সরিয়ে দেবার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট মুরসিকে চ্যালেঞ্জ করার কোন ইঙ্গিত বা লক্ষণ এখনো দেখা যাচ্ছেনা। সরকার নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়িকে সরিয়ে দেয়ায় সেনাবাহিনীতে কোন বিরূপ প্রতিক্রিয়া নেই।
অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট মুরসি বলেছেন, মিশরের জাতীয় স্বার্থে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর জন্য তিনি জনগণের সমর্থন কামনা করেছেন। ফিল্ড মার্শাল তানতাওয়ি বরখাস্ত হওয়ার পর কায়রোর ঐতিহাসিক তাহরির স্কয়ারে হাজার হাজার সমর্থক জড়ো হয়ে প্রেসিডেন্ট মুরসির এই সিদ্ধান্তের প্রতি তাদের শতভাগ সমর্থন জানান।
সমর্থকরা বলছেন, এই পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে মি. মুরসির কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো।
সরকারি নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা ছাড়াও আইন পরিষদ এবং দেশের জন্য নতুন একটি সংবিধান রচনার প্রক্রিয়ার তাঁর ভূমিকা এখন প্রশ্নাতীত। মিশরের ক্ষমতাধর সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন তাঁর একজন সমর্থক রাফা'য়াত আবুল শেনউ। তিনি বলছেন, সত্যি কথা বলতে কি এটি একটি দূরদর্শী পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের হাতেই ফিরে এল। কারণ, মিশরের প্রেসিডেন্ট তার কোন অধস্তন কর্মকর্তার কাছে থেকে আদেশ গ্রহণ করবেন এটা ঠিক নয়।
সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মুবারক মিশরে গণঅভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত হন। তাঁর অবর্তমানে মিশরের সশস্ত্র বাহিনী সুপ্রিম কাউন্সিল দেশ পরিচালনা করছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে থেকেই মি. মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুড এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল। এমনকি নির্বাচনের ঠিক আগে সামরিক পরিষদ এমন কিছু আইন তৈরি করে যার মধ্য দিয়ে প্রকৃত ক্ষমতা তাদের হাতে চলে আসে। সেই ক্ষমতাকে নিজের হাতে ফেরত আনতেই মি. মুরসি মার্শাল তানতাওয়িকে বরখাস্ত করলেন। অবশ্য এর আগে তিনি তাকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদান করেন।
কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে মি. মুরসি বিজয়ী হয়েছেন বলে মনে হলেও মার্শাল তানতাওয়ি কিংবা তার সামরিক সহযোগীরা সরকারের এই পদক্ষেপকে কীভাবে দেখবেন, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন রয়ে গেছে বলে বলছেন বিবিসির আরব বিষয়ক সম্পাদক সেবাস্টিয়ান আশার। তিনি বলছেন, এত বড় একটা সিদ্ধান্ত সামরিক বাহিনীর সাথে কোন কথা না বলেই নেয়া হয়েছে, মিশরের ভেতরে খুব অল্প লোকেই এটা মনে করেন। অনেকেই বিশ্বাস করেন সামরিক বাহিনীর ভেতর যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সহানুভূতিশীল সেই সব উদীয়মান সামরিক অধিনায়কদের সমর্থন নিয়েই এটা করা হয়েছে।
কায়রো থেকে বিবিসির সংবাদদাতা ইয়োল্যান্ডে নেল খবর দিচ্ছেন, মি. মুরসির নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল আব্দুল ফাতাহ আল-সিস্সি এই সুচিন্তিত পদক্ষেপের পেছনে রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। "অনেকেই বিশ্বাস করেন সামরিক বাহিনীর ভেতর যারা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতি সহানুভূতিশীল সেই সব উদীয়মান সামরিক অধিনায়কদের সমর্থন নিয়েই এটা করা হয়েছে"
তাই সেটা আবার উজ্জ্বল করার স্বার্থে কিছু একটা করার প্রয়োজন ছিল। আর এর সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে সামরিক বাহিনীর সাথে ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের নতুন আঁতাত গড়ে তোলা, বলছেন বিবিসির সেবাস্টিয়ান আশার। তবে তিনি বলছেন সংশয় এখনও পুরোটা কাটেনি।
‘সুনাম ক্ষুণ্ণ হওয়া সামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপকে মিশরের গণজাগরণের একটা ধারাবাহিকতা বলে অনেক মিশরীয় মনে করলেও, অনেকেই - বিশেষভাবে উদারপন্থী এবং খ্রিস্টানরা মুসলিম ব্রাদারহুডের এই ক্ষমতা বৃদ্ধিকে শঙ্কার চোখে দেখছেন।‘ মিশরের সামরিক বাহিনী এখন সাইনাই অঞ্চলের ইসলামি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় এক সামরিক অভিযানে ব্যস্ত।
তারই মাঝে নতুন প্রেসিডেন্টকে এই পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সাথে সামাল দিতে হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তথ্য সুত্র: বিবিসি