কেউ বা নিজেকে নিয়ে গেছেন আরও উচ্চতায়, কেউ বা মিলিয়ে গেলেন ইতিহাসের অন্ধকারে। কারও স্বপ্নপূরণের আনন্দ আর কারও স্বপ্নভঙ্গের বেদনা— এমন হাজারো অনুভূতি নিয়ে শেষ হয়ে গেল আরেকটি অলিম্পিক। বিদায় লন্ডন অলিম্পিক, দেখা হবে রিওতে।বিদায় বেলায় চোখের পাতায় ভেসে উঠছে লন্ডনের সদ্য অতীত হওয়া স্মৃতিগুলো। ৩০তম অলিম্পিকের আনন্দ-বেদনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
কিংবদন্তি উসাইন বোল্ট
বেইজিং অলিম্পিকে নক্ষত্রের মতোই আবির্ভাব উসাইন বোল্টের। মাত্র তিনটি দৌড়ে হয়ে গেলেন মহাতারকা। একটা সময় যা ছিল অকল্পনীয়, অসম্ভব সেটাই সম্ভব করে দেখালেন তিনি। ৯.৬৯ সেকেন্ড টাইমিং করে জিতলেন ১০০ মিটার। এরপর ২০০ মিটার ও ৪*১০০ মিটারও জিতলেন নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে। ট্রিপল জিতলেন লন্ডনেও, যে রেকর্ড নেই আর কোনো স্প্রিন্টারের। তবে বেইজিংয়ের মতো তিনটিতেই বিশ্বরেকর্ড গড়া হয়নি, কেবল রিলেতে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। মাঝের সময়টায় তাকে নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, তা এক হলকায় উড়িয়ে দিয়ে ‘লাইটনিং বোল্ট’ এখন অ্যাথলেটিকসেরই জীবন্ত কিংবদন্তি।
মাইকেল ফেলপসের ইতিহাস
নামের পাশে ১৪টি স্বর্ণ, সব মিলিয়ে পদকের সংখ্যা ১৬টি। আগেই কিংবদন্তির পর্যায়ে নিয়ে যান নিজেকে। তবু অমরত্বের পথে একটুখানি অর্জনের বাকি ছিল মাইকেল ফেলপসের। লন্ডনে সেটাও করলে সগর্বে। আমেরিকান সাঁতার অ্যাকুয়াটিক সেন্টারে চারটি স্বর্ণ ও দুটি রৌপ্য জিতে অলিম্পিক পদকের সংখ্যাকে নিয়ে যান ২২-এ। রুশ কিংবদন্তি লরিসা লাতিনিনার ১৮ পদকের ৪৮ বছরের রেকর্ড ভেঙে ফেলপস পৌঁছে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে। ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিকটাও চিরস্মরণীয় করে রাখলেন তিনি।
নতুন নক্ষত্র ইয়ে শিওয়েন
ইনডোর গেমসে চীনাদের আধিপত্য থাকলেও সাঁতারে তারা কখনই দাপট দেখাতে পারেনি। এবার সাঁতারের পুলও কাঁপাল চীন। ১৬ বছর বয়সী তরুণী ইয়ে শিওয়েন নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে ৪০০ মিটার ব্যক্তিগত মিডলে জয় করে সাড়া ফেলে দেন। তিন দিন পর ২০০ মিটার জিতে তাকে নিয়ে তৈরি সব সংশয়ে পানি ঢেলে দেন সাঁতারের নতুন এ নক্ষত্র।
‘অলিম্পিয়ান’ অস্কার পিস্টোরিয়াস
দক্ষিণ আফ্রিকান স্প্রিন্টার অস্কার পিস্টোরিয়াসের দুটি পা-ই যান্ত্রিক। তবু স্বপ্ন দেখেন অন্য সব মানুষের মতোই। নকল পা নিয়েও তিনি লন্ডনের ট্র্যাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে গড়লেন ইতিহাস। এর আগে দুই পা হারানো কেউই অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। ৪০০ মিটারে হিটেই বাদ, তবু ইতিহাস মনে রাখবে এ দক্ষিণ আফ্রিকানকে। এরপর ৪*৪০০ মিটার রিলেতেও দৌড়েছেন।
ব্রাজিলের আরেকটি অলিম্পিক ট্র্যাজেডি
পাঁচ পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতলেও ব্রাজিল কখনই পায়নি অলিম্পিক স্বর্ণের স্বাদ। নতুন মহাতারকা নেইমারের হাত ধরে এবার সে ব্যর্থতা ঘুচানোর স্বপ্ন দেখেছিল ব্রাজিল। কিন্তু লন্ডনও ব্রাজিলের আরেকটি অলিম্পিক ট্র্যাজেডি লিখল। শনিবার রাতে ওয়েম্বলি ফাইনালে মেক্সিকোর কাছে ১-২ গোলে হেরে চোখের জলে শেষ হয় ব্রাজিলের স্বর্ণের মিশন।
স্বর্ণবিহীন উপমহাদেশ
লন্ডন অলিম্পিকে স্বর্ণহীন উপমহাদেশ। বাংলাদেশ আগের মতোই পদকহীন। ভারত ও পাকিস্তানও পায়নি কোনো স্বর্ণের স্বাদ। লন্ডন অলিম্পিক লজ্জা দিল এশিয়ার গর্বের হকিকেও। দুই এশিয়ান জায়ান্ট ভারত ও পাকিস্তানের অলিম্পিক মিশন শেষ হয়ে চরম হতাশায়। ভারত আটবারের ও পাকিস্তান তিনবারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন। অথচ এবার ভারতের নাম ১২ দলের মধ্যে সবার শেষে! আর পাকিস্তান ছিল সপ্তম স্থানে।
সাম্রাজ্য ফিরে পেল যুক্তরাষ্ট্র
বেইজিংয়ে ৫১টি স্বর্ণ জিতে যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক পেছনে ফেলে শ্রেষ্ঠত্ব দেখায় স্বাগতিক চীন। যুক্তরাষ্ট্র জিতেছিল ৩৬টি স্বর্ণ। চার বছর পর হারানো সাম্রাজ্য ফিরে পেল মার্কিনরা। লন্ডন অলিম্পিকে আবারও তারা সেরার আসনে। ৪৬টি স্বর্ণসহ মোট ১০৪টি পদক অলিম্পিক জায়ান্ট দেশটির নামের পাশে। অন্যদিকে লন্ডন হতাশই করল চীনকে। ৩৮টি স্বর্ণসহ ৮৭টি পদক নিয়ে চীন দ্বিতীয় স্থানে। এএফপি
অনলাইন ডেস্ক