মেলবোর্ন শহরের বিভিন্ন ইসলামিক সেন্টার এবং সংখ্যালঘু মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালানোর প্রতিক্রিয়ায় ভীত অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়। গত বৃহস্পতিবার দি অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকা এ তথ্য জানায়। নোবেলপার্ক মসজিদের বাইরে ইমাম ইব্রাহিম ওমেরডিক সাংবাদিকদের বলেন, মুসলিম সম্প্রদায় এ জন্য ফেডারেল পুলিশকে দায়ী করবে কারণ তারা এটা প্রচার করেছে।

সম্ভবত তারা কিছুই পায়নি এবং একজন নির্বোধ লোকের কাছ থেকে সবাই আক্রান্ত হবে। তিনি আরো বলেন, বিশেষ করে এখন ভদ্র মহিলা ও স্কুলের শিশুরা প্রশ্নের মুখে পড়বে। অস্ট্রেলিয়া পুলিশ ভিক্টোরিয়া স্টেটের রাজধানী ও মেলবোন উপশহরে অবস্থিত মুসলমানদের বাড়িঘর এবং একটি ইসলামিক সেন্টারে অভিযান চালায়। পুলিশ জানায়, সেখান থেকে তারা একটি মেমরী স্টীকসহ কম্পিউটারের কিছু যন্ত্রপাতি লাইসেন্স করা কয়েকটি আগ্নেয়াস্ত্র এবং কিছু নকল অস্ত্র আটক করেছে। ইসলামিক কাউন্সিল অব ভিক্টোরিয়া জানায়, ঐ অভিযান সম্পর্কে পুলিশ মুসলিম সমস্প্রদায়ের সদস্যদের অবহিত করেছিল। ইসলামিক কাউন্সিল অব ভিক্টোরিয়ার সদস্য শেরেন হাসান অস্ট্রেলিয়া ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন রেডিওকে বলেন, শেষ কথা হচ্ছে আমরা চাই বিশ্বের যে কোন জায়গায়ই সন্ত্রাসী হামলা হোক না কেন অস্ট্রেলিয়া তার বাইরে থাকুক। তিনি বলেন, এটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, আমাদের সম্প্রদায়কে নিরাপদ রাখতে কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ২৩ বছর বয়স্ক এক ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করা হয় যার কাছে ৪টি ডকুমেন্ট ছিল। ধারণা করা হয় এগুলো সন্ত্রাসী হামলার জন্য ব্যবহার করতে তৈরি অথবা সংগ্রহ করা হয়েছিল। আগামী ডিসেম্বর মাসে পুনরায় আদালতে হাজির করার আগ পর্যন্ত তিনি জেলে থাকবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার ১৫ বছরের জেলা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একনিস্ট মিত্র অস্ট্রেলিয়া ৯/১১ হামলার পর ধীরে ধীরে তাদের জাতীয় নিরাপত্তা আইন কঠোর করেছে। এ আইনের অধীনে পুলিশ কোন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিন পর্যন্ত আটক রাখতে পারবেন। অস্ট্রেলিয়ার নিজের মাটিতে কখনই বড় ধরনের কোন সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেনি। যদিও ২০০২ সালে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটক দ্বীপ বালীর একটি নাইট ক্লাবে এক বোমা বিস্ফোরণে ৮৮ জন অস্ট্রেলীয় নাগরিক নিহত হয়েছিল এবং ২০০৪ সালে জাকার্তায় অস্ট্রেলীয় দূতাবাসে এক বোমা হামলা হয়েছিল।

অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ ২০০০ সাল থেকে ১ পর্যন্ত ৪টি বড় ধরনের সন্ত্রাসী পরিকল্পনা বানচাল করে দিয়েছে এবং এর সাথে জড়িত ২৩ জনকে সাজা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মুসলিম নেতৃবৃন্দ অভিযানের বিষয়টি প্রচার করার জন্য পুলিশের সমালোচনা করে দুঃখ প্রকাশের আহবান জানিয়েছেন।

ওমেরদিক বলেন, ফেডারেল পুলিশের উচিৎ ক্যামেরার সামনে হাজির হওয়া এবং তারা যা করেছে তার জন্য দুঃখ প্রকাশ করা এবং পরবর্তীতে যদি এ ধরনের কোন অভিযান চালাতে হয় তাহলে সেখানে কোন সাংবাদিক ও ক্যামেরা থাকতে পারবে না। তারা সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদারে ক্ষতিসাধন করে চলছে। ২শ' বছরেরও বেশি সময় ধরে মুসলমানরা অস্ট্রেলিয়া বসবাস করছে। যেখানে এখন মোট জনসংখ্যা ২ কোটি। এর মধ্যে ১ দশমিক ৭ শতাংশ হচ্ছে মুসলমান। ৯/১১ পরবর্তী সময় থেকে অস্ট্রেলিয়ার মুসলমানদেরকে সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে এবং তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা এখন প্রশ্নের মুখে। অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্কট্যাংক হিসেবে পরিচিত ‘ইস্যুস ডেলিবারেশন অস্ট্রেলিয়া (আইডিএ) ২০০৭ সালে একটি জরিপ চালিয়েছিল, যাতে বলা হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া জনগণ সাধারণভাবে ইসলামকে হুমকি হিসেবে মনে করে। সাম্প্রতিক সরকারি এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মুসলমানরা ব্যাপকভাবে ইসলামভীতির মুখোমুখি যা আগে কখনই এত প্রকটভাবে ছিল না।

অনলাইন ডেস্ক