আগামী ২২ আগস্ট নর্থ রাইন ওয়েস্টফালিয়ার স্কুলগুলোর নতুন ‘সেশন’ শুরু হচ্ছে। সেখানে নতুন ইসলাম শিক্ষার বই তুলে দেওয়া হবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের হাতে। এই নিয়ে আগ্রহ যেমন রয়েছে, তেমনির রয়েছে সমালোচনাও। 

জার্মানির শিক্ষা ব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষার তেমন কোনো জায়গা নেই। কেউ চাইলে তা নিজের উদ্যোগেই শিখতে হবে। কিন্তু এবার জার্মানির সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নর্থ রাইন ওয়েস্টাফালিয়া এই ক্ষেত্রে উদাহরণ তৈরি করল বলা যায়। স্কুলগুলোতে দিন দিন মুসলমান ছাত্রছাত্রীদের সংখ্যা বাড়ছে। তাই প্রাথমিক স্কুলগুলোতে মুসলমান বাচ্চাদের জন্য নতুন ইসলাম শিক্ষার একটি বই ছাপানো হয়েছে। ইসলামের নানা শিক্ষা ও নিয়মাবলী শেখানো হবে এই বইয়ের মাধ্যমে।

এই ব্যাপারে বইটির প্রকাশক মুহানাদ খোরখিদে বললেন, ‘আমাদের উদ্দেশ হলো এমন একটি বই প্রকাশ করা, যা সকলের জন্য হবে। আমরা চেষ্টা করেছি আধুনিক বিশ্বে ইসলামি মূল্যবোধগুলি কিভাবে ব্যবহার করা যায়, তা এখানকার মুসলমান সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে। এটা আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা আধুনিক এবং প্রথাগত এই দুইয়ের মাঝে থাকার চেষ্টা করেছি।’ প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য এই বইটিতে কঠিন কোনো বিষয় নিয়ে আসা হয়নি। দৈনন্দিন জীবনের নানা ঘটনার মাধ্যমে সহজ বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে।

এই বয়সের বাচ্চারা দ্রুত পড়তেও শেখে না, তাই তাদের কথা মনে রেখে অনেক ছবি রয়েছে বইটিতে। তবে এই ছবি নির্ধারণের বেলাতেও কৌশল নিতে হয়েছে প্রকাশকদের। কারণ বইটি জার্মানির ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে সঙ্গতি রেখেই রচনা করতে হয়েছে।

এই বিষয়ে মুহানাদ খোরদিদে জানান, ‘ধরা যাক মাথার হিজাব পরার ব্যাপারটা। শ্রেণীকক্ষের ছবির ক্ষেত্রে মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবেই মনে করবে যে, ছবিটিতে যেই শিক্ষিকাকে দেখানো হবে তাঁর মাথা ঢাকা থাকবে। অথচ জার্মানির নিয়মে কোনো শিক্ষিকা মাথায় হিজাব পরতে পারবেন না। তাহলে এই ক্ষেত্রে কী করা যায়? আমরা একটু ভিন্নভাবে এর সমাধান করেছি, এমনভাবে ছবিটা আঁকা হয়েছে যাতে মনে হয় শ্রেণীকক্ষে কোনো শিক্ষক ক্লাস নিচ্ছেন।’

শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য এই বইটির মূল চরিত্র সারাহ এবং বিলাল। সারাহর বাবা-মা সৌদি আরবের আর বিলালের বাবা মা তুরস্ক থেকে এসেছে। বইটির পাতায় পাতায় দেখানো হয়, তারা জার্মান শিশুদের সাথে মিশছে, খেলছে আর তাদের সাথে স্কুলে যাচ্ছে। একদিকে এটি যেমন ইতিবাচক, অন্যদিকে এটি নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে।

এই যেমন ইসলাম গবেষক মিশায়েল কিফার বললেন, ‘আন্তঃধর্মীয় বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে। এটা চমৎকারভাবে করা হয়েছে, কারণ এতে শিশুরা ইহুদি এবং খ্রিষ্টান ধর্ম সম্পর্কেও ধারণা পাবে। তবে যেটা আমার ভালো লাগেনি, তা হলো বইয়ের চরিত্র সারাহ আর বিলালকে অভিবাসী পরিবারের দেখানো হয়েছে। ভালো হতো যদি ইসলামকে বিদেশ থেকে আসা কোনো বিষয় হিসেবে দেখানো না হতো।’তিনি বলেন, আমাদের ভুললে চলবে না যে এখানে তুর্কিরা বাস করছে গত প্রায় ৫০ বছর ধরে। অর্থাৎ এখানে মুসলমানদের চতুর্থ প্রজন্মও বাস করছে।প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর এই ইসলাম শিক্ষার বই পরের ক্লাসগুলোতেও চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে এই জন্য জার্মানির কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এখনও বাকি। 

সূত্র: ডয়েচে ভেলে