বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামের নামে যে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। আজ (শনিবার) রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে আয়োজিত ইসলামিক কালচার ফর এশিয়া রিজিয়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
ইসলামের নামে বোমাবাজি ও সন্ত্রাসী তৎপরতা দমনে বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরে তিনি বলেন, "আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কোনো স্থান নেই" তিনি আরো বলেন, "আন্তর্জাতিকভাবে এসব তৎপরতা প্রতিরোধে মুসলিম বিশ্বের মধ্যে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করতে হবে। "ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) অঙ্গ সংগঠন ইসলামী শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (আইএসইএসসিও) ২০১২ সালের জন্য এশিয়া থেকে ঢাকাকে ‘ক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার’ ঘোষণা করে। ওআইসিভুক্ত ৫৭টি দেশগুলোকে আরব, এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি দেশের রাজধানীকে ‘ক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার’ নির্বাচিত করা হয়েছে। আরব অঞ্চল থেকে ইরাকের নাজাফ শহর এবং আফ্রিকা অঞ্চল থেকে নাইজারের নিয়ামে নগরী ইসলামী সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচিত করা হয়েছে। এ উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে আইসেসকোর মহাপরিচালক ড. আব্দুল আজিজ আলত্ ওয়াইজরির যোগ দিয়েছেন।
ঢাকাকে ‘ক্যাপিটাল অব ইসলামিক কালচার’ ঘোষণা করায় ইসলামী সংওআইসিভুক্ত সব রাষ্ট্রের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ইসলামী সংস্কৃতির এশীয় অঞ্চলের রাজধানী ঢাকা থেকে আমরা ঐক্য, শান্তি ও ন্যায়ানুগ সমাজ এবং বিশ্ব প্রতিষ্ঠার ডাক দিচ্ছি। এমন একটি মুসলিম উম্মাহ প্রতিষ্ঠাই হবে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলামের সংস্কৃতির প্রকৃত নিদর্শন।” ঢাকাকে ইসলামিক সাংস্কৃতিক রাজধানী নির্বাচন করা যথার্থতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রায় অর্ধ-সহস্রাব্দের ঐতিহ্যবাহী এ শহর ইসলামী সংস্কৃতির এক অনন্য পীঠস্থান। মসজিদের শহর হিসেবে এই প্রাচীন নগরীর যে খ্যাতি, তা মোটেও অমূলক নয়।” পাড়া-মহল্লার সুদৃশ্য মসজিদের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এ সব মসজিদ শুধু আরাধনার স্থান হিসেবে নয়, সাংস্কৃতিক প্রতীক হিসেবেও বিশেষ তাৎপর্য বহন করে।”
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অসংখ্য কবিতা ও রচনায় হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে মুসলমানদের এক হয়ে চলার কথা বলেছেন। আমাদের উচিত সেই পথ অনুসরণ করা। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে যখন যুদ্ধ-বিদ্রোহ চলছে বাংলাদেশের মানুষ তখন শান্তিতে বসবাস করছে।"
পারস্যের কবি ফেরদৌসী রচিত মহাকাব্য ‘শাহনামা’র বাংলা অনুবাদ বেশ কয়েকটি খণ্ডে বাংলা একাডেমীর প্রকাশ করেছে-এ কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “প্রাচীন এই মহাকাব্যের পূর্ণাঙ্গ অনুবাদ যখন গোটা বিশ্বেই বিরল, তখন বাংলায় এর পুনঃপ্রকাশ প্রমাণ করে এ অঞ্চলের মানুষের জ্ঞানান্বেষী মন কোনো ভৌগলিক সঙ্কীর্ণতায় সীমাবব্ধ নয়। শেখ সাদী, রুমি, হাফিজ ও লালন ফকিরকে আমরা গ্রহণ করি অভিন্ন উত্তরাধিকার হিসেবে।”
ইসলামিক ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্থাপনা ও প্রাচীন শিল্প সমৃদ্ধ ইতিহাসকে তুলে ধরার পাশাপাশি শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিতে মুসলিম দেশগুলোর নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করতে পাঁচ মাসব্যাপী কর্মসূচি ঢাকায় উদযাপিত হবে।
মনিরুজ্জামান মানিক – বার্তা সম্পাদক