ইসলামী লেবাসধারী ছাত্র শিবিরের জঙ্গিপনা: পাঠক, আসুন আমরা জেনে নিই আজকের ছাত্র শিবির কীভাবে গঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাসনকালে প্রণীত ‘১৯৭২ সালের দালাল আইন’ ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসে বাতিল করে দেন প্রয়াত প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান।

দালাল আইন বাতিলের ফলে জেলে আটক প্রায় সাড়ে ১০ হাজার রাজাকার সে সময় মুক্তি পেয়ে যায়। তথাকথিত বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে স্বাধীনতা বিরোধীদের মুক্ত করে দেয় সাবেক এ সামরিক সরকার। এছাড়া যেসব রাজাকার পাঁচ বছর ধরে পালিয়ে ছিল তারাও তখন বুক ফুলিয়ে বেরিয়ে আসে। এ সুযোগে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সক্রিয় হয় জামায়াত। তাদের পুরনো ‘ছাত্রসংঘ’কে নতুন করে ঢেলে সাজাতে ১৯৭৭ সালের ফেব্রুয়ারির ৬ তারিখে রাজধানীর সিদ্দিকবাজারে জামায়াতের শীর্ষস্থানীয়রা মিলিত হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই সংগঠনটির কার্যক্রম প্রায় নিষ্ক্রিয় ছিল। রাজনীতির মাঠে প্রকাশ্যে নামার প্রস্তুতি নেয় ‘ইসলামী ছাত্র সংঘ’ নামের দেশবিরোধী সংগঠনটি। ১৯৭৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ছাত্র সংঘের নতুন নাম হয় ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবির’। শুধু ‘সংঘ’ বাদ দিয়ে ‘শিবির’ যুক্ত করা হয়, আর সবকিছুই একই থাকে। পতাকা, মনোগ্রাম সবই এক। প্রশিক্ষণব্যবস্থা, এমনকি জেলা থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত বিস্তৃত নেতৃত্ব-কাঠামো সবই এক থাকে। দিগন্ত টিভি ও দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার মালিক মীর কাশেম আলীকে সভাপতি ও মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক করে জামায়াতের এই ছাত্র সংগঠন নতুন কার্যক্রম শুরু করে।

নাম পরিবর্তনের নেপথ্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের মূলশক্তি ছিল ইসলামী ছাত্র সংঘের হাতে। কারণ ছাত্র সংঘ মানেই তরুণ রাজাকারদের শক্তি। ১৯৭৬ সালে যখন জামায়াত রাজনীতিতে পুরোদমে প্রবেশ করে তখন জামায়াতের নীতি নির্ধারকদের মনে এই ভয় ছিল যে, ছাত্র সংঘ নামটাকে হয়তো এ দেশের মানুষ একাত্তরে তাদের জঘন্য কর্মকাণ্ডের জন্য ভুলে যাবে না। এই চিন্তা থেকেই তারা ছাত্র সংঘের ‘সংঘ’ কেটে সেখানে ‘শিবির’ যোগ করে দেয়। দ্বিতীয়ত, জামায়াত ও ইসলামী ছাত্র সংঘের হিংস্র এবং পৈশাচিক কার্যকলাপ বাংলাদেশের মানুষের মনে একটা স্থায়ী ঘৃণার ভাব সৃষ্টি করেছে। জামায়াত তখন ভালো করেই জানতো এই ঘৃণাটা কখনো দূর হবে না। ইসলামী ছাত্র সংঘের কথা উঠলেই অবধারিতভাবে আলবাদর বাহিনীর কথা চলে আসবে। ফলে সংগঠনের প্রচার-প্রচারণা বাধাগ্রস্ত হবে। তৃতীয়ত, যদি কখনো স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটে তখন আইনগতভাবে ফেঁসে যেতে পারে ইসলামী ছাত্র সংঘ। সেক্ষেত্রে যাতে সংগঠনের কাজ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য জামায়াতের নেতৃবৃন্দ সংঘ নামটি কেটে ফেলে।