বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল সম্পর্কিত সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে।

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি অভিযোগ তুলেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রশ্নে ১৬ মাস আগে দেওয়া সংক্ষিত রায় এবং রোববার রাতে প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অমিল রয়েছে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বলেছে, সংক্ষিপ্ত রায়েও আদালত বলেছিল অনির্বাচিত কোন সরকার আইনসম্মত নয়। তবে বিএনপি নেতারা মনে করেন, আদালত যাই বলুক নির্দলীয় সরকার গঠনে তাদের দাবি রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ সংক্ষিপ্ত রায় দিয়েছিল গত বছরের মে মাসে।তারপর এই রায়ের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হয় সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে। এখন প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি।দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়া অভিযোগ করেছেন, সংক্ষিপ্ত রায়ে অন্তত দু’মেয়াদের জন্যে নির্বাচন করা যেতে পারে বলে যে অভিমত দেওয়া হয়েছিল তাতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। দুই রায়ের মধ্যে এই পার্থক্য নিয়ে বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে।

‘দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে পারে। তবে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ও আপীল বিভাগের বিচারকদেরকে এই ব্যবস্থা থেকে বাদ রাখতে হবে। কিন্তু পূর্নাঙ্গ রায়ে এ বিষয়ে কোন শব্দ নাই।‘ বলেন বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সংসদ সদস্যদের দিয়ে যে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন পূর্নাঙ্গ রায়ে সেই একই কথা বলা হয়েছে। ‘এখানে আমরা মারাত্মক একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি।’ বলেন মি. মিয়া।

তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছে।দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সংক্ষিপ্ত রায়েও আপীল বিভাগ নীতিগত সিদ্ধান্ত দিয়েছিল যে অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে সরকার গঠন সংবিধান বা আইনসম্মত নয়।‘আগেও তাদের নীতিগত অবস্থান ছিল যে নির্বাচিত সরকারের মধ্যে অনির্বাচিত সরকারের কোন স্থান নেই। তাই বলে দিয়েছে নির্বাচনের সময় ছোট মন্ত্রীসভা করা যায়। এ নিয়ে সন্দেহ সংশয়ের কোন অবকাশ নেই।‘ বলেন মি. সেনগুপ্ত।

অবসরে যাওয়ার পর পূর্নাঙ্গ রায়ে প্রক্তন প্রধান বিচারপতির সই করার এখতিয়ার নিয়েও বিএনপি প্রশ্ন তুলেছে।তবে বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্যে তারা যে দাবি জানিয়ে আসছে এখনও তার সমাধানের সুযোগ রয়েছে।রফিকুল ইসলাম মিয়া বলছেন, ‘বিষয়টিকে দেখতে হবে রাজনৈতিকভাবে।তিনি বলেন, সরকার যদি আন্তরিকভাবে সমস্যার সমাধান চায় তাহলে তারা সেটা করতে পারে কারণ সংসদে তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে তিনি জানান।

আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তও মনে করেন রাজনৈতিকভাবে সমস্যা সমাধানের এখনও সুযোগ রয়েছে। তবে সেটা হতে হবে নির্বাচিত ব্যক্তিদের দিয়ে। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান এবং এখনও সেই সমঝোতার সময় রয়েছে।

অনলাইন ডেস্ক