জন্মের পরে যে মানুষটির হাত ধরে হাঁটতে শেখা, যার কাঁধে চড়ে পৃথিবী জয়ের আনন্দ ঘুরে বেড়ানো ছোটবেলা- সে-ই বাবা। সন্তানদের মুখে হাসি ফোঁটাতে বিরামহীন পরিশ্রম করে ঘামে ভিজে থাকে যার শরীর, সে-ই বাবা।
সাইকেল চালানো, সাঁতার শেখা, অক্ষর জ্ঞান শেখানো, বসা থেকে দাঁড়িয়ে থাকার এ ভালবাসার শিক্ষক বাবার কথা অনেকেই ভুলে যায়। অথচ এই বাবা মানে আমার নির্ভরতার আকাশ। এই বাবা মানে জমিয়ে রাখা আমার অনেক ঋন।
প্রতিবছর জুনের তৃতীয় রবিবার বিশ্ব বাবা দিবস পালিত হয়। সে হিসেবে আজ ২১ জুন বাবা দিবস। ১৯১০ সালে অনানুষ্ঠানিক ভাবে বাবা দিবস পালন করা হলেও ১৯৭২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আইনে পরিনত হয়ে পালন করা হচ্ছে এ দিনটি। কিন্তু যে বাবা সন্তানের জন্য মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, সেই সন্তান বাবাকে কতটুকু মনে রাখে! এখনও অনেক বাবাদের থাকতে হয় বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালের ভেতর। করোনায় আক্রান্ত বাবাকে রাস্তায় ফেলে আসতেও এতটুকু বুক কেঁপে ওঠেনা অবুঝ সন্তানদের।
এই বাবা-ই আমাদের ছোট বেলায় অসুস্থ্য হলে পাশে বসে নিদ্রাহীন রাত কাটিয়ে আমাদের আগলে রাখতো। ভয় করেনি ছোঁয়াচে রোগেরও। নিম পাতা বিছানায় রাখলে ছোয়াছে রোগের উপদ্রপ কমে যায়- তাই দু এক গ্রাম পাঁয়ে হেঁটে নিম গাছের পাতা জোগারে তার কতই না চেস্টা ছিল। সন্তানের শিয়রের পাশে সেই নিমপাতা রেখেই যেন তার তৃপ্তি।
সন্তানদের স্কুল, কলেজের গন্ডি পেড়োতে বাবাদের ছেঁড়া জামার ভেতরের- জ্বীর্ন শরীরটায় পুস্টিহীনতা বুকের ভেতরের ভালবাসায় খাঁদ ছিলনা এতটুকু। সন্তানের উজ্বল ভবিষ্যতে ঢাকা পরে যাবে বেদনার সবগুলো রং।
ভাবনার সাথে বাস্তবে অনেক অমিল থাকলেও সন্তানদের জন্য নিরবচ্ছিন্ন শুভ কামনার কমতি নেই। বয়সের ভারে ন্যূয়ে পরা শরীরটা সোজা হয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকাতে না পারার সময়ও নীচের দিকে তাকিয়ে-তোরা ভাল থাকিসের আঁকূতি, বাবা ছারা আর কে বলবে? বৃস্টির মাঝে ছাতা হয়ে থাকা বাবারা মৃত্যু পথযাত্রী এখন।
ঘরের কোনে বিছানায় শুয়ে বিনিদ্র রাত কাটান মৃত্যুর অপেক্ষায়। চশমাটা গলায় ঝুলিয়ে রাখেন সন্তান কখন এসে একটু পাশে বসবে, একটু দেখবেন। রাত করে সন্তানরা বাসায় না ফেরা পর্যন্ত এখনও তাদের চোখে ক্লান্তিহীন পথচেয়ে থাকার ভালবাসাটুকু সন্তানরা কতটুকু বুঝে? যেদিন এ আদেরর চোখগুলো বন্ধ হয়ে যাবে, নিথর হবে বাবাদের দেহ, তখন সন্তানদের অনুভূতিতে আর ওই মিষ্টি গন্ধটা জীবনের বাঁকে এসে ঘোরাফেরা করবেনা, ছাঁয়া দেয়া বটবৃক্ষের ভেতর নিরাপদে হাসবে না আর খর তাপের শীতল বাতাস।
মৃত্যুর পরে দাফনের সাথেই শেষ হয়ে যাবে ভরসার এই শক্তি, সাহসের বাবারা। তাই জীবিত থাকতেই যেন আগলে রাখি আমাদের বাবাদের। তখন আগলে ধরার সময় আমাদেরকেও জড়িয়ে ধরে বলতে পারে- 'পাগল ছেলে ভয় কিসের? এখনও তো আমি বেঁচে আছি।'
ভাল থাকুক পৃথিবীর সব বাবারা।
সৈয়দ জুয়েল
সাংবাদিক, লেখক, প্রাবন্ধিক, বিশিষ্ট কলামিস্ট ও সময় টিভি আয়ারল্যান্ড প্রতিনিধি
গলওয়ে, আয়ারল্যান্ড