মহাশূন্যে আদৌ কী কোথাও অন্য কোনো প্রাণী আছে? ভিনগ্রহের জীব নিয়ে মানুষের আগ্রহের তো শেষ নেই। সে আগ্রহে খানিকটা জল ঢেলে দিল অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণা। মহাশূন্যের প্রাণী। এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল বা ইটি। স্টিভেন স্পিলবার্গের সেই অসামান্য ছবি, ইটি যে পরিমাণ সাড়া ফেলেছিল আশির দশকে, তা আজো অনেকে ভোলেনি।

কল্পনার সেই প্রাণীর ক্ষমতা অনেক বেশি, তারা যা খুশি করতে পারে। দেখতে অদ্ভুত হয়, তাদের কারো শিং আছে, যেটা আসলে অ্যান্টেনা, কারো বা চারটে হাত, কিংবা কারো মাথায় শুধুই একটাই চোখ। এরকম কল্পনার গরুকে গাছে ওঠাতে দেখে আসছি আমরা সেই কবে থেকে। মাঝে মধ্যেই এমন অনেক গল্পগাছাও শোনা যায়, যাতে বলা হয়, অমুক জায়গায় দেখা গেছে ফ্লাইং সসার বা উড়ন্ত চাকি। এই উড়ন্ত চাকি আসলে হলো ভিনগ্রহের মহাকাশযান।

যার মধ্যে মানুষের থেকে হাজারগুণ বেশি বুদ্ধি ধরে এমন সব জীবেরা রয়েছে। তারা কখনো মানুষের বন্ধু, কখনো বা পৃথিবীর দখল নিতে আসে তারা। আর শেষ পর্যন্ত মানুষের সঙ্গে লড়াইতে হয় মারা পড়ে, না হলে পালিয়ে যায়। ভিনগ্রহের জীবেদের নিয়ে এই যে কষ্টকল্পনা বা রোমাঞ্চ কল্পনা এ রয়েছে বহুকাল ধরেই। নানা ধরনের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনী গোটা বিশ্বেই পাওয়া যায়। এ কোনো নতুন তথ্য নয়। কিন্তু আদৌ তারা আছে নাকি এসবকিছুই গাঁজাখুরি, সেটা জানতে গবেষণাও কম হচ্ছে না। তেমনই একটা বিশেষ গবেষণা বেশ অনেকদিন ধরেই চালিয়ে আসছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মহাকাশচারীরা। এই গবেষণার জন্য তারা ব্যবহার করছিলেন একেবারে অত্যাধুনিকতম প্রযুক্তি। কিন্তু বিস্তর চেষ্টা চরিত্র করেও কোনো কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে যেদিকটিতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছিল এই গবেষণার ক্ষেত্রে, তাহল রেডিও সিগন্যাল বা রেডিও বার্তা। ধারণা করা হচ্ছিল, এই মহাকাশের জীবেরা কোনো না কোনো রেডিও সিগন্যাল তো অবশ্যই ব্যবহার করে থাকে। সুতরাং তেমন কিছু থাকলে যাতে সেই অতি নাজুক রেডিও সিগন্যালটাকেও ধরা যায়, তার জন্য বিশেষ ধরনের ক্ষমতাশালী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এত চেষ্টা করেও লাভের লাভ তেমন কিছু হয়নি। কীভাবে এগিয়েছিল এই গবেষণা? অস্ট্রেলিয়ার গবেষক মহাকাশচারীরা বলছেন, আমাদের চেনাজানা সৌরজগতের যে সমস্ত গ্রহ এবং নক্ষত্র রয়েছে, তাদের মধ্যে সংযোগসাধনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখলে দেখা যাবে, মহাকাশে গিলিয়েসে ৫৮১ নামের একটি নক্ষত্রের অবস্থান বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই নক্ষত্রটি পৃথিবী থেকে ২০ আলোকবর্ষ দূরে মহাশূন্যের এমন এক অবস্থানে রয়েছে, যেখানে তার আশেপাশে, অর্থাৎ তাকে ঘিরে রয়েছে ছয়টি গ্রহ। সেই ছয়টার মধ্যে দুটোর আকার আমাদের এই পৃথিবীর থেকেও অনেক বড়মাপের। আর মহাশূন্যের কোথাও অন্য গ্রহের প্রাণী থেকে থাকলে তাদের সবচেয়ে বেশি থাকার সম্ভাবনা এই গিলিয়েসে ৫৮১-র কোনো গ্রহেই। সুতরাং, নক্ষত্র গিলিয়েসে আর তার গ্রহদেরকে নিয়েই শুরু হয় অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির গবেষণা। যাতে ভিএলবিআই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছিল। যে পদ্ধতিতে আসলে একাধিক টেলিস্কোপকে একসঙ্গে জুড়ে নিয়ে তাদের ক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়ানোর পাশাপাশি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম এবং বহুদূরের রেডিও সিগন্যালকে ধরা যাবে। সে চেষ্টায় দেখা গেল প্রাথমিকভাবে কোনো ফলাফল মেলেনি। অবশ্য তার মানে আদৌ এরকম নয় যে ভবিষ্যতে কিছু পাওয়া যাবে না।

এই দাবি অন্য কারো নয়, বলছেন সেথ সোস্টাক নামের এই গবেষকদলের নেতা। তার যুক্তি খুব স্বচ্ছ। জানিয়েছেন, অসীম মহাশূন্যের একটা ছোট্ট অংশকে বেছে নিয়ে সেখানে ভিনগ্রহের প্রাণীদের উপস্থিতির সম্ভাবনা আছে ধারণা করে নিয়ে একটি গবেষণা শুরু হয়েছে। তাতে কোনো ফলাফল না পাওয়ার অর্থ এমন মোটেই নয় যে ভবিষ্যতের গবেষণায় বা চেষ্টায় কোনো সুফল ফলবে না। কারণ, মহাশূন্যের একদিক থেকে অন্যদিকের যে বিশাল দূরত্ব, তাকে সহজে পেরোনোর পন্থা এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখলে এটা বোঝা মোটেই সহজ কাজ নয় কী রয়ে গেছে সেই অজানা অদেখা গ্রহগুলোতে। কারণ সেখানে না পৌঁছতে পারলে সংযোগ কীভাবেই বা সাধিত হবে? এ যুক্তি অকাট্য। তাই গবেষণা চলুক। কোনো না কোনোদিন হয়তো বা সেই ই টি-র সন্ধান সত্যি সত্যিই পেয়ে যাবে মানুষ।