ব্রিটেনে ৯ বছর আগে এশীয় বংশোদ্ভূত পাকিস্তানের এক কিশোরীকে হত্যার দায়ে তার মা-বাবা দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত। শুক্রবার চেস্টার ক্রাউন কোর্টের জুরিরা এ রায় দেন। তবে হত্যার কথা শেফিলিয়ার মা-বাবা দুজনেই অস্বীকার করেছেন।

শেফিলিয়ার বাবার বয়স ৫২ এবং মায়ের বয়স ৪৯ বছর হওয়ায় অন্তত ২৫ বছর তাদের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে জানিয়েছেন বিচারক রড্রিক ইভান্স। উল্লেখ্য, উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেশায়ারের বাসিন্দা ১৭ বছরের শেফিলিয়া ২০০৩ সালে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। ছয় মাস পর কাম্ব্রিয়ার কেন্ট নদীতে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।১৭ বছর বয়সী শেফিলিয়া আহমেদকে যখন হত্যা করা হয়, তখন তার পশ্চিমী ধাঁচের জীবনযাপন পরিবারে কলঙ্ক বয়ে আনছে- এমনটাই ছিল তার মা-বাবার বক্তব্য। শেফিলিয়ার বাবা ৫২ বছরের ইফতিখার আর তার ৪৯ বছরের মা ফারজানা আহমেদ তাকে হত্যা করার কথা অস্বীকার করেন। কিন্তু আদালতের জুরিরা আজ তাদের দুজনকেই হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেন।

রায় প্রদানকালে বিচারপতি ওই দম্পতির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সন্তানের প্রতি ভালবাসার চেয়ে আপনাদের কাছে বেশি মূল্যবান পারিবারিক ও সামাজিক সম্মান- যেটা আপনাদের জন্য ছিল বেশি উদ্বেগের।’ শেফিলিয়ার মা-বাবা বেশ কয়েক বছর মেয়ের ওপর নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতন চালানোর পর প্লাস্টিকের ব্যাগ দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন।

মামলার রায়ের পর পুলিশের ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্ট জারেন্ট জোনস ঘটনার এমন বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, শেফিলিয়া গর্ব করার মত একজন মেয়ে, তার এই হত্যা একটা মর্মান্তিক ও জঘণ্য ঘটনা। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অভিযোগ করেন, শেফিলিয়ার আচার-আচরণ তার পরিবারের জন্য অসম্মানের এই কারণেই তার মা-বাবা তাকে হত্যা করেছেন। চূড়ান্ত সাজা প্রদানের আগে এবং এ বিষয়ে আর কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়- তা আরও একবার খতিয়ে দেখা হবে বলে আদালত এবং পুলিশ জানিয়েছে।

শেফিলিয়া ২০০৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হন। আর প্রায় সপ্তাহ খানেক পর বিষয়টি তার শিক্ষক পুলিশকে জানান। এরপর তাকে খুঁজে পেতে পরিবারের পক্ষ থেকে একাধিকবার আবেদন জানানো হয়। এরপর ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক গৃহকর্মী কিশোরীর লাশের সন্ধান পান। পরে পরিহিত গহনা এবং দাঁতের প্রতিবেদনের ওপর তা শেফিলিয়ার বলে পরিবার সনাক্ত করে।

লাশের দুটি তদন্ত প্রতিবেদনে কিভাবে শেফিলিয়ার মৃত্যু হয়েছে তা চিহ্নিত হয় না। কিন্তু ২০০৮ সালে এটা যে অপেশাদারী হত্যা তা উল্লেখ করে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তবে পুলিশ হাল ছেড়ে দেয় না। তার মা-বাবার কথপোকথন থেকে হত্যার বিষয়টি কিছুটা নিশ্চিত হতে পারে। এরপর ২০১০ আগস্টে আগ্নেয়াস্ত্র চুরির দায়ে বাড়ি থেকে শেফিলিয়ার ছোট বোন আশেয়া আহমেদ গ্রেপ্তার হয়। আশেয়া পুলিশের কাছে জবানবন্দি দেয়, সে নিজে তার মা-বাবার হাতে বড় বোন শেফিলিয়াকে খুন হতে দেখেছে এবং কিভাবে খুন করা হয় তার পুরো বর্ণনা দেয়।

অবশ্য ট্যাক্সি চালক ইফতিখার আহমেদ জানান, মধ্যরাতে তার মেয়ে বাড়ি থেকে দৌঁড়ে বের হয়ে যায়। এরপর সে আর কখনো বাড়ি ফিরে আসেনি। এরপর আদালতে শেফিলিয়ার মা জানান, মধ্যরাতে তার স্বামী বড় মেয়েকে পেটান। আর এক পর্যায়ে মেয়েকে খুন করেন।

রায় ঘোষণার সময় ইফতিখার আহমেদ নির্বাক দৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আর মা ফারজানা আহমেদ কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছতে থাকেন। তবে এ রায়ে তাদের সন্তান জুনায়েদ, মেভিস এবং ছোট মেয়ে আয়েশাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। তবে তারাও আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে।

এ, কে, আজাদ – বার্তা সম্পাদক