প্রাণ গ্রুপ তাদের বিস্কুট, চানাচুর, চিপস, সরিষার তেলসহ বেশকিছু খাদ্যপণ্যের একটি চালান কানাডায় পাঠিয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে। কিন্তু রফতানি করা সব পণ্যে ভাইরাসের উপস্থিতির কথা জানিয়ে তা ফেরত পাঠায় কানাডা কর্তৃপক্ষ। 

ফেরত আসা খাদ্যপণ্যের চালানটি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে খালাসের চেষ্টা করছে প্রাণ গ্রুপ। তবে এসব পণ্য খালাসের অনুমতি দিতে রাজি নয় চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। বরং আইন ও বিধি মোতাবেক ফেরত আসা পণ্য ধ্বংসের পক্ষে মত দিয়েছে কাস্টমস।

চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষের যুক্তি, রফতানি করা কোনো পণ্য ফেরত এলে তা রফতানিকারককে বুঝিয়ে দেয়ার বা পুনঃরফতানির অনুমতি দেয়ার আইনগত বিধান রয়েছে। তবে প্রাণের রফতানি করা পণ্য যে কারণে ফেরত এসেছে, তাতে এসব পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ খাদ্যপণ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি চিহ্নিত হওয়ায় এর সঙ্গে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। তাই ফেরত আসা এসব খাদ্যপণ্যের প্রতিবেদন পর্যালোচনার পর জনস্বাস্থ্যের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তা ধ্বংসের সুপারিশ করেছে কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

জানা যায়, কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান কেডব্লিউ ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট প্রাণ গ্রুপের বিভিন্ন ধরনের খাদ্যপণ্য আমদানি করে, যার শিপিং বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-৫৪৭২০২। রফতানি চালানে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দেখানো হয়েছে প্রাণ গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান প্রাণ এক্সপোর্টস লিমিটেড, বাগপাড়া, পলাশ, নরসিংদী। রফতানি করা পণ্যের মধ্যে আছে প্রাণ টোস্ট বিস্কুট, টি ব্রেক, চানাচুর, ম্যাংগোবার, চাল, ঝাল মুড়ি, চিঁড়া ভাজা, চিঁড়া লাড্ডু, চিপস ও সরিষার তেল।

কানাডার শুল্ক বিভাগ প্রাণের রফতানি করা খাদ্যপণ্যে ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ (এফএমডি) ভাইরাস ও পোকামাকড়ের উপস্থিতি শনাক্ত করায় তা গ্রহণ না করে ফেরত পাঠিয়েছে। ফেরত আসা এসব খাদ্যপণ্য বর্তমানে চট্টগ্রাম বন্দরের সিএফসি শেডে রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বিল অব এন্ট্রি রেজিস্ট্রেশন করে গত ১৮ জুন, যার নম্বর সি-৬৯০৩৩। পণ্য বন্দরে পৌঁছানোর এক মাসের মধ্যে সাধারণত বিল অব এন্ট্রি রেজিস্ট্রেশন করতে হয়।

এ প্রসঙ্গে প্রাণ গ্রুপের রফতানি শাখার জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক গোলাম রসুল বণিক বার্তাকে বলেন, ‘কানাডায় আমাদের রফতানিকৃত খাদ্যপণ্যের কনটেইনার এলসিএল (লুজ কনটেইনার লোডিং) হওয়ায় সেখানে অন্য রফতানিকারকদের পণ্যও ছিল। তাই এককভাবে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর সুযোগ নেই। তা ছাড়া একই প্রতিষ্ঠানের কাছে এর আগেও আমরা পণ্য রফতানি করেছি।

কখনো কোনো ত্রুটি ধরা পড়েনি। কানাডা সরকার ভাইরাসের উপস্থিতিজনিত যে কারণ দেখিয়ে চালান ফেরত পাঠিয়েছে, তার বিপক্ষে সব ধরনের যুক্তি কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরেছি। এখন কাস্টমসের অনুমতি পেলে ফেরত আসা এসব খাদ্যপণ্য খালাস করে পুনঃরফতানির চেষ্টা করা হবে।’

তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, ফেরত আসা প্রাণ গ্রুপের চালানটি কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট বিভাগ যাচাই করেছে। কানাডিয়ান কর্তৃপক্ষ কেন চালানটি গ্রহণ করেনি, সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা করা হয়েছে। পর্যালোচনাশেষে এসব পণ্য খালাস না করিয়ে বরং আইন ও বিধি মোতাবেক তা ধ্বংস করার পক্ষে চট্টগ্রাম কাস্টমস। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলেই ফেরত আসা খাদ্যপণ্য ধ্বংসের ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, খাদ্যপণ্যের চালানটি প্রত্যাখ্যান হওয়ার পর আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে কয়েক দফা সমাঝোতার চেষ্টা করে প্রাণ কর্তৃপক্ষ। গত ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি ই-মেইল বার্তায় প্রাণ কর্তৃপক্ষ দাবি করে, তারা তাদের পুরো চালান পরীক্ষা করে দেখেছে সবকিছু ঠিকঠাক রয়েছে। তাই চালানটি ফিরিয়ে নিতে অনুরোধ জানায় প্রাণ। কনটেইনারের পণ্যে এফএমডি ভাইরাসের উপস্থিতি অস্বীকার করে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়, প্রয়োজনে প্রাণের পক্ষ থেকে কানাডা শুল্ক বিভাগের সামনে এ ব্যাপারে যুক্তি তুলে ধরা হবে। এ ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রতিষ্ঠানটির আগে কখনও হতে হয়নি বলেও জানায় প্রাণ।

জবাবে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণকে জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ থেকে রফতানি করা খাদ্যপণ্য বন্দরে পৌঁছার পর কানাডিয়ান শুল্ক বিভাগ কনটেইনারের দুই প্রান্তে দুটি মরা ইঁদুর খুঁজে পেয়েছে। পাশাপাশি এসব খাদ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার পর সেখানকার শুল্ক পরিদর্শক সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি আমদানিকারককে অবগত করে। দ্রুত এসব খাদ্যপণ্য বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়ারও নির্দেশ দেয়।

ভিন্ন ভিন্ন ১০টি ক্যাটাগরিতে ২০০-এর বেশি খাদ্যপণ্য প্রস্তুত করে প্রাণ। এর মধ্যে আছে জুস, ড্রিংকস, মিনারেল ওয়াটার, বেকারি পণ্য, কার্বোনেটেড বেভারেজ, স্ন্যাকস, কনফেকশনারি, মসলা, বিস্কুট ও ডেইরি প্রোডাক্টস। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে নিজেদের প্রস্তুতকৃত খাদ্যপণ্য রফতানি করছে প্রাণ।

অনলাইন ডেস্ক