ঢাকা, ২৩ জুলাই: বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে লাখ লাখ ভক্ত-অনুরাগীর ঢল দেখে বিস্মিত হয়েছেন বাংলাদেশে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকরা।

একজন লেখককে পুরো জাতি যে এতো ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানাতে পারে এমন উদাহরণ তারা আর দেখেনি বলেও জানান বিদেশিরা। এ সময় তারা বেশ আবেগী হয়ে পড়ে। শহীদ মিনারে স্থানীয় একটি পত্রিকার সাথে আলাপকালে বিদেশি নাগরিকরা এ মতামত দেন।

সোমবার হুমায়ূন আহমেদের মরদেশ সর্বস্তরের মানুষের শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনা হয়। এ সময় লাখ লাখ হুমায়ূন ভক্ত শ্রদ্ধা জানাতে আসেন। কৌতূহলবশত বিদেশিরাও ঢাকায় নিজ কর্মস্থল বা হোটেল থেকে এ দৃশ্য দেখতে আসেন।

গবেষণার কাজে বাংলাদেশে আসা ফ্রান্সের প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক জেরিমি কর্ডন বলেন, ‘‘এমন দৃশ্য আমি বা পূবসূরীদের কেউ দেখেছে বা শুনেছে বলে আমার জানা নেই। একজন লেখকের জন্য এতো ভালোবাসা সম্ভবত বাংলাদেশী ছাড়া আর কারো পক্ষে দেখানো সম্ভব নয়। আমাদের দেশে প্রিয়জন হারানোর শোকেও মানুষকে এতো কাঁদতে দেখিনি। আমি সত্যিই বিমোহিত।’’

ব্যবসার কাজে আসা অস্ট্রিয়ান নাগরিক ম্যাটিয়র উলফ বলেন, ‘‘বাংলাদেশীরা অনেক আনন্দপ্রিয়, সুখি, উৎসবপ্রিয় ও সংস্কৃতিপরায়ণ জাতি বলে শুনেছি। একজন লেখককে শ্রদ্ধা জানাতে লাখ লাখ মানুষের ঢল দেখে এ জাতির প্রতি আমার শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। আমার বলতে ইচ্ছে করছে, সত্যিই বাংলাদেশীরা সম্মান জানাতে পারে।’’

মালয়েশিয়ান ব্যবসায়ী আবদেল আসাসাহ বলেন, ‘‘রোববার আমি ঢাকা এসেছি। টিভিতে দেখেছি এদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখকের মৃত্যু হয়েছে। সকাল থেকে হোটেলের সামনে দিয়ে হাজার হাজার লোককে শহীদ মিনারের পথে এগুতে দেখে কৌতূহলবশত আমিও এলাম। এখানে এসে যা দেখলাম তাতে ‘সাবাস বাঙালি’ বলা ছাড়া আমি আর কিছু বলার নেই।’’

দক্ষিণ কোরিয়ান নাগরিত নাগিল জো বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক ঐক্যের শক্তির বাংলাদেশীদের সবচেয়ে বড় পুঁজি। দল, মত নির্বিশেষে একজন লেখকের প্রতি এতো ভালোবাসা সত্যিই অনবদ্য। আমি এ লেখকের আত্মার শান্তি কামনা করেছি।’’

চাকরিসূত্রে দীর্ঘদিন বাংলাদেশী অবস্থানকারী ভারতীয় নাগরিক নীতেশ হোড় বলেন, ‘‘একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে আমি লাখ লাখ লোককে শহীদ মিনারে একত্রিত হতে দেখেছি একাধিকবার। কিন্তু এবার একুশে ফেব্রুয়ারির বাইরে একজন লেখককে কেন্দ্র করে আবার মিনারে এতো লোককে একত্রিত হতে দেখলাম। এটা সত্যিই অবিশ্বাস্য।’’

ব্যবসা সূত্রে ঢাকা সফরকারী জাপানি নাগরিক হিরোতো কোশায়ারা বলেন, ‘‘অতীতে কোনো দেশের কোনো লেখকের ভাগ্যে এমন ভালবাসা জুটেছে কিনা আমি জানিনা, তবে আজ যা দেখলাম তার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশিরা আমার হৃদয়ে ভিন্নভাবে স্থান করে নিয়েছে। এমন ভালবাসায় বাংলাদেশীদের আমি চিরজীবন স্যালুট করে যাবো।’’

একইভাবে পাকিস্তানি নাগরিক আব্দুস সাত্তার, চীনা নাগরিক রু জিন জি, মার্কিন নাগরিক উইলিয়াম গে, বৃটিশ তরুণী মার্গারেট ও নরওয়েজিয়ান পর্যটক র‌্যালপ রাইনও হুমায়ূন আহমেদের প্রতি বাংলাদেশীদের এমন অকৃত্রিম শেষ শ্রদ্ধা জানানো পদ্ধতিতে অসাধারণ বলে এদেশের লোকদের প্রশংসা করেছেন।

-বার্তা২৪ থেকে