লিখেছেন আলোকিত: উইন্ডোজ ব্যবহারকারীদের অনেকেই লিনাক্স ব্যবহার করতে ভয় পান একে জটিল এবং অভিজ্ঞ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি অপারেটিং সিস্টেম ভেবে। তাদের ধারণা পুরোপুরি ভুল নয়... একসময় সত্যিই তাই ছিল। কিন্তু এখন সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য তৈরি হয়েছে উবুন্টু লিনাক্স যা উইন্ডোজের চেয়েও অনেক সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব। এখানে উবুন্টু লিনাক্সের কিছু সুবিধা তুলে ধরছি, এবং একই সাথে উইন্ডোজের দূর্বলতাগুলো উল্লেখ করছি।

১। নিরাপত্তা: লিনাক্সের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উইন্ডোজের চেয়ে অনেক উন্নত এবং নিশ্ছিদ্র। উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমে এন্টিভাইরাস এবং ফায়ারওয়াল ইন্সটল করা না থাকলে ভাইরাস/হ্যাকারের আক্রমণ প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু লিনাক্সের সিস্টেম কার্নেল ভাইরাস এবং হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে পুরোপুরি মুক্ত। কাজেই কোন ধরণের সিকিউরিটি সফ্টওয়্যার(এন্টিভাইরাস/ফায়ারওয়াল ইত্যাদি) ছাড়াই নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারেন উবুন্টু লিনাক্স।

২। স্বয়ংসম্পূর্ণ: অনেকেই মনে করেন উইন্ডোজ লিনাক্সের চেয়ে অধিক স্বয়ংসম্পূর্ণ, কিন্তু এ ধারণা পুরোপুরি ভুল। উইন্ডোজের কোন সিস্টেম ফাইল মুছে গেলে বা ভাইরাসের আক্রমণে সিস্টেম কার্ণেলের কোন অংশের ক্ষতি হলে উইন্ডোজ নিজে থেকে ঠিক করতে পারে না, ব্যবহারকারীকে ট্রাবলশুট করে ঠিক করতে হয়। আর পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা ছাড়া উইন্ডোজের অনেক ত্রুটি ঠিক করা সম্ভব নয়। ফলে একমাত্র সমাধান- উইন্ডোজ রি-ইন্সটল। এছাড়াও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এনটিএফএস ফাইল সিস্টেমের ক্ষতি হলেও উইন্ডোজ অনেক সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে autochk কমান্ড ব্যবহার করে না। এর ফলে প্রয়োজনীয় ফাইল ও ডকুমেন্ট সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থেকে যায়।

অপরদিকে উবুন্টু লিনাক্সে ব্যবহারকারীর অগোচরে কোন সমস্যা সৃষ্টি হওয়া প্রায় অসম্ভব। কোন কারণে সমস্যা হলেও উবুন্টুর বুট মেনু থেকে রিকভারি মোড চালু করলে উবুন্টু নিজে থেকে সম্ভাব্য সবধরণের সমস্যা খতিয়ে দেখে এবং নিজে থেকেই সবকিছু ঠিক করে নেয়, ব্যবহারকারীকে কিছুই করতে হয় না। ফাইল সিস্টেমের সমস্যা হলে উবুন্টু সেটিও ঠিক করে নেয়।
এছাড়াও উইন্ডোজে সব ধরণের হার্ডওয়্যারের ড্রাইভার ডিফল্ট দেয়া থাকে না... খুঁজে নিয়ে ইন্সটল করতে হয়। আর লিনাক্সে বহু ড্রাইভার ডিফল্টভাবেই দেয়া থাকে।

৩। ব্যবহারবান্ধব: উবুন্টু লিনাক্স উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের চাইতে অনেক সহজ এবং ব্যবহারবান্ধব। উবুন্টুতে সব কাজের জন্য আলাদা-আলাদা বিভাগে বিভক্ত করা সফ্টওয়্যার ইন্টারনেটে রিপোজিটরিতে জমা থাকে এবং উবুন্টুর এ্যাপ্লিকেশন ম্যানেজার ব্যবহার করে ব্যবহারকারী পছন্দমত সফ্টওয়্যার ডাউনলোড করে ইন্সটল করে নিতে পারেন।

উবুন্টুর সফ্টওয়্যারগুলো ইন্সটল করতে কোন ধরণের প্রোগ্রামিং দক্ষতার প্রয়োজন নেই।

উবুন্টুর ডেস্কটপ উইন্ডোজের চাইতেও অনেক কার্যকরী, সহজে পরিবর্তনযোগ্য (Customizable) এবং ব্যবহারবান্ধব। উইন্ডোজের টাস্কবারের বিকল্প হিসাবে উবুন্টুতে আছে প্যানেল নামে উইন্ডোজ টাস্কবারের চাইতেও অধিক ক্ষমতাসমন্ন ডেস্কটপ বার। এগুলোতে আপনি ইচ্ছামত সফ্টওয়্যারের শর্টকাট তৈরি করে নিতে পারেন, বিভিন্ন এ্যাপলেটের সাহায্যে ডেস্টপকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন, আর সেই সাথে উইন্ডোজ টাস্কবারের মত উইন্ডো লিস্ট এবং নোটিফিকেশন এড়িয়া তো থাকছেই!
নিচের ছবিটি দেখুন....

ডেস্কটপ যে এমনই হতে হবে এরকম কোন বাধ্যবাধকতা নেই। এটা আমার নিজের ডেস্কটপ... উবুন্টুতে ডিফল্টভাবেও এরকম দেয়া থাকে না। আপনি পছন্দমত ডেস্কটপে বিভিন্ন আইকন, এ্যাপলেট, নোটিফিকেশন এড়িয়া সংযোগ/অপসারণ করতে পারবেন।

এছাড়াও উবুন্টুতে একই সাথে দুটি ডেস্কটপ/ওয়ার্কস্পেস ব্যবহার করতে পারবেন।

৪। দ্রুততা: কিছু ত্রুটির কারণে উইন্ডোজ ধীরে ধীরে মন্থর হয়ে পরে। এ ত্রুটিগুলোর মধ্যে হার্ড ডিস্কের এলোমেলো ফাইলসজ্জা (ফ্র্যাগমেন্টেশন), রেজিস্ট্রির অব্যবহৃত অংশ (Obsolete Registry Entries) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বিভিন্ন ভাইরাস ও স্পাইওয়্যারের আক্রমণের কারণেও উইন্ডোজের গতি হ্রাস পায়।

অপরদিকে লিনাক্সের ext3 ফাইল সিস্টেমে বিশেষ পদ্ধতেতে ফাইলগুলো সজ্জিত করে... ফলে ফ্র্যাগমেন্টেশনের কোন সম্ভাবনা নেই। আর উবুন্টু উইন্ডোজের মত অব্যবহৃত রেজিস্ট্রি এন্ট্রি জমা করে রাখে না। উবুন্টুতে ভাইরাস/স্পাইওয়্যার কোনটিই আক্রমণ করতে পারে না। ফলে বহুদিন ব্যবহারের পরও উবুন্টুর স্বাভাবিক গতি ও কর্মক্ষমতা বজায় থাকে। যেখানে উইন্ডোজ ধীরে ধীরে মন্থর হয়ে পরে।

৫। গ্রাফিক্যাল ইফেক্ট: উবুন্টু লিনাক্সে রয়েছে অসাধারণ কম্পিজ ফিউশন ইফেক্ট। যার দ্বারা দৃষ্টিনন্দন উইন্ডো এনিমেশনের পাশাপাশি অত্যন্ত কার্যকরী কিছু ইফেক্ট পাওয়া যায়। এর মধ্যে ট্যাব গ্রুপিং, উইন্ডো ট্রান্সপারেন্সি ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ট্যাব গ্রুপিং এর সাহায্যে আপনি কয়েকটি উইন্ডোকে ট্যাব আকারে একত্র করে রাখতে পারবেন এবং উইন্ডো ট্রান্সপারেন্সি ইফেক্টের সাহায্যে যেকোন উইন্ডোকে স্বচ্ছ(ট্রান্সপারেন্ট) করে ফেলতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও আরও বহু ইফেক্ট ডিফল্টভাবে দেয়া আছে এবং প্রতিদিন নিত্যনতুন ইফেক্ট ইন্টারনেটে বিনামূল্যে ডাউনলোডের জন্য দেয়া হচ্ছে।
অপরদিকে উইন্ডোজের নতুন সংস্করণ উইন্ডোজ ভিস্তাতে কিছু গ্রাফিক্যাল ইফেক্ট আনা হলেও সেগুলোর বেশিরভাগই কোন কাজের নয়। এছাড়াও ভিস্তার ইফেক্টগুলো সক্রিয় রাখলে প্রচুর সিস্টেম রিসোর্স(Ram, প্রসেসর) ব্যবহার করে যেখানে উবুন্টুর ইফেক্টগুলো সক্রিয় রাখলেও উইন্ডোজ এক্সপির চাইতেও অনেক কম সিস্টেম রিসোর্স ব্যবহার করে।

৬। সকল কাজের জন্য পর্যাপ্ত সফ্টওয়্যার: উবুন্টুতে সকল কাজের জন্যই পর্যাপ্ত সফ্টওয়্যার আছে। উইন্ডোজের মত লক্ষ-কোটি নামী বেনামী সফ্টওয়্যার না থাকলেও এ সফ্টওয়্যারগুলো অত্যন্ত সহজ, সাবলীল এবং উইন্ডোজের সফ্টওয়্যারগুলোর মতই বিভিন্ন ধরণের কাজের উপযোগী।
যেমন: মাইক্রোসফ্ট অফিসের বিকল্প হিসাবে আছে ওপেন অফিস অর্গ, ফটোশপের বিকল্প হিসাবে আছে অসাধারণ একটি গ্রাফিক্স ডিজাইন এবং ফটো এডিটিং সফ্টওয়্যার গিম্প, ডিভিডি/ভিসিডি মুভি দেখার জন্য টটেম, ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার, গান শোনার জন্য রিদমবক্স, বংশী, লিসেন (Listen Music Player... বংশী এবং রিদমবক্সের মত তেমন জনপ্রিয় না হলেও এটা আমার সবচেয়ে প্রিয়), এডোবি রিডারের বিকল্প হিসাবে আছে কেপিডিএফ, এক্সপিডিএফ, ডকুমেন্ট ভিউয়ার ইত্যাদি। এরকম সব ধরণের সফ্টওয়্যারের-ই অসংখ্য বিকল্প আছে উবুন্টুতে... এবং সবগুলোই পুরোপুরি বিনামূল্যে!

৭। বাংলা ভাষার ব্যবহার: উবুন্টু লিনাক্সের জন্য রয়েছে বাংলা ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাক, যেটি শুধুমাত্র অপারেটিং সিস্টেমকেই বাংলা করে না বরং বিভিন্ন সফ্টওয়্যারকেও অনেকাংশে বাংলায় অনুবাদ করে। বাংলা লেখার জন্য উবুন্টুতে আছে অত্যন্ত চমৎকার প্রভাত ফোনেটিক লে-আউট। অভ্রে অভ্যস্থতার কারণে প্রথমদিকে প্রভাতে লিখতে সমস্যা হলেও এখন সে সমস্যা কাটিয়ে উঠেছি এমনকি এই আর্টিকেল পুরোটাই প্রভাত দিয়ে লিখছি।