নেটওয়ার্ক অপারেটিং সিস্টেম যাই হোক না কেন, হোম বা স্মল অফিস নেটওয়ার্ক সেটআপ করার জন্য সাধারণত বেশ কতগুলো ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নেটওয়ার্ক সেটআপের প্রধান ধাপগুলো নিয়ে এবার আলোচনা করা হয়েছে, যা উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের ক্ষেত্রে অনুসরণ করতে পারেন। এ লেখায় মূলত উইন্ডোজ ৭ এনভায়রনমেন্টে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপের ওপর বিশেষভাবে আলোকপাত করা হয়েছে।
নেটওয়ার্ক পরিকল্পনা :
হোম বা অফিসের জন্য ওয়্যারড (তারযুক্ত) না ওয়্যারলেস (তারবিহীন) নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চান, সেটি প্রথমে ঠিক করে নিতে হবে। সেটআপ, সিকিউরিটি এবং ব্যবহারে সুবিধার কারণে বর্তমানে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের প্রচলন বাড়ছে। এ কারণে ছোট পরিসরে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপন করাই ভালো।
প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার :
নেটওয়ার্কিংয়ের জন্য প্রতিটি কমপিউটারে নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার (ওয়্যারড অথবা ওয়্যারলেস) থাকা দরকার। এখনকার প্রত্যেক ল্যাপটপে বিল্টইন অবস্থায় ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টার থাকে। আলাদা করে এতে অ্যাডাপ্টার ইনস্টল করার কোনো প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া ইথারনেট ল্যানে একাধিক কমপিউটারকে যুক্ত করার জন্য সুইচ/হাব এবং একাধিক নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগের জন্য রাউটারের প্রয়োজন হয়। গুরুত্বপূর্ণ নেটওয়ার্কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ফায়ারওয়াল হার্ডওয়্যার ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
রাউটার সেটআপ :
রাউটারে যদি উইন্ডোজ ৭ লোগো থাকে অথবা এর গায়ে Compatible with Windows 7 লেখাটি থাকে তাহলে রাউটারটি উইন্ডোজ ৭ নেটওয়ার্কে Windows Connect Now (WCN)-এর মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেটআপ হবে। আগের দিনে বেশিরভাগ রাউটার সেটআপ করার জন্য এর সাথে পৃথকভাবে সিডি দেওয়া হতো।
রাউটারকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করা :
এটি একটি অপশনাল ধাপ। যদি নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত করতে চান, তাহলে প্রথমে স্থানীয় আইএসপি থেকে একটি অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। আইএসপি আপনার নেটওয়ার্কের রাউটার কিভাবে তাদের সার্ভারে যুক্ত হবে সে বিষয়ে নির্দেশনা দেবে। অনেক সময় রাউটার ওয়্যারলেস সংযোগের মাধ্যমে আইএসপির সার্ভারে যুক্ত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ডিএসএল বা আইএসডিএন সংযোগের সাহায্যে নেটওয়ার্ককে আইএসপির সাথে যুক্ত করা হয়।
কমপিউটার ও ডিভাইসগুলোকে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করা :
নেটওয়ার্ক ডিভাইসগুলোর সাথে কমপিউটারকে যুক্ত করা তথা নেটওয়ার্ক সেটআপের কাজটি সহজ করার জন্য ডিভাইস সংগ্রহের সময় লক্ষ রাখুন, যাতে এর গায়ে Windows 7 লোগো অথবা Compatible with Windows 7 লেখাটি থাকে। ডিভাইসগুলো উইন্ডোজ ৭-এর সাথে কম্প্যাটিবল হলে ডিভাইস কমপিউটারের সাথে সংযুক্ত করার সাথে সাথে সেটআপ প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে। এজন্য আলাদাভাবে কোনো সফটওয়্যার রান করার প্রয়োজন হবে না।
হোমগ্রুপ তৈরি এবং ফাইল ও প্রিন্টার শেয়ারিং চালু করা :
উইন্ডোজ ৭-এ হোম নেটওয়ার্ক সেটআপ করার পর এতে হোমগ্রুপ তৈরি করে খুব সহজেই ফাইল এবং প্রিন্টার শেয়ারের কাজটি করতে পারেন। মনে রাখতে হবে, হোমগ্রুপের সব কমপিউটার উইন্ডোজ ৭ অপারেটিং সিস্টেমের হতে হবে। তবে বিভিন্ন ভার্সনের অপারেটিং সিস্টেমের মধ্যে ফাইল ও প্রিন্টার শেয়ার করা যাবে। এজন্য সেটআপে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে, যা পরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
কোনো ডোমেইনে কমপিউটারকে যুক্ত করা :
উইন্ডোজ ৭ চালিত কোনো কমপিউটারকে বৃহত্তর কোনো নেটওয়ার্কে ব্যবহার করতে হলে অনেক সময় একে ডোমেইনে যুক্ত করতে হয়। ডোমেইন হচ্ছে কোনো বৃহৎ নেটওয়ার্কে একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী অর্থাৎ একই ধরনের কাজে নিয়োজিত এমন একাধিক কমপিউটারের সমষ্টি। প্রতিটি ডোমেইনের একটি স্বতন্ত্র নাম থাকে। ডোমেইনে যুক্ত হওয়ার জন্য আপনাকে ওই ডোমেইনের নাম জানতে হবে এবং ডোমেইনে অনুমোদিত একটি অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। উইন্ডোজ ৭-এর প্রফেশনাল, আল্টিমেট এবং এন্টারপ্রাইজ ভার্সন এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে খুব সহজে এবং নিরাপদে কমপিউটারগুলো ডোমেইনে যুক্ত হতে পারে।
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপ :
আমরা সবাই জানি, নেটওয়ার্ক ব্যবহারের ধরন ও বৈচিত্র্য ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক আবির্ভাবের সাথে সাথে বহুলাংশে পাল্টে গেছে। একই সাথে সেটআপ পদ্ধতিও অনেক সহজ হয়েছে। আধুনিক যেকোনো অপারেটিং সিস্টেম বিশেষ করে উইন্ডোজভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেমে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপ এবং একে অপারেশনালাইজ করার বিষয়টি যেকেউ রপ্ত করতে পারে। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক সেটআপ করার জন্য প্রয়োজন হবে যথাযথ ওয়্যারলেস ইক্যুইপমেন্ট। ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের উপযোগী কিছু ডিভাইস নিয়ে নিচে আলোকপাত করা হয়েছে :
ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ এবং মডেম : ডায়ালআপ সংযোগের সাথে তুলনা করলে ব্রডব্যান্ড হচ্ছে উচ্চ ডাটা ট্রান্সফার গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ ব্যবস্থা। ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন (ডিএসএল) এবং ক্যাবল হচ্ছে ব্রডব্যান্ড সংযোগের অন্যতম প্রধান দুটো উৎস। সাধারণত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) কোম্পানি ব্রডব্যান্ড সংযোগের জন্য অন্যতম প্রধান ডিভাইস ব্রডব্যান্ড মডেম সরবরাহ করে এবং তা আপনার অফিস বা বাসায় ইনস্টলের দায়িত্ব নিয়ে থাকে।
ওয়্যারলেস রাউটার :
খুব সংক্ষেপে বলা যায় রাউটার হচ্ছে আপনার নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেটের মধ্যে ডাটা বিনিময়কারী ডিভাইস। একটি ওয়্যারলেস রাউটারের মাধ্যমে আপনি রেডিও সিগন্যালের সাহায্যে কমপিউটারকে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে তারের কোনো ব্যবহার নেই। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ওয়্যারলেস রাউটারের প্রচলন থাকলেও আপনাকে ওই সব রাউটার বেছে নিতে হবে যেগুলো 802.11g এবং 802.11n ওয়্যারলেস টেকনোলজি সাপোর্ট করে।
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার :
আপনার কমপিউটারকে যদি ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করতে চান, তাহলে সে ক্ষেত্রে কমপিউটারে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার অবশ্যই থাকতে হবে। বর্তমানে বাজারে যেসব ল্যাপটপ পাওয়া যাচ্ছে তার প্রায় সবগুলোতেই ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার বিল্ট-ইন অবস্থায় থাকে। কমপিউটারে ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার রয়েছে কি না, তা জানার জন্য Control Panel-এর Device Manager-এ গিয়ে Network Adapters-এ ডাবল ক্লিক করুন। ওয়্যারলেস ফিচারসংবলিত নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার কমপিউটারে যে বিদ্যমান আছে তা অ্যাডাপ্টারের তালিকায় ‘wireless’ লেখাটি নিশ্চিত করবে।
বর্তমানে অনেকে ইউএসবি ওয়্যাললেস নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার ব্যবহার করেন, যা আকারে ছোট, সহজে কমপিউটারে ইনস্টল করা যায় এবং প্রয়োজনে একই অ্যাডাপ্টার একাধিক কমপিউটারে ব্যবহার করা যায়। এখানে মনে রাখতে হবে, ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টারের সাথে ওয়্যারলেস রাউটারের স্পেসিফিকেশনের যেন মিল থাকে এবং একে অপরের সাথে নির্বিঘ্নে যোগাযোগ করতে পারে।
ব্রডব্যান্ড (ডিএসএল বা ক্যাবল) সংযোগ সেটআপ পদ্ধতি :
ডিজিটাল সাবস্ক্রাইবার লাইন (ডিএসএল) বা ক্যাবলভিত্তিক ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপনের আগেই আপনাকে সংশ্লিষ্ট ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের (আইএসপি) সাথে যোগাযোগ করে একটি অ্যাকাউন্ট ওপেন করতে হবে। আইএসপির পরামর্শ অনুযায়ী আপনাকে আনুষঙ্গিক ডিভাইসগুলো যেমন- মডেম, রাউটার সংগ্রহ করতে হবে। যদি মডেম এবং রাউটার একই ডিভাইসে ইন্টিগ্রেটেড অবস্থায় থাকে, তাহলে ডিভাইস সেটআপের জন্য নিম্নরূপ পদ্ধতি অনুসরণ করুন :
০১. সর্বপ্রথম ডিভাইসটি ইলেকট্রিক লাইনে যুক্ত করুন।
০২. ডিভাইসের ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক (WAN) পোর্টটিতে ডিএসএলের ক্ষেত্রে ফোন কর্ড এবং ক্যাবলের ক্ষেত্রে ক্যাবল যুক্ত করুন। ফোন কর্ড বা ক্যাবলের অপর প্রান্ত ওয়াল জ্যাকে যুক্ত করুন।
০৩. ডিভাইসের LAN পোর্টে ইথারনেট ক্যাবলের এক প্রান্ত এবং যে কমপিউটারে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে চান তার নেটওয়ার্কিং পোর্টে অপর প্রান্ত যুক্ত করুন। ওয়্যারলেস ইন্টারনেট
সংযোগের ক্ষেত্রে এ ধাপটি বাদ দেবেন।
০৪. সংযোগ সম্পন্ন হওয়ার পর কমপিউটার Start বা Restart করুন।
০৫. এবার Network and Sharing Center-এ গিয়ে Setup a new connection or network অপশনে ক্লিক করুন। এরপর Connect to the Internet অপশনে ডাবল ক্লিক করুন।
০৬. সেটআপ সম্পন্ন করার জন্য উইজার্ডে প্রদর্শিত নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করুন।
মডেম এবং রাউটার পৃথক ডিভাইস হিসেবে থাকলে প্রথমে উভয় ডিভাইসে বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে হবে। এরপর ফোন কর্ড বা ক্যাবলের এক প্রান্ত মডেম এবং অপর প্রান্ত ওয়াল জ্যাকে যুক্ত করুন। ইথারনেট ক্যাবলের এক প্রান্ত মডেমে এবং অপর প্রান্ত রাউটারের WAN পোর্টে যুক্ত করতে হবে। অপর একটি ইথারনেট ক্যাবলের এক প্রান্ত রাউটারের LAN পোর্টে এবং অপর প্রান্ত কমপিউটারের নেটওয়ার্কিং পোর্টে যুক্ত করতে হবে।
ওয়্যারলেস রাউটার পজিশনিং :
ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হচ্ছে ওয়্যারলেস রাউটারকে যথাযথ স্থানে স্থাপন করা, যাতে করে রাউটার কোনো প্রকার প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই সিগন্যাল রিসিভ এবং ট্রান্সমিট করতে পারে। ওয়্যারলেস রাউটার স্থাপনের জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনায় আনতে হবে :
কেন্দ্রীয় অবস্থানে রাউটার স্থাপন :
বাসা বা অফিস, নেটওয়ার্কের স্থান যেটিই হোক না কেনো, ওয়্যারলেস রাউটারটিকে যথাসম্ভব কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করতে হবে। এতে করে পুরো নেটওয়ার্কে সিগন্যালের শক্তি বা মান সন্তোষজনক পর্যায়ে থাকবে।
কমপিউটার এবং রাউটারের মধ্যে বাধা সৃষ্টিকারী বস্ত্ত অপসারণ :
ওয়্যারলেস রাউটার এবং কমপিউটারের মধ্যে যদি ধাতব বস্ত্ত যেমন- ফাইল কেবিনেট, আলমিরা থাকে তাহলে সিগন্যাল দুর্বল হয়ে যায়। এ কারণে ওই সব বস্ত্ত রাউটার বা কমপিউটারের আশপাশে রাখা যাবে না। এ ছাড়া ছাদের বা দেয়ালের কাছাকাছি রাউটার স্থাপন করলে সিগন্যালের শক্তি কমে যায়।
সিগন্যাল ইন্টারফেরেন্স কমানো :
অনেক সময় দেখা যায় নেটওয়ার্ক স্থলে ব্যবহৃত মাইক্রোওয়েভ ও কর্ডলেস ফোন এর ফ্রিকোয়েন্সি ওয়্যারলেস রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সির সমান বা কাছাকাছি পর্যায়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ- 802.11g স্ট্যান্ডার্ডের ওয়্যারলেস রাউটার ২.৪ গিগাহার্টজ রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে এবং এই একই ফ্রিকোয়েন্সি মাইক্রোওয়েভ ও কর্ডলেস ফোনে ব্যবহার হয়। একই ফ্রিকোয়েন্সির সিগন্যাল ব্যবহারের কারণে ফোনে কথার বলার সময় সিগন্যাল ইন্টারফেরেন্স হয় এবং ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কের সিগন্যাল দুর্বল হয়ে পড়ে বা বাধাগ্রস্ত হয়।
উইন্ডোজ ৭ ভিত্তিক ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক স্থাপনের পূর্বশর্ত হিসেবে নেটয়ার্কিংয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট ডিভাইসগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। ডিভাইস সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেওয়ার পর এগুলো সেটআপ করতে হবে। হার্ডওয়্যার সংযোগ বা সেটআপ সম্পন্ন হলে এর সফটওয়্যার সেটিং বা কনফিগারেশন করে নেটওয়ার্ক চালু করতে হবে। উইন্ডোজ ৭-এ নেটওয়ার্ক সফটওয়্যার কনফিগারেশনের বিষয়টি পরে আলোচনা করা হবে।