অর্থনৈতিক কারণে আইরিশদের ভীনদেশে অভিবাসী হওয়া নতুন কিছু নয়। যখনই অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিয়েছে আইরিশরা দল বেধে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। তবে বর্তমান নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে বিদেশে পাড়ি দেয়া আগের মতন হয়তো এতটা সহজ হবেনা, বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ভ্রমণ করতে হবে।
যখনই দেশে সংকট দেখা দিয়েছে তখন আইরিশরা নিজেদের বাসস্থান, দেশ ফেলে অন্যদেশে প্রবাসী জীবন বেঁচে নিয়েছেন। বস্তুত আয়ারল্যান্ডের ইতিহাস ঘাটাঘাটি করলে দেখা যায় প্রবাস জীবন তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৮৪৫-১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে আয়ারল্যান্ডে যখন ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয় তখন ১ মিলিয়নেরও অধিক আইরিশ সর্বস্বান্ত হয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যতা থেকে মুক্তির আশায় বিভিন্ন দেশে অভিবাসী জীবন বেছে নিয়েছিলেন। এত পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা যখনই আইরিশ নাগরিকদের জন্য বিদেশ ভ্রমণ সহজ করা হয়েছে তখনই বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে তারা অভিবাসী জীবন বেছে নিয়েছেন, এতে করে অনেক পরিবারের সদস্যরা একে অন্যের কাছ থেকে বিছিন্ন হয়ে গেছেন। গত ২০০৮ সালে দেশে যখন অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় তখন ২০০৮ সালের এপ্রিলের তুলনায় ২০০৯ সালের এপ্রিলে আয়ারল্যান্ড থেকে গতবারের চেয়ে ৪০% বেশী লোক দেশত্যাগী হয়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন, সংখ্যার হিসাবে যা ৪৫,৩০০ থেকে ৬৫,১০০তে উন্নীত হয়। পরবর্তী ১২ মাসে অর্থাৎ এপ্রিল ২০০৯ থেকে এপ্রিল ২০১০ সালে এসে আরও ২৭০০ আইরিশ দেশ ত্যাগ করেন। ২০১১ সালে এসে ৪০ হাজার আইরিশ দেশ ত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে এসে আইরিশদের অভিবাসী হওয়ার হার হ্রাস পেয়ে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। গত আর্থিক মন্দার প্রভাবে আইরিশদের বিদেশমুখী প্রবণতা কাটিয়ে উঠতে ৫ বছর সময় লেগেছিল আর যারাই দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন তারা সবাই কর্মজীবী, বিদেশে কর্মসংস্থান নিয়েই তারা দেশান্তরী হয়েছেন। দেশ ত্যাগী এসব নাগরিকদের অধিকাংশই তরুণ। ২০১২ সালের পরিসংখ্যান সামনে নিয়ে আসলে দেখা যায় বিদেশে অভিবাসী হওয়া এসব নাগরিকদের মধ্যে ২৪-৪৪ বছর বয়সীদের হার ৩৯.৫%, ১৫-২৪ বছর বয়সীদের হার ৩৫.৮%। ২০১২ সালের এসব দেশত্যাগী নাগরিক যাদের বয়স ১৫-৪৪ বছর তাদের সংখ্যা সেই সময়ের মোট দেশত্যাগীর ৭৫.৩%।
এসব পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে আগামী দিনেও আইরিশ কর্মজীবী মানুষের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে, তবে কি কপাল খোলছে আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত অভিবাসন প্রত্যাশীদের? কর্মী সংকটে আগামী দিনের অর্থনৈতিক বেহাল দশার পুনঃগঠনে এসব অভিবাসন প্রত্যাশীরাই আয়ারল্যান্ডের রাজস্ব বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে যাচ্ছেন।
ওবায়দুর রহমান রুহেল
অনুবাদ করা হয়েছে আর টি ই ডট আই ই থেকে