আয়ারল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতি আশানরুপ পর্যায়ে না আশায় এখনই নিষেধাজ্ঞা উত্তোলন না করে আগামী ১৮ই মে, ২০২০ থেকে পর্যায়ক্রমে কিছুটা শিথিল করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী লিও ভারাতকার গতকাল ঘোষনা দিয়েছেন ১৮ই মে থেকে ধীরে ধীরে কয়েকটি পর্যায়ে নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেওয়া হবে।
লিও ভারাতকার আরোও বলেছেন,
"যদি ভাইরাসটি আশানুরুপ নিয়ন্ত্রণে থাকে তবেই নিষেধাজ্ঞাগুলো একটি ধাপ থেকে আরেকটি ধাপে যাবে অন্যথায় ভাইরাসটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরলে নিষেধাজ্ঞা সামনের ধাপে না গিয়ে পূর্বের ধাপে আবার ফিরে আসবে।"
আপনারা কেহ কেহ হয়তো Cocooning এবং Cocooners শব্দদ্বয়ের সাথে পরিচিত নন।
সংক্ষেপে Cocooning এবং Cocooners সম্পর্কে একটু ধারণা দেইঃ
কুকুনিং (Cocooning) বলতে কি বুঝায়?
বয়ষ্ক ব্যক্তিদের সামাজিক কার্যক্রম হ্রাস করতে অন্য কোন ব্যাক্তি কর্তৃক গৃহীত সহযোগিতার পদক্ষেপগুলোকেই কুকুনিং বলা হয়।
কুকুনার্স (Cocooners) কারা?
বয়স্ক ব্যাক্তি যারা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় (হার্ট ডিজিজ, ডায়বেটিস, কিডনি ডিজিজ, ক্যান্সার, স্বাশ কষ্ট ইত্যাদি) ভুগছেন এবং যাদের সেবার প্রয়োজন।
উল্লেখ্যঃ দীর্ঘ মেয়াদী রোগে আক্রান্ত যেকোন কোন কম বয়সী ব্যাক্তি কোভিড-১৯ এর কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন।
লিও ভারাতকার গতকাল শুক্রবার, সংবাদ সম্মেলনে, নিন্মের দুটি বিষয়ে আগামী মঙ্গলবার, ৫ই মে ২০২০ থেকে নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেনঃ
- শুধুমাত্র অনুশীলনের জন্য বাড়ী থেকে সর্বোচ্চ ৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বের হওয়া যাবে, যা পূর্বে ছিল ২ কিলোমিটার
- যে সকল ব্যাক্তি কুকুনার্স (Cocooners) অবস্থায় আছেন তারা অনুশীলনের এবং গাড়ী চালানোর জন্য বাড়ী থেকে বের হতে পারবে শুধুমাত্র এই শর্তে যদি তারা অন্যান্য মানুষের সাথে সমস্ত যোগাযোগ এড়িয়ে চলতে পারেন।
মিস্টার ভারাতকার আরো উল্লেখ করেনঃ
- সকল স্কুল নতুন শিক্ষাবর্ষে সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে খোলা হবে
- বহিরাঙ্গনের কর্মীরা (অর্থাৎ বাগান ও নির্মাণকর্মীরা) দুই সপ্তাহের মধ্যে কাজে ফিরতে পারবে
- খুচরা জিনিস ও যন্ত্রাংশের দোকান, যেমন হার্ডওয়্যার ও গার্ডেন সেন্টার ১৮ই মে থেকে খুলে দেওয়া হবে
- ১৮ই মে থেকে সাধারণ জনগন কম সংখ্যায় ছোট ছোট গ্রুপ আকারে সাক্ষাত করতে পারবে
লিও ভারাতকার সকলকে অনুরোধ করেন, যতক্ষন না পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাজারে আসছে, নিন্মের করণীয়গুলো অবশ্যই সকলকে চর্চা করে যেতে হবেঃ
- সাবান এবং পানি দিয়ে নিয়মিত আপনার হাত ধুতে হবে
- হাঁচি / কাশি দিচ্ছে এমন ব্যক্তির নিকট থেকে কমপক্ষে ১ মিটার অথবা ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে
- চোখ, নাক এবং মুখ স্পর্শ করা এড়িয়ে চলতে হবে।
- হাঁচি অথবা কাশি দেওয়ার সময় নাক এবং মুখ, কনুই বাঁকা করে অথবা টিস্যু দিয়ে ঢেকে নিতে হবে এবং তাৎক্ষনিকভাবে টিস্যুটিকে নির্ধারিত ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে
- সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং একান্ত প্রয়োজন না হলে ঘর থেকে বের না হওয়ার চেষ্টা করতে হবে
- কোভিড-১৯ দ্বারা আক্রান্ত হলে অবশ্যই নিজেই সকলের নিকট থেকে আলাদা (Self Isolation) করতে হবে
আইরিশ সরকারের অফিশিয়াল পোর্টাল www.gov.ie তে কোভিড-১৯ এর কারণে চলমান নিষেধাজ্ঞাগুলো ৫টি পর্যায়ে উত্তোলন করার একটি দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রতিটি ধাপে স্বতন্ত্র কিছু বিষয় রয়েছে। উক্ত বিষয়গুলোর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্রিয়াকলাপ শুরু করার জন্য ধীরে ধীরে সরকার কর্তৃক বিবেচনা করা হবে। এই মুহুর্তে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার বিষয়ে যা বলা হচ্ছে, তা শুধুই ভবিষ্যতবানী। নিষেধাজ্ঞা উত্তোলনের প্রতিটি ধাপ গভীরভাবে পর্যবেক্ষক করা হবে এবং আশনুরুপ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে একটি ধাপ থেকে আরেকটি ধাপে যাওয়া হবে এবং ন্যাশনাল পাবলিক হেলথ্ ইমারজেন্সীর (NPHE) উপদেশ অনুযায়ী সময় ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নিষেধাজ্ঞা তোলার পর্ব - ১ | সোমবার, ১৮ই মে, ২০২০
- সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার শর্তে (অর্থাৎ কমপক্ষে ২ মিটার দূরত্বে অবস্থান সাপেক্ষে) বিভিন্ন পরিবার থেকে সর্বাধিক ৪ জন বাড়ীর বাহিরে এক সাথে মিলিত হতে পারবেন
- স্বাস্থ্য কর্মীদের শিশুদের জন্য চাইল্ড কেয়ার খুলে দেওয়া
- বহিরাঙ্গনের কর্মী অর্থাৎ নির্মানকর্মী এবং বাগান দেখাশুনাকারী কর্মীরা কাজে যোগদান
- মার্চ মাসে নিষেধাজ্ঞার প্রথম পর্যায়ে বহিরাঙ্গনের যে সকল খুচরা বিক্রেতাদের দোকান খোলা ছিল তাদের দোকান খুলে দেওয়া, যেমন: চশমার দোকান (চোখের ডাক্তারদের দোকন)
- বহিরাঙ্গনের সুযোগ-সুবিধা, যেমন: গাড়ীর পাকিং স্পেস, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়ে ঘোড়া ফেরা ইত্যাদি এই শর্তে খুলে দেওয়া যেন একে অপরের সংস্পর্শে এসে চলাফেরা না করে এবং একে অপরের নিকট থেকে কমপক্ষে ২ মিটার দুরত্ব বজায় রাখে
- বহিরাঙ্গনের সাধারণ জনগনের খেলাধুলার সুযোগ সুবিধা, যেমন: ক্রিকেট খেলার পিচ, টেনিস কোর্ট, গল্ফ কোর্স ইত্যাদি খুলে দেওয়া সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার শর্তে
নিষেধাজ্ঞা তোলার পর্ব - ২ | সোমবার, ৮ই জুন, ২০২০
- পরিবার পরিদর্শন অনুমতি দান। পরিবারে কুকুনার্স (Cocooners) যারা আছেন তাদেরকে পরিদর্শণ করা যাবে যদি ফেইস মাস্ক, সুরক্ষা হাতমোজা এবং একে অপরের নিকট থেকে কমপক্ষে ২ মিটার দুরত্ব বজায় রাখে
- কর্মী এবং গ্রাহকদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ এবং সহায়তা দান
- সামাজিক দুরত্ব লক্ষ্য করার ভিত্তিতে ছোট ছোট খুচরা বিক্রয় কেন্দ্র এবং বাজার/বিপনি কেন্দ্র খুলে দেওয়া
- জনসাধরনের পাঠাগার উন্মুক্ত করে দেওয়া
নিষেধাজ্ঞা তোলার পর্ব - ৩ | সোমবার, ২৯শে জুন, ২০২০
- অল্প পরিসরে সামাজিক সমাবেশের অনুমতি প্রদান
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অপরিহার্য কর্মীদের, শিশুদের তত্ত্বাবধানের জন্য, শিশুরতত্ত্বাবধানস্থল (crèches), শিশুরতত্ত্বাবধানকারী এবং প্রাক বিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া
- যে সকল খুচরা দোকানের প্রবেশ পথ এবং বাহির হওয়ার পথ রাস্তায় এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দোকন নয় সেগুলো খুলে দেওয়া
- শিশুদের খেলার স্থান খুলে দেওয়া
- অংশগ্রহনকারীদের জন্য যে সকল ইনডোর খেলাধূলায় সামাজিক দুরত্ব বজায় ব্যবস্থা রয়েছে শুধুমাত্র সেগুলো খুলে দেওয়া
নিষেধাজ্ঞা তোলার পর্ব - ৪ | সোমবার, ২০শে জুলাই, ২০২০
- সকল কর্মীদের শিশুদের তত্ত্বাবধানের জন্য, শিশুরতত্ত্বাবধানস্থল (crèches), শিশুরতত্ত্বাবধানকারী এবং প্রাক বিদ্যালয় পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া
- কাজে ফিরে যাবেন ওই সকল কর্মীরা যারা বাড়িতে থেকে কাজ করতে পারছেন না
- সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা সেবা, যেমন: নাপিতের দোকান থেকে ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া
- জাদুঘর, গ্যালারী, মসজিদ, ইসলামিক কালচারাল সেন্টার, মন্দির ও গীর্জাসহ অন্যান্য প্রার্থণাস্থল খুলে দেওয়া
- সামাজিক দুরত্ব বজায় ও সীমিত সংখ্যক দর্শক এর উপস্থিতির শর্তে ফুটবল এবং গা (GAA) খেলার প্রতিযোগিতায় অনুমতি দান
নিষেধাজ্ঞা তোলার পর্ব - ৫ | সোমবার, ১০শে আগষ্ট, ২০২০
- বৃহত্তর সামাজিক সমাবেশের অনুমতি প্রদান
- সকলের কাজে যোগদান
- পর্যায়ক্রমে, ২০২০/২০২১ শিক্ষাবর্ষের শুরুতে, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং থার্ড লেভেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম শুরু
- খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ খুচরা পরিষেবাগুলিতে বিধিনিষেধ আরো সহজ করা
নিষেধাজ্ঞার ৫ম ধাপটির পরও আমাদেরকে অবশ্যই কোভিড-১৯ এর করণীয়গুলো চর্চা করে যেতে হবে। এখন পর্যন্ত করোণা ভাইরাসের কোন প্রতিষোধক পাওয়া যায়নি যদিও সারা পৃথিবীব্যাপী প্রতিষোধক তৈরির উপর কাজ চলছে। আগামী দশ থেকে বিশ মাসের মধ্যে করোনার প্রতিষোধক বাজারে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
নাসির আহামেদ
প্রকাশক ও সম্পাদক