যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অনলাইন টিভি চ্যানেল "টিভি-৩ বাংলা টেলিভিশন" -এ গত মঙ্গলবার (রাত ১০ঃ৩০ থেকে ১১ঃ৩০) ডাঃ মনজুর শওকতের উপস্থাপনায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শমূলক লাইভ অনুষ্ঠান অনলাইনে দর্শকদের ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।

উক্ত লাইভ অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশী কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, ডাবলিনের জেমস কননোলী হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন। অনুষ্টানের উপস্থাপক ডাঃ মনজুর শওকত করোনা

পরিস্থিতিতে জনমনে সৃষ্ট বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন নির্দেশিকা নিয়ে যে বিশ্লেষণধর্মী প্রশ্নগুলো করেন ডাঃ মুসাব্বির হোসাইন অত্যন্ত সহজ সরল ও প্রাঞ্জল ভাষায় সেগুলোর উত্তর দেন।

নিম্নে ডাঃ মুসাব্বির হোসাইনকে করা বিভিন্ন প্রশ্নের চুম্বকাংশ তুলে ধরা হলঃ

প্রশ্ন ১ঃ (ডাঃ মনজুর শওকত)
আপনিতো অনেক করোনা রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছেন এবং এখনো পর্যন্ত দিয়ে যাচ্ছেন, যেসব করোনা রোগী আপনাদের কাছে আসছে তাদের ক্ষেত্রে সচরাচর কি উপসর্গ আপনি লক্ষ্য করেছেন?

উত্তরঃ (ডাঃ মোসাব্বির হোসাইন)
দেখুন এই মুহূর্তে আমরা অনেকেই জানি করোনার ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ লোকেরই কোন উপসর্গ থাকেনা, অনেক সময় আমাদের কাছে কিছু রোগী জ্বর নিয়ে আসতে পারে, গলা ব্যথা, গা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট, কাশি নিয়েও আসতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিভিন্ন রোগী আসে তাদের অন্য কোন উপসর্গই নেই শুধু গন্ধ শুকার সক্ষমতা লোপ পেয়েছে কিংবা বমিবমি ভাব করছে আবার অনেক ক্ষেত্রে ডায়েরিয়া নিয়েও রোগী আসতে পারে। তবে সময়ের সাথে সাথে কভিড-১৯ এর উপসর্গের ধরণ পাল্টেছে।

প্রশ্ন ২ঃ (ডাঃ মনজুর শওকত)
ডায়েরিয়ার উপসর্গ নিয়ে রোগী আসলে কি আপনারা করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন?

উত্তরঃ (ডাঃ মোসাব্বির হোসাইন)
ডায়েরিয়ার সাথে অন্য দুই একটি উপসর্গের উপস্থিতি যেমন কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকলে আমরা করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দিয়ে থাকি।

প্রশ্ন ৩ঃ (ডাঃ মনজুর শওকত)
করোনা ভাইরাস থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে মাস্ক বা মুখোশ ব্যবহার করার প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

উত্তরঃ (ডাঃ মোসাব্বির হোসাইন)
মাস্ক পরিধান করা খুবই যুক্তিযুক্ত যেহেতু আক্রান্ত ব্যক্তির হাচি কাশি থেকে নির্গত জলকণা সুস্থ ব্যক্তির মুখের সংস্পর্শে আসলে তিনি আক্রান্ত হতে পারেন তাই মাস্ক পরিধান করা উত্তম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনায় প্রথমে মাস্ক পরিধান করার কথা বলা হয়নি তবে বর্তমানে মাস্ক পরিধান করার কথা বলা হয়েছে। তাছাড়া আমরা দেখেছি বিভিন্ন দেশ যেমন দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, সিঙ্গাপুর মাস্ক ব্যবহার করে করোনা মোকাবিলায় সাফল্য দেখিয়েছে। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ যুক্তরাজ্যে আগস্টের মাঝামাঝি সময় থেকে মাস্ক পরিধান না করে যারা গণপরিবহনে চলাফেরা করেছেন তাদেরকে জরিমানা গুণতে হয়েছে।

প্রশ্ন ৪ঃ (ডাঃ মনজুর শওকত)
বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?

উত্তরঃ (ডাঃ মোসাব্বির হোসাইন)
একটি দেশের লকডাউনে যাবার আগে সে দেশের ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময় বা পিক টাইম নির্ধারণ করা হয় এছাড়াও মৃত্যু হার, সংকটাপন্ন রোগীর সংখ্যা ইত্যাদি পরিসংখ্যানকে সামনে রেখেই কিন্তু লকডাউন করা হয়, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য বাংলাদেশের কোন গণমাধ্যমে আমি দেখিনি যে আমাদের দেশে করোনার পিক টাইম কখন / কোন মাসে। ইংল্যান্ড কিংবা আয়ারল্যান্ডের পিক টাইম কিন্তু আমরা জানি কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা জানা সম্ভব হয়নি।

প্রশ্ন ৫ঃ (ডাঃ মনজুর শওকত)
প্লাজমা থেরাপি নিয়ে আপনার মতামত কি?

উত্তরঃ (ডাঃ মোসাব্বির হোসাইন)
প্লাজমা থেরাপি বর্তমানের একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন। আমাদের দেহে যখন কোন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস আক্রমণ করে কোন রোগ সংক্রমণের চেষ্টা করে তখন প্রাকৃতিক ভাবে আমাদের দেহের কোষগুলো এসব ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য একধরনের রসায়নিক রস নির্গত করে যাকে বলা হয় রক্তরস, প্লাজমা বা এন্টিবডি। প্লাজমা থেরাপি যুগ যুগ ধরে চলে আসছে, সোয়াইন ফ্লু, ব্লাড ফ্লু, সার্স এসব রোগের ক্ষেত্রে হয়তো প্লাজমা থেরাপি আশানুরূপ সাফল্য এনে দিতে পারেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা হচ্ছে প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা যেতে পারে তবে তা পরীক্ষামূলকভাবে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষামূলক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রায় ১১ - ১২ হাজার রোগী সুস্থ হয়েছেন তারমধ্যে প্লাজা থেরাপিও ছিল অন্যতম। ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা প্লাজমা থেরাপি নিতে পারেন এবং যিনি নিবেন তাকে রোগাক্রান্ত হতে হবে অর্থাৎ তিনি আগে আক্রান্ত ছিলেন এখন সুস্থ। যিনি দাতা হবেন অর্থাৎ প্লাজমা দিবেন, তার রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে রোগমুক্ত আছেন। একজন প্লাজমা দাতা ৮০০ মিলিলিটার প্লাজমা দাঁন করতে পারবেন। একজন গ্রহীতা একসাথে ২০০ মিলিলিটার পর্যন্ত প্লাজমা গ্রহণ করতে পারেন এবং এক সপ্তাহ পর আবার ২০০ মিলিলিটার প্লাজমা গ্রহণ করতে পারেণ। তবে বাংলাদেশে যত্রতত্রভাবে প্লাজমা থেরাপি নেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

ওবায়দুর রহমান রুহেল
বার্তা সম্পাদক