অনেকেই বাসায় নিজে নিজে অথবা জিমে ব্যায়াম করেন। প্রতিটি কাজেরই সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। খাওয়া দাওয়ার যেমন সঠিক নিয়ম আছে, তেমনি ব্যায়ামেরও অনেক নিয়ম কানুন আছে, যা জেনে বুঝে করা খুব দরকার। ব্যায়াম যদি ঠিক মত না করা হয়, তবে শারীরিক নানান রকম সমস্যা যেমন: মাসেল পুল, ইনজুরি, ইত্যাদি হতে পারে। জিমে যারা যান, তারা হয়ত সঠিক নির্দেশনা পান, কিন্তু যারা বাড়িতে ব্যায়াম করেন, তারা হয়ত না জেনে অনেক ভুল ভাবে ব্যায়াম করছেন।  নিচে আপনাদের জন্য ব্যায়ামের কিছু সাধারণ নিয়ম কানুন দেয়া হলো:
 
- আপনি কেন ব্যায়াম করবেন সেটা আগে জানুন, প্রয়োজনে ডাক্তার অথবা জিম ট্রেইনারের কাছ থেকে জানুন কিভাবে, কত টুকু করবেন।
- শারীরিক ক্ষমতা ও বয়স অনুযায়ী ব্যায়াম করবেন, যেমন: ৪০ বছর বয়সের ব্যাক্তি সব ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন না, ব্যাক পেইন, বাতের  সমস্যা থাকলে সাবধানে ব্যায়াম  করতে হবে। গর্ভবতী মহিলারাও সব ধরনের ব্যায়াম করতে পারবেন না।

- কোনো রকম শারীরিক সমস্যা না থাকলে, নিজেই ব্যায়াম শুরু করতে পারেন।

- ব্যায়াম কি ভাবে শুরু করবেন?

- ব্যায়াম এর শুরুতেই আপনার ওজন, উচ্চতা ইত্যাদি লিখে রাখুন, কেমন উন্নতি হচ্ছে তা প্রতিমাসে খেয়াল করুন।

- ব্যায়ামের সময় আরামদায়ক পোশাক, যেমন: গেঞ্জি, কেডস পরাই ভালো। সাথে রাখবেন তোয়ালে, পানির বোতল।

- জুতা বা কেডস কার্ডিও ব্যায়ামের জন্য খুব দরকারী ও গুরুত্ব্যপূর্ণ। ভালো মানের কেডস না ব্যাবহার করলে পায়ে ব্যাথা, মাথা ব্যাথা এমনকি মেরুদন্ডে ব্যাথাও হতে পারে।

- অবশ্যই কার্ডিও করার সময় একটু পর পর এক চুমুক পানি খাবেন, এটি আপনাকে পানিশুন্যতা এর থেকে রক্ষা করবে। একবারে বেশি পানি খাবেন না, তাহলে সেই পানি সরাসরি আপনার ফুসফুসে চলে যাবে, water intoxication,  hyponatremia (রক্তে সোডিয়াম-এর স্বল্পতা), appendicitis  ও হতে পারে।

- ব্যায়ামের সময় পূর্ণ মনোযোগ ব্যায়াম করার দিকে থাকবে, বই পড়তে পড়তে ব্যায়াম করবেন না, এতে আপনার ব্যায়াম সঠিক হবে না।

- ব্যায়ামের সময় আপনার posture এর দিকে লক্ষ্য রাখুন, উল্টা পাল্টা posture এ ব্যায়ামের ফলে শারীরিক অসুবিধা বা আপনার দেহের গঠন নষ্ট হতে পারে।

- প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় ব্যায়াম করবেন।

- ব্যায়াম নিয়মিত করবেন। একদিন করলেন, আবার ১০ দিন পরে করলে, সেই ব্যায়াম কোনো কাজে আসবে না।

- ব্যায়াম করবেন একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী। কোন দিন কোন ধরনের ব্যায়াম করবেন, কত টুকু তা আগেই ঠিক করে নিন, সেটা মেনে চলুন।

- ওয়ার্ম আপ আর কুল ডাউন ব্যায়ামের খুব গুরুত্ব্য পূর্ণ অংশ। যেমন: ওয়ার্ম আপ না করে আপনি যদি দৌড়ানো শুরু করেন, তাহলে আপনার হার্ট ফেইল হতে পারে। যদি  ওয়ার্ম আপ না করে পেটের ব্যায়াম করেন, তাহলে কোনো লাভ নেই। আমার প্রিয় ট্রেইনার -এর মতে ওয়ার্ম আপ হচ্ছে ব্যায়ামের সবচাইতে গুরুত্ব্য পূর্ণ অংশ। ওয়ার্ম আপ বলতে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি , মাসেলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ইত্যাদি বুঝায়। স্বাভাবিক অবস্থায় আমাদের শরীরের তাপমাত্রা যে অবস্থায় থাকে, সে অবস্হা থেকে তাপমাত্রা ও হার্ট রেট বাড়ানোকে ওয়ার্ম আপ বলা হয়। ওয়ার্ম আপ করবেন একদম শরীরচর্চার শুরুতে। প্রথমে ধীরে ধীরে হাটুন, দুই মিনিট পরে স্পিড বাড়ান, তারপর জগিং করুন। ৫ মিনিট হাটুন, তারপর ৫ মিনিট কমপক্ষে জগিং করুন। এভাবে আপনার শরীর যখন ঘামবে তখন বুঝবেন ওয়ার্ম আপ হয়েছে। তখন running, jogging, পেটের ব্যায়াম, stretching, weight training ইত্যাদি করা যাবে। কমপক্ষে ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করলে ভালো।

- আস্তে ধীরে কার্ডিও শুরু করুন।হঠাত করে স্পিড বাড়িয়ে দিবেন না।

- কার্ডিও করতে করতে হঠাত বন্ধ করে দিবেন না, কার্ডিও শেষে যাতে আপনার heart rate, body temperature নরমাল হয় তাই, আস্তে আস্তে কার্ডিও শেষে কুল ডাউন ও stretching করুন।

- ব্যায়ামের ঠিক আগে, পরে কিছু খাবেন না, তাহলে সেটা হজম হবে না। ব্যায়ামের দুই ঘন্টা আগে এবং এক ঘন্টা পরে কিছু খাওয়া যাবে না।

- ব্যায়াম করার সময় মাঝে মাঝে, অথবা যখন থামবেন, তখন শ্বাস নিবেন ও ছাড়বেন। এতে শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক হয়।

- মাঝে মাঝে ব্যায়ামের  রুটিন পরিবর্তন করলে ভালো ফল পাবেন, কারণ এক ঘেয়ে নিয়মে আপনার শরীর অভ্যস্ত হলে, সেটা আর কাজে লাগবে না।

- সম্ভব হলে নতুন ধরনের ব্যায়াম শুরু করতে পারেন, এতে আপনার ব্যায়ামের একঘেয়েমি কাটবে, নতুন  ব্যায়াম শরীরে কাজেও লাগবে।

- ব্যায়ামের সময় পুরা শরীর টিকে কাজে লাগান, যেমন: হাটার বা দৌড়ানোর  সময় হাত দুটিকে কনুই ভেঙ্গে সামনে পেছনে  নাড়ান। এতে আপনার ঘাড়, হাতের ও ব্যায়াম হবে।

- ব্যায়াম  করতে করতে বেশি ক্লান্তি লাগলে অথবা খুব খারাপ লাগলে বন্ধ করে দিন। জোর করে করবেন না।

- মন খারাপ করে, ব্যায়াম করতে আলসেমি লাগে,ভালো লাগে না ইত্যাদি মানসিকতা নিয়ে ব্যায়াম করলে কোনো লাভ হবে না, আনন্দের সাথে মজা করে ব্যায়াম করুন।

- যারা weight training করেন, তারা কতটুকু weight নিবেন তা জেনে বুঝে করুন। posture ঠিক রেখে নিয়ে weight (dumbbell etc.) ব্যায়াম করুন। Weight training শুরু করবেন ব্যায়াম শুরু করার ১/২ সপ্তাহ পরে।

- অতিরিক্ত সময় ধরে (যেমন তিন, চার ঘন্টা) ব্যায়াম করবেন না, এতে হিতে বিপরীত হবে।

- ব্যায়াম করার সময় ব্যাথা পেলে অথবা মাসেল পুল হলে সাথে সাথে ব্যায়াম বন্ধ করে দিন, ডাক্তার অথবা physiotherapist দেখান।

- ঘুমানোর চার ঘন্টা আগে আর কার্ডিও ব্যায়াম না করাই ভালো। ঘুমানোর আগে যদি ব্যায়াম করতে হয়, তাহলে একমাত্র হালকা yoga করতে পারেন।

- জিমের প্রতিটি machine ও instrument এর ব্যাবহারের সময় কিভাবে করবেন তা জেনে বুঝে করবেন। তা নাহলে মাসেল পুল ও ইনজুরি হতে পারে।

- ব্যায়ামের শেষে shower নিলে ফ্রেশ লাগবে।

আপনার প্রতিদিনের  ব্যায়াম আনন্দময় হোক এই কামনায় শেষ করছি।

কাজী চন্দ্রিমা রহমান - ঢাকা বাংলাদেশ 
তথ্যসূত্র: ফিটনেসবিডি ডট কম