প্রিয় পাঠক, সালাম নিবেন। সবার রোজা কেমন গেলো? নিশ্চয়ই ভালো। সবাই নিশ্চয়ই ঈদের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত? ঈদে যতই আনন্দে মেতে থাকুন না কেন, আপনার ও আপনার পরিবারের সবার শারীরিক ফিটনেসের দিকে খেয়াল রাখুন।

কারণ ফিটনেস ধরে রাখা বা সুস্থ্য থাকাতেই আনন্দ, বেশি খাবার খেয়ে অসুস্থ্য হওয়াতে কোনো আনন্দ নেই। ঈদে অনেক অনেক খাওয়ার আয়োজন করা হয় বা খাওয়া হয়েই যায়। তাই আমাদের উচিত সেই অতিরিক্ত খাওয়া থেকে দূর থাকা, অথবা শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করে সেই অতিরিক্ত ক্যালরি খরচ করা।

তাছাড়া কি কি করলে বা খেলে হজম ভালো হয়, কোন খাবার গুলো এড়িয়ে চলা বা পরিমিত পরিমানে খাওয়া উচিত, সেই সব বিষয়েও খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া আরেকটি বিষয় অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, সারা বছর অনেকেই কষ্ট করে ওজন কমান, কিন্তু ঈদের উত্সবে ওজন বাড়িয়ে ফেলেন। অথবা অনেকে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।

এই ক্ষেত্রেও সব সচেতনতাও আপনারই হাতে এবং সেভাবেই জেনে বুঝে, মেনে চলতে হবে। তাছাড়া সারা মাস রোজা রেখে আমাদের শরীর থাকে অন্য রকম, হঠাত করে ঈদে অনেক বেশি খাবার গ্রহনের ফলে, নানান রকম শরীরিক সমস্যা হতে পারে।

কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঈদের স্বাস্হ্য টিপস আপনাদের জন্য দিলাম:

  • ঈদের তিন দিন আগে থেকেই ও ঈদ উত্সব চলা পর্যন্ত প্রচুর পানি পান করুন বা পানি পান করা বাড়িয়ে দিন।
  • গুরুপাক খাবার খেলে প্রচুর পানি পান করুন। কারণ পানি খাবার হজমে সহায়তা করার পাশাপাশি আপনাকে সতেজও রাখে। তাই যেখানেই যান না কেন, একটু কষ্ট করে আপনার সাথে পানি রাখুন। বারে বারে পানি পান করুন।
  • প্রচুর আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন: শাক-সবজি, ফল, পূর্ণ শস্য (লাল আটা) ইত্যাদি।
  • শরীরকে সচল রাখুন। ঈদের ছুটিতে একেবারে অলস হয়ে যাবেন না। কারণ সচল শরীর খাওয়া হজমে সহায়ক।
  • আপনার ব্যায়াম ঈদের ছুটিতেও যতটুকু পারুন চালিয়ে যান, আর তা কিভাবে ও কখন করবেন তা আপনাকেই বের করে নিতে হবে।
  • তাছাড়াও বুক ডন/পুশ-আপ দিন, ফ্রি হ্যান্ড পেটের ব্যায়াম করে নিন, যোগ ব্যায়াম করুন, ব্যাস আর কি লাগে?
  • কোনো ভাবেই একবারে অতিরিক্ত খাবার খাবেন না, বরং প্রতিটি খাবার ও প্রতি বেলার খাবার খাবেন পরিমিত পরিমানে। এটি কিন্তু একেবারেই নিজের অভ্যাসের ব্যাপার।
  • খুব বেশি গুরুপাক খাবার, তৈলাক্ত ও তেলে ভাজা খাবার, লবনাক্ত, চিনিযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো বা বেশি না খাওয়া ভালো।
  • যার যার শারীরিক চাহিদা, বয়স, ক্যালরির চাহিদা, শারীরিক সমস্যা, যেমন (ডায়বেটিস, প্রেসার, ওজনের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ইত্তাদি) বিবেচনা করে খাবার গ্রহণ করা উচিত।

মানসিক ফিটনেস
প্রিয় পাঠক, এগুলো ছিলো শারীরিক ফিটনেস সম্পর্কিত টিপস। আমাদের কিন্তু মানসিক ফিটনেসও দরকার। কারণ, ফিটনেস বলতে শারীরিক ও মানসিক দুটোই বোঝায়। মানসিক ফিটনেস হয়তো আমরা অনেকেই কর্মব্যাস্ত জীবনে অর্জন করতে পারি না। তাই এই ঈদের ছুটিতে সেটা রপ্ত/শুরু করা যেতে পারে। যেমন:

  • ঈদের ছুটিতে কোনো নির্জন জায়গায় যেয়ে, মেডিটেশন/ধ্যান/ আত্ম-উন্নয়ন করা যেতে পারে।
  • নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো কি, তা খুঁজে বের করা ও সেগুলো কিভাবে দূর করা যায়, তা চিন্তা করা।
  • নিজেকে নিজে বোঝানো যেতে পারে যে: কি করলে নিজের সব দিকে ভালো হতে পারে, বা আপনার নিজের চারিত্রিক ও অন্যান্য দিকে কি কি উন্নয়ন করা উচিত ইত্যাদি।
  • সমাজ ও দেশের প্রতি আপনার কি কি করণীয় তা চিন্তা করা ও কি ভাবে তা করা যায় তার উপায় চিন্তা করা। কারণ, অন্যের উপকারে কিন্তু মন প্রসারিত হয়, মন ভালো হয়, ও শান্তি লাগে। যেমন: কোনো গরিব, দুখী মানুষকে আমরা সাহায্য করতে পারি ইত্যাদি।
  • সবার প্রতি আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন ও সবাইকে ভালোবাসুন।

সবাইকে অনেক অনেক ঈদের শুভেচ্ছা ও ঈদ মুবারক। আপনার বন্ধু ও পরিবারের সবার জন্য দোয়া করার পাশাপাশি ফিটনেস বাংলাদেশের জন্যও দোয়া করতে ভুলবেন না।

ঈদে সবাই সুস্থ্য ও সুন্দর থাকুন। আল্লাহ হাফিজ।

কাজী চন্দ্রিমা রহমান, ঢাকা বাংলাদেশ
তথ্যসূত্র: ফিটনেসবিডি.কম