রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ইমিউন সিস্টেমের কারণে জীবাণু আক্রমণ করতে পারে না। ইমিউন সিস্টেম রোগীদের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে। কিন্তু ইমিউন সিস্টেমের সঙ্গে মানুষের জীবনযাপন পদ্ধতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিত্সাবিদ্যা বিভাগের চিকিত্সক লি বোক বলেছেন, "বহু বছরের গবেষণার থেকে জানা গেছে, সহজ-সরল জীবন যাপন করলে সুস্থ ও আনন্দময় জীবন পাওয়া যায়।"
আচ্ছা প্রিয় শ্রোতা, আজকের এ পর্বে ইমিউন সিস্টেম উন্নয়নের জন্য ১০টি টিপস জানাবো আপনাদেরকে।
এক: বন্ধুর সঙ্গে বেশি সময় কাটানো
বন্ধুর সঙ্গে থাকলে মানুষের ইমিউন সিস্টেম সুস্থ অবস্থায় থাকে। এ তত্ত্ব প্রমাণে প্যারিসের স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকরা এক পরীক্ষা চালিয়েছেন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের জীবাণুর সংস্পর্শে আনার পর তাদের সামাজিক যোগাযোগের ওপর নজর রাখা হয়। গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও সহকর্মীদের সঙ্গে বেশি সময় থাকলে ঠান্ডা লাগার সম্ভবনা কম। একই সঙ্গে আদর এবং আলিঙ্গনে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়।
দুই: পছন্দের সংগীত উপভোগ
সংগীত শুনলে ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। কিন্তু নিজের পছন্দের সংগীত শুনতে হবে। ভালো সংগীত সুস্বাদু খাবারের মতো ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে পারে।
তিন: গোলমাল কমানো
গোলমাল মানুষের শ্রবণ ইন্দ্রীয়ের ক্ষতি সাধনের পাশাপাশি পেশি উত্তেজনা এবং হৃত্স্পন্দন বাড়ায়। দীর্ঘকাল এ অবস্থা থাকলে রক্তচাপ ও ইমিউন সিস্টেমের ওপর তার খারাপ প্রভাব পড়ে। সেজন্য স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য গোলমাল এড়ানোর চেষ্টা চালাতে হয়।
চার: ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ
জীবনবোধ ও অনুভূতির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে ইমিউন সিস্টেমের। সেজন্য আমাদের সবসময় ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা উচিত। যুক্তরাষ্ট্রের একটি ক্লিনিকের গবেষকরা আবিস্কার করেছেন যে, যৌবনে যারা ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, তাদের আয়ু অন্যদের চেয়ে ১২ বছর বেশি হয়। সম্প্রতি পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, নেতিবাচক ও বিষণ্ণ মুডে থাকলে হেপাটাইটিস ভাইরাস প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।
পাঁচ: ডায়েট
কোনো পুষ্টির অভাব হলে রোগে সহজে আক্রমণ করতে পারে। ক্ষুধা লাগলে শরীরের এপিনফ্রাইন বেশি নিসৃত হয়। একজন মানুষের শরীরের ওজন প্রতি সপ্তাহে ৪২৫ গ্রাম কমলে বাইরের ভাইরাসের আক্রমণ প্রতিরোধ দক্ষতা দুর্বল হয়। সেজন্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, যথোপুক্তভাবে ডায়েট নিলে এবং ফল, সবজি, জুস ও বিশুদ্ধ পানি বেশি করে খেলে ইমিউন সিস্টেম উন্নত হয়।
ছয়: উল্লাস করা
রাগ ও দুঃখ স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। কিন্তু উল্লাস ও আনন্দ স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। বিশেষ করে মানুষ যখন প্রবলভাবে উল্লসিত হয়, তখন তার ইমিউন সিস্টেমের কোষ আরও সক্রিয় হয়। এছাড়া হাসিরস সংবহন, রক্তচাপ ও পাচনতন্ত্রসহ অনেক ক্ষেত্রে তা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।
সাত: মস্তিষ্কের অধিক ব্যবহার
মস্তিস্ক সক্রিয় রাখলে ইমিউন সিস্টেম উন্নত হয়। ক্যালিফর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মারিয়ার গবেষণা অনুযায়ী, তাসের ব্রিজ খেলা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করার জন্য সহায়ক। তার মতে, যে কোনো চিন্তাশীল কাজ ইমিউন সিস্টেমের উন্নয়নে সহায়ক।
আট: শরীরচর্চা
নিয়মিত শরীরচর্চা করলে ইমিউন সিস্টেম উন্নত হয়। শরীরচর্চা হ্রদযন্ত্রের ওপর চাপ কমানোর পাশাপাশি মানসিক চাপ কমাতেও সাহায্য করে। কিন্তু শরীরচর্চা সঠিকভাবে করা উচিত। শরীরের সহন ক্ষমতার অতিরিক্ত চর্চা করা ঠিক না।
নয়: উপযুক্ত বিশ্রাম
চাপের কারণে শরীরে খারাপ উপাদান সৃষ্টি হয়। চাপে থাকা মানুষ সহজে রোগে আক্রান্ত হয়। সেজন্য চাপ কমাতে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত্।
দশ: বাতি বন্ধ করা
অন্ধকারে শরীরে মেলাটোনিন সৃষ্টি হয়। এ মেলাটোনিন ইমিউন সিস্টেমের উন্নতির জন্য সহায়ক। কিন্তু কম ঘুম ও রাতে দীর্ঘ সময় আলো জ্বালালে এ মেলাটোনিন বেশি সৃষ্টি হয়। সম্প্রতি বেশ কয়েকটি গবেষণা থেকে জানা গেছে, রাতে কাজ করে এমন নারীদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৬০ শতাংশ। সেজন্য ঘুমানোর সময় বাতি জ্বালিয়ে না রাখা ভালো।
অনলাইন ডেস্ক