ব্রিটেনে শিক্ষা ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের হাজার হাজার শিক্ষার্থী পড়াশুনা করতে পারছে না। ডেইলী মেইলে অন লাইনের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অন ফিস নামে একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে উচ্চ শিক্ষার খরচ তিন দফা বেড়ে যাওয়ায় চাহিদা থাকার পরও নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমছে। 

ইংল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর সর্বোচ্চ খরচ হয় ৯,০০০ ইউরো; যার কোনো শিক্ষার্থী বা মধ্যবিত্ত কোনো অভিভাবকের পক্ষে যোগানো কঠিন। শিক্ষার এই উচ্চ ব্যয় যোগাতে অনেকে মাদক ব্যবসা বা দেহ ব্যবসার মত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, গত দুই বছরে উচ্চশিক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। একই সময়ে ১৮ ও ১৯ বছর বয়সের শিক্ষার্থীদের আবেদন কমেছে ৭ শতাংশ। ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২১ হাজার ৪৪৮ জন। চলতি বছর তা নেমে এসেছে ৩লাখ ৮৪ হাজার ১৭০ জনে। অর্থাৎ গত বছরের তুলনায় এ সংখ্যা ৩৭ হাজার ২৭৮টি কম। ২০১০ সালে ১৮ থেকে ১৯ বছর বয়সী আবেদনকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিলো ২ লাখা ৯৮ হাজার ১৫৫ জন। এ বছর তা কমে দাঁড়িয়েছে ২ লখ ৭৬ হাজার ৬২৯ জনে। অর্থাৎ ৭ দশমিক ২ শতাংশে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনে তরুণের সংখ্যা কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে বিষয়টি এমন নয়। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালেও কমেছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। যুক্তরাজ্যে বিশেষ করে স্কটল্যান্ড এবং ওয়েলসে শিক্ষার্থী ঝড়ে পড়ার এ প্রবণতা নেই। স্কটল্যান্ডে বরং উচ্চশিক্ষায় আবেদনকারীর সংখ্যা শতকরা ১ ভাগ এবং ওয়েলসে শূন্য দশমিক ৩ ভাগ বেড়েছে। আবার উত্তর আয়ারল্যান্ডের অবস্থা অনেকটা ব্রিটেনের মত। সেখানে আবেদনকারীর সংখ্যা কমেছে শূন্য দশমিক ৮ ভাগ।

আবার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি অখ্যাত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও তাদের টিউশন ফি বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে শিক্ষা বৃত্তি যোগাড় করা সম্ভব না হওয়ায় তাদের ঋণ করতে হচ্ছে যা তাদের ও অভিভাবকদের জীবন যাত্রায় সমস্যা তৈরি করছে। নিম্নবিত্ত একটি পরিবার যাদের সদস্য সংখ্যা অন্তত পাঁচ জন এবং তাদের বছরে পনের হাজার পাউন্ডের বেশি আয় করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। এমন একটি পরিবারের একজন ছাত্র তিরিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার পরও সে জানেনা আদৌ তার পক্ষে শিক্ষা অর্জন করা সম্ভব হবে কিনা। যে সব পরিবার বছরে তিরিশ হাজার পাউন্ড আয় করছে তাদের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা চালিয়ে যেতে পারবে কিনা সে নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তবে পঞ্চাশ থেকে পঁচাত্তর হাজার পাউন্ড আয় রয়েছে বছরে এমন পরিবারের ছেলে মেয়েরা শিক্ষা চালিয়ে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অন ফিস’এর চেয়ারম্যান উইল হাটন বলেন, ভাল একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী অর্জন করা সত্যিই খুবই ব্যয়বহুল ও কঠিন হয়ে গেছে। শিক্ষা এখন রীতিমত বিনিয়োগের ব্যাপার। ন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ স্টুডেন্টের প্রেসিডেন্ট লিয়াম বার্ণস বলেন, আগামী সপ্তাহে এ’ লেভেল পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হবে, কিন্তু আমরা উদ্বেগ করছি তাদের জন্যে যারা পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে এসেছে।

অনলাইন ডেস্ক