বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভালো মানের শিক্ষক থাকলেও তাদের পড়ানোর পদ্ধতি নিয়ে সমস্যা রয়ে গেছে এখনও৷ সেই সমস্যা সমাধানে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন৷ সূত্র ডয়েচ ভেলে।
ছাত্র-শিক্ষক দূরত্ব
দেশের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্লাসরুমে গেলে দেখা যায় সেই বহু পুরনো দৃশ্য৷ শিক্ষক পড়াচ্ছেন, লিখছেন ব্ল্যাকবোর্ডে আর ছাত্রছাত্রীরা তা শুনছেন আর নোট নিচ্ছেন৷ প্রায় পুরোটা সময় শিক্ষকই কথা বলে যান আর শিক্ষার্থীরা শুনে যান৷ অথচ উন্নত দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কিন্তু দেখা যায় ভিন্ন দৃশ্য৷ সেখানে ক্লাসরুম অনেকটা সেমিনারের মতো, যেখানে চলছে আলোচনা৷ ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্কও সেখানে অনেক সহজ এবং স্বাভাবিক৷ শিক্ষকদের আচরণ নয় গুরুগম্ভীর বরং বন্ধুত্বপূর্ণ৷ উন্নত দেশের ক্লাসরুমগুলোর এই ভিন্ন ছবির পেছনে রয়েছে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ৷ প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিক্ষাদানের ওপর প্রশিক্ষণ নিতে হয়৷ এমনকি বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলংকাতেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রথম দুই বছরের মধ্যে প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক, এমন তথ্য জানালেন উচ্চশিক্ষা মানোন্নয়ন প্রকল্প বা হেকেপ'এর ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোজাহার আলি৷ এই ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের দেশে দেখা যায় একজন ভালো ছাত্রকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় কোনো ধরণের প্রশিক্ষণ ছাড়াই৷ ফলে ক্লাস নেওয়ার সময় তার কন্টেন্ট হয়তো ঠিক থাকে কিন্তু ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তিনি ব্যর্থ হন৷ অনেক সময় দেখা যায় যেভাবে পড়ানো উচিত কিংবা যেভাবে প্রশ্ন করা উচিত সেটা হয়তো পুরোপুরি ঠিক থাকে না৷
শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ
দুই দশকেরও আগে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সহায়তায় এই প্রশিক্ষণ শুরু হয় বাংলাদেশে৷ শুরুতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত পরিসরে এই প্রশিক্ষণ হতো৷ তবে ২০০৭ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এই প্রশিক্ষণদানে উৎসাহ যোগায়৷ এই প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক ড. জসিমউদ্দিন৷ প্রশিক্ষণের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমার বিষয়ের ওপর আমার ভালো দখল রয়েছে৷ তবে কিভাবে সেটা পড়ানো যায় সেটা আমি জানতাম না৷ সেখানে অনেক মডিউল রয়েছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে কীভাবে ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো যায়৷’গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০০ এরও বেশি শিক্ষককে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে৷ শিক্ষকরাও এখন প্রশিক্ষণকে ইতিবাচক ভাবে দেখছেন৷ সেই সম্পর্কে জানাতে গিয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ মোজাহার আলি বলেন, শিক্ষকরা এখন স্বীকার করছেন যে তাদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন৷ এটা তাদের থাকলে তারা আরও ভালোভাবে সেবা দিতে পারতেন৷
ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণদান ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করবে বলে সবাই মনে করছেন৷ তবে প্রশিক্ষণের বাইরেও আরও কিছু বিষয় রয়েছে যা পাঠদানের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে৷ সেই সম্পর্কে ড. জসিমউদ্দিনের বক্তব্য হলো, ‘বিদেশে প্রতিটি শিক্ষকের বিপরীতে যতজন ছাত্র থাকে আমাদের দেশে সেটার পরিমাণ অনেক বেশি৷ ফলে শিক্ষকের পক্ষে কিন্তু সম্ভব হয় না সকলের কাছে যাওয়া৷ তাই আমাদের দেশে আরও শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে এবং এই অনুপাতের পার্থক্য কমিয়ে আনতে হবে৷’
অনলাইন ডেস্ক