ভূমিকাঃ ফেইসবুকে এবং অন্যান্য সূত্রে আয়ারল্যান্ড প্রবাসী বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী আবাই কি এবং এই সংগঠনের কি প্রয়োজন এই প্রশ্ন বিভিন্নভাবে উত্থাপন করেছেন। আমার কাছে প্রথমেই মনে হয়েছে এই প্রশ্ন উত্থাপনের কারণ কি?
যারা এই প্রশ্ন করেছেন তাদের কিছু অংশ আয়ারল্যান্ডে নবীন, তাই হতে পারে এই সংগঠন সম্পর্কে তাদের তেমন কোন ধারনা নেই। অন্যদিকে যারা এই দেশে দীর্ঘদিন থেকে আছেন, হতে পারে তারা জেনে বুঝেই এই প্রশ্ন করছেন। সম্ভবতঃ তারা জানতে চাচ্ছেন বিগত সময়ে এই সংগঠন কি কর্ম সম্পাদন করতে পেরেছে। তাই এই সংগঠন সম্পর্কে একটি ধারনা দেবার প্রয়াস আমি গ্রহণ করছি।
অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (আবাই) কি?
২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে বসবাসরত কিছু দুরদর্শি প্রবাসী বাংলাদেশী, সমগ্র আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের একত্রিত করে একটি ছাতা (Umbrella) সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। সেই সূত্র ধরে ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে একটি প্রত্যক্ষ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে অল বাংলাদেশি এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ডের (আবাই) এর প্রথম কার্য্যকরী পরিষদ গঠিত হয়।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখযোগ্য যে, তখন আয়ারল্যান্ডে, কাউন্টি ভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন কিছু কার্য্যক্রম পরিচালনা করছিলেন তারমধ্যে "বাংলাদেশ এসোসয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (বাই)", "বাংলাদেশ কমিউনিটি অব কিলার্নী", "বাংলাদেশ কমিউনিটি অব কর্ক (বিসিসি)", "বাংলাদেশ কমিউনিটি অব গলওয়ে" অন্যতম। এই সংগঠনগুলোর নির্বাহীরা যেহেতু প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত ছিলেন না তাই তাদের সার্বজনীন গ্রনযোগ্যতা কম ছিল এবং সেই সাথে বিভিন্ন কাউন্টির মধ্যে কোন সমন্বয় ছিল না।
আবাই এর উদ্যোগ ছিল প্রতিটি কাউন্টিতে একটি করে কাঠামো তৈরি করা এবং সেই সাথে কেন্দ্রীয় একটি কাঠামো তৈরি করা যা সকলের সাথে সমন্বয় ও যোগাযোগের মাধ্যমে প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটিকে ঐক্যবদ্ধ রেখে তাদের উন্নয়নে ভূমিকা গ্রহণ করবে।
বিশেষ করে আয়ারল্যান্ডে কোন বাংলাদেশী দূতাবাস না থাকায়, বিভিন্ন সময় কনসুলার সেবার আয়োজন ও কমিউনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করার প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়।
"আবাই" এর গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাঃ ২০১২ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে আবাই এর প্রথম কার্য্যকরী পরিষদ তাদের কার্য্যক্রম শুরু করে এবং কার্য্যক্রম সুচারুরূপে পরিচালনার লক্ষ্যে ২০১৩ সালে একটি লিখিত গঠনতন্ত্র উপস্থাপন করে সেইভাবে কার্য্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
সংগঠনের মূল লক্ষ্য রাখা হয়, প্রবাসে নিজেদের ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা এবং শিক্ষা কার্য্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে নিজেদেরকে সামঞ্জস্যপূর্ণ (Integrated), সুখী ও সমৃদ্ধশালী হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। সংগঠনের গঠনন্তন্ত্রের আলোকে এটি একটি, "স্বেচ্ছাপ্রসূত (Voluntary), সমাজসেবামূলক (Social welfare), অসাম্প্রদায়িক (Non-communal), ও অলাভজনক (Nonprofit) জোটভুক্ত (Affiliated) ছাতা (Umbrella) সংগঠন।"
আবাই এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যঃ
০১। প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড এবং বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশ সম্পর্কে একটি ইতিবাচক ধারনা তৈরি করা।
০২। আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত সকল বাংলাদেশীদের মধ্যে ভালো যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সুসম্পর্ক তৈরি করা ও বজায় রাখা।
০৩। আয়ারল্যান্ড ও পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও সামাজিক উত্তরাধিকার সম্পর্কে ইতিবাচক মনোবৃত্তি সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয় সুনাম এবং মর্য্যাদা বৃদ্ধি করা।
০৪। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধকে চর্চা করার প্রয়াস গ্রহণ এবং আন্তর্জাতিক গুরুত্ত্বপূর্ন দিবসসমূহের আনুষ্ঠানিক উদযাপন।
০৫। আত্নীকরণ (Integration) ও ব্যাবসায়িক সম্পর্ক উন্নয়ন।
০৬। জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের মাধ্যমে সুখী ও সমৃদ্ধশালী জীবনযাপনের লক্ষ্যে বাংলাদেশীদের সহায়তা ও উৎসাহ প্রদান।
সংগঠনের কার্য্যাবলী এবং বৈষম্যহীনতার নীতি সাধারণ কার্য্যাবলী
০১: আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের সকল ধরনের সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানের ছাতা সংগঠন (Umbrella Organisation) হিসাবে "আবাই" সকল সংগঠনকে জোটবদ্ধ করে মৈত্রী সংঘ হিসাবে কার্য্যক্রম পরিচালনা করবে।
০২: বসবাসরত সমাজে আত্নীকরনের লক্ষ্যে "আবাই" বাংলাদেশ এবং আয়ারল্যান্ডের জাতীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় দিবস এবং গুরুত্ত্বপূর্ন ঘটনাগুলোকে উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহন করবে কিংবা উদ্যোগ গ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান কিংবা সংগঠনকে সর্বাত্নক সহযোগীতা প্রদান করবে। প্রবাসী বাংলাদেশীদের যে কোন সংগঠন "আবাই" এর সাথে আলোচনা সাপেক্ষে দিবস কিংবা ঘটনাকে উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
০৩: "আবাই" প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে শিক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহন করবেন এবং প্রাসংগিক অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহন করবেন কিংবা উদ্যোগ গ্রহনে অন্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে সহযোগীতা করবেন।
০৪: "আবাই" খেলাধূলা সংক্রান্ত প্রতিযোগীতার আয়োজন করবেন, বিশেষভাবে আয়ারল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আত্নীকরনের লক্ষ্যে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন সংগঠন এবং প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশী খেলোয়াড়দের অংশগ্রহনের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদান করবেন।
০৫: প্রবাসীদের কল্যানে তাদের সুখে এবং দুঃখে বিশেষভাবে সদস্যদের শারীরিক অসুস্থতা এবং মৃত্যুজনিত সময়ে তাদের পাশে থেকে উপদেশ, সাহায্য এবং সহযোগীতা প্রদান করবেন।
০৬: প্রবাসী বাংলাদেশী ছাত্র-ছাত্রী এবং চাকুরীজীবিদের কল্যানে অব্যাহত সাহায্য এবং সহযোগীতা প্রদান করবেন।
০৭: ভাষা, শিক্ষা এবং ধর্মীয় কার্য্য সম্পাদনে সহযোগীতা প্রদান করবেন।
০৮: প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যানে সকল প্রকার উদ্যোগ ও সহযোগীতা প্রদান করা হবে।
০৯: আয়ারল্যান্ডে কিংবা বাংলাদেশে যে কোন প্রকার দূর্যোগ, দূর্ঘটনা এবং বিপর্যয়ে সাহায্য এবং সহযোগীতার উদ্যোগ গ্রহন এবং সহায়তা প্রদান।
১০: "আবাই" এর সকল কার্য্যকলাপ সংশ্লিষ্ট কাউন্টি কমিটির সাথে সহযোগীতা এবং সমন্বয়ের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হবে।
১১: সভা, সমিতি, সেমিনার এবং সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে এবং আয়ারল্যান্ডের ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিলের সাথে সমন্বয় সাধন করে বর্তমান সমাজে দ্রুত আত্নীকরনের উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
আয়ারল্যান্ডের বাহিরে কার্য্যক্রম
০১: "আবাই" বাংলাদেশ এবং আয়ারল্যান্ডের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং ব্যাবসায়ীক সেতুবন্ধন দৃঢ় করার লক্ষ্যে সংবাদ আদান-প্রদান, সমাজ কল্যান, সহযোগীতা এবং অন্যান্য কার্য্যকলাপ গ্রহন করবে।
০২: "আবাই" প্রবাসী বাংলাদেশীদের সহযোগীতায় বাংলাদেশে শিল্প, ব্যাংক, বীমা ও অন্যান্য বর্ধীষ্ণু খাতে বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহন করতে পারে যাতে করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সহায়তা প্রদান করা হয় এবং প্রবাসীরাও অর্থনৈতিক সুফল প্রাপ্ত হোন।
০৩: "আবাই" ইউরোপ, এশিয়া, আমেরিকা, কানাডা এবং অন্যান্য দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে সংগঠিত অন্যান্য সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগের সেতুবন্ধন হিসাবে কাজ করবে।
দ্বন্দ এবং বিরোধ নিষ্পত্তি
০১: "আবাই" প্রবাসী বাংলাদেশী সদস্যদের মধ্যে কিংবা সদস্যদের সাথে অন্যান্যদের মধ্যেকার ভুল বোঝাবুঝি, দ্বন্দ এবং বিরোধ নিরসনের উদ্যোগ "বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি" গ্রহন করতে পারে। যে কোন একপক্ষের লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে এবং অন্য কিংবা অন্যান্য পক্ষের সম্মতিতে "আবাই" প্রতিনিধি কিংবা প্রতিনিধিবৃন্দ "মধ্যস্থতা", "পরামর্শ", "সংলাপ" কিংবা "সালিশের" মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন করবেন।
০২: "আবাই" সভাপতির বরাবরে সংক্ষুব্ধ পক্ষের লিখিত অভিযোগ প্রাপ্ত হলে সভাপতি নিজের নেতৃত্বে কিংবা একজন সহ-সভাপতির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে বিরোধ নিস্পত্তির উদ্যোগ গ্রহন করতে পারেন।
০৩: "বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি (Alternate Dispute Resolution)" নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলোর কোন পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে তা দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি, পক্ষদ্বয় কিংবা পক্ষগুলোর সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যে "মধ্যস্থতা (Mediation), সম্মিলন (Conciliation), পরামর্শ (Consultation), সংলাপ (Negotiation) কিংবা সালিশ (Arbitration) অন্যতম।
স্বাস্থ্য বিষয়ক কার্য্যক্রম
০১: "আবাই" প্রবাসী বাংলাদেশী সদস্য এবং বাংলাদেশে বসবাসরত নাগরিকদের উন্নত স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে ও গ্রহনে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করবে।
০২: সুস্বাস্থ্য রক্ষার লক্ষ্যে শিক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহন করে সবাইকে স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতন করে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করবে।
০৩: "আবাই" এর সদস্যদের মধ্য থেকে যারা চিকিৎসক এবং সহযোগী পেশায় জড়িত, তাদের সার্বিক সহযোগীতা গ্রহন করে বিভিন্ন প্রকার স্বাস্থ্য সেবা কার্য্যক্রম পর্য্যায়ক্রমে সকল সদস্যদের মধ্যে পৌছে দেবেন। বিশেষভাবে জি পি কিংবা বিষেষজ্ঞদের সাথে কার্য্যকর এবং ফলপ্রসূ যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে "আবাই" সহায়তা কার্য্যক্রম অব্যাহত রাখবে। প্রয়োজনে দোভাষীর ভূমিকা গ্রহন করে স্বাস্থ্য সেবাকে সার্বজনীন করার প্রচেষ্ঠা গ্রহন করবেন।
মৃত্যু শোকে সহায়তা (Bereavement Fund)
০১: "আবাই" তার সকল সদস্য কিংবা সদস্যবৃন্দের দুঃখ এবং বেদনার সময় বিশেষভাবে আপনজনের মৃত্যুজনিত সময়ে তাদের পাশে দাড়ানোর অংগীকারে আবদ্ধ। মৃত্যুজনিত সময়ে সদস্যদের পাশে অবস্থানগ্রহন "আবাই" এর অন্যতম কার্য্য। উক্ত সময়ে ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক কার্য্যক্রম সূচারুরুপে সম্পন্ন করায় সহযোগীতা প্রদান করা এবং মানসিক সহায়তা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করাও আবশ্যিক কার্য্যক্রমের অন্তর্ভূক্ত।
০২: "আবাই" এর যে কোন সদস্য কিংবা আত্নীয়ের মৃত্যুকালীন সময়ে সহযোগীতার উদ্দেশ্যে "আবাই" একটি বিশেষ সহায়তা তহবিল গঠন করবে। এই সহায়তা তহবিল থেকে প্রয়োজনে মৃত্যুকালীন ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক আচার সম্পন্নের জন্য ব্যাবহার করা হবে। ব্যাবহৃত অর্থ উক্ত পরিবারের ইচ্ছা কিংবা সামর্থের উপর ভিত্তি করে পরিশোধ করা হবে। পরিশোধযোগ্য না হলে এই তহবিল পুনরায় সংকুলান করার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
০৩: "মৃত্যুজনিত সহায়তা তহবিল" গঠনে সমাজের যে কোন ব্যাক্তি কিংবা সংস্থার বিশেষ দান কিংবা সদস্যদের প্রদান করা অর্থ সংকলিত করে গঠন করা যাবে।
ধর্মীয় কার্য্যক্রম
০১: ধর্মীয় কার্য্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে "আবাই" সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, মাহফিল, পূজা ইত্যাদি আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহন করবে কিংবা উদ্যোগ গ্রহনকারী সংগঠন, সংস্থা কিংবা ব্যাক্তিকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করবে।
০২: বর্তমান প্রজন্ম এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের ধর্মীয় শিক্ষার উপর গুরুত্ত্ব আরোপ করে "আবাই" মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দীর, চার্চ কিংবা স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করবে কিংবা উদ্যোগ গ্রহনকারী প্রতিষ্ঠান, সংস্থা কিংবা ব্যাক্তিকে সার্বিক সহযোগীতা প্রদান করবে।
০৩: ধর্মীয় কার্য্যক্রম অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে "আবাই" বিভিন্ন সময়ে লিফলেট, পোস্টার, মেগাযিন এবং পুস্তক প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহন করবে।
০৪: "আবাই" সদস্যবৃন্দ প্রত্যকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করবেন এবং একে অপরের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও বিশ্বাসকে সম্মান করবেন। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানাদিতেও নিজ ধর্মের চর্চা করবেন এবং ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা সেই অনূষ্ঠানাদির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবেন। ধর্মের ব্যাপারে সকলেই সহনশীলতা, ধৈর্য্য এবং সৌজন্যতা বজায় রাখবেন।
বাংলা ভাষা বিষয়ক কার্য্যক্রম
০১: আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের মধ্যে বাংলা ভাষা চর্চার সর্বাত্নক উদ্যোগ গ্রহন করবে।
০২: আয়ারল্যান্ডের প্রতিটি কাউন্টি, যেখানে বাংলাদেশীরা বসবাস করছেন সেখানে বাংলা স্কুল পরিচালনার উদ্যোগ নেবেন।
০৩: প্রজাতন্ত্রী আয়ারল্যান্ড সরকারের সাথে আলোচনা করে সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে একটি ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে জুনিয়র এবং লিভিং সার্টিফিকেট কারিকুলামে অন্তর্ভূক্তির উদ্যোগ নেবেন।
বার্ষিক সম্মেলন অথবা সাধারণ সভা
সম্ভব হলে প্রতি বছর নির্ধারিত সময়ে "আবাই" সদস্যদের উপস্থিতিতে একটি সম্মেলন (Convention) কিংবা সাধারন সভার (Annual General Meeting) আয়োজন করবে। উক্ত সভায় "আবাই" এর বার্ষিক কার্য্যক্রমের প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে।
পদক, পুরষ্কার, স্মারক এবং উপহার প্রদান
০১: সমাজ কল্যান, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা এবং শিক্ষা বিষয়ে উৎসাহ ও উদ্দীপনা সৃষ্টির লক্ষ্যে "আবাই" প্রতিবছর সম্মেলন কিংবা সাধারন সভা কিংবা বিষেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সমাজে সেবামূলক, শিক্ষামূলক, সাংস্কৃতিক, খেলাধুলা কিংবা শিক্ষাবিষয়ক বিশেষ কার্য্যক্রম কিংবা গুরুত্বপূর্ন অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদক, পুরষ্কার, স্মারক এবং উপহার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করবে।
০২: জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহন করে একটি কমিটি গঠন করা হবে। উক্ত কমিটি পদক, পুরষ্কার, স্মারক এবং উপহার প্রদানের নীতিমালা, শিরোনাম এবং খেতাব নির্ধারিত করবে। সারা বছরব্যাপী কার্য্যক্রম এবং অর্জনের দিকে লক্ষ্য রেখে পরিশেষে ঘোষণা এবং পদক প্রদান করা হবে। নিম্নলিখিত পদক দেয়া যেতে পারেঃ
ক] সারাজীবনে অর্জনের পদক (Life Time Achievement Award)
খ] গুরুত্বপূর্ন সামাজিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ (Significant Social Contribution Award)
গ] লিভিং সার্টিফিকেট ও অন্যান্য পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের পদক (Academic Achievement Award)
ঘ] মেধা পদক (বিভিন্ন কার্য্যক্রমে গুরুত্বপূর্ন অর্জনের জন্য) (Merit Award)
ঙ] সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান অর্জন পদক (Highest Academic achievement award)
০৩: প্রতি বছর "প্রেসিডেন্ট পদক, আবাই" (President Award, ABAI) নামে একটি বিশেষ পদক সমাজে কিংবা "আবাই" এর জন্য কিংবা অন্য যে কোন বিশেষ গুরুত্বপূর্ন অবদানের জন্য প্রদান করা হবে। এই বিষেষ পদক সার্বিক ভাবে "আবাই" এর সভাপতির সিদ্ধান্তের উপর ভিত্তি করে প্রদান করা হবে। প্রয়োজনে সভাপতি অন্যান্য সদস্যদের পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন তবে তার সিদ্ধান্তই
চূড়ান্ত বিবেচিত হবে।
০৪: প্রতি বছর "আবাই" খেলাধুলা প্রতিযোগীতা এবং টূর্নামেন্টের আয়োজন করে পদক এবং পুরস্কার প্রদানের উদ্যোগ গ্রহন করবে।
ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠীর উদ্যোগ
০১: "আবাই" এর যে কোন সদস্য কিংবা সদস্যবৃন্দের কোন ভালো উদ্যোগকে সহায়তা করা নির্বাহী কমিটির দায়িত্ব।
০২: ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠী "আবাই" এর সদস্য হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং কার্য্যক্রম "আবাই" সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে করতে হবে। উদ্যোগ গ্রহনকারী ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠী "আবাই" সভাপতির সাথে আলোচনাক্রমে লিখিতভাবে জানালে, সভাপতি নির্বাহী পরিষদের সভায় তা উত্থাপন করবেন। নির্বাহী পরিষদের সম্মতি হলে এটা "আবাই" এর কার্য্যক্রমের আওতাভুক্ত করা হবে।
০৩: "আবাই" নির্বাহী পরিষদ ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠীর কার্য্যক্রমকে গ্রহন করে উক্ত ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠীকে সার্বিক কার্য্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দিতে পারেন কিংবা "আবাই" কার্য্যনির্বাহী পরিষদের কোন সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করে একটি কমিটি গঠন করে উক্ত কার্য্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।
০৪: উক্ত কার্য্যক্রমের জন্য আলাদা তহবিল গঠন করা যাবে এবং সেই তহবিলে "আবাই" এর পক্ষ থেকে সম্ভব হলে সহায়তা দেয়া যেতে পারে। তবে এই তহবিল পরিচালনা স্বচ্ছ এবং পরিচ্ছন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয় এবং এই তহবিল পরিচালনায় "আবাই" এর অর্থ সচিব কিংবা তার মনোনীত প্রতিনিধির নিয়ন্ত্রন থাকা আবশ্যিক।
পাসপোর্ট সার্জারী ও কূটনীতি সম্পর্কিত কার্য্যাবলী
০১: আয়ারল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশের কূতনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি ও কনসুলার সেবা কার্য্যকরী করার লক্ষ্যে "আবাই" আয়ারল্যান্ড সরকার ও বাংলাদেশ হাই কমিশন লন্ডন কিংবা বাংলাদেশ সরকারের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পর্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহন করবে।
০২: যতদিন পর্য্যন্ত আয়ারল্যান্ডে একটি কনসূলার দপ্তর কিংবা কূটনৈতিক দপ্তর স্থাপিত না হচ্ছে ততদিন "আবাই" লন্ডন হাই কমিশনের সাথে কার্য্যকর যোগাযোগের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডে কনসুলার এবং পাসপোর্ট সংক্রান্ত সকল সেবা প্রদানের ব্যাবস্থা গ্রহন করবে।
০৩: লন্ডন হাই কমিশনের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন কাউন্টিতে কনসূলার ও পাসপোর্ট সম্পর্কিত সকল সেবা প্রদানের ব্যাবস্থা গ্রহন করার উদ্যোগ গ্রহন করবে।
বৈষম্যহীনতার নীতি
এই সংগঠন এবং এর সম্মানিত সদস্যবৃন্দ কোন ব্যাক্তি কিংবা গোষ্ঠীর সাথে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, বয়স, লিংগ, বৈবাহিক অবস্থান, পারিবারিক অবস্থান কিংবা কোন ধরনের অক্ষমতা নিয়ে কোনপ্রকার বৈষম্যমূলক আচার আচরণ থেকে বিরত থাকবেন।
উপসংহারঃ
আমি মূলতঃ আবাই এর গঠনতন্ত্র থেকে উদ্দেশ্য লক্ষ্য এবং কি কার্য্যাবলী করার কথা সেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। এ ধরনের সংগঠন একটি স্বপ্নিল উদ্যোগ বলে আমি মনে করি। সারা বিশ্বের কোন দেশে একটি সংগঠনের ছায়াতলে সকল প্রবাসীদের একতাবদ্ধ থাকতে পারাটা নজিরবিহীন। আয়ারল্যান্ডের প্রবাসী বাংলাদেশীরা এব্যাপারে পথিকৃৎ হয়ে থাকবেন। যদি নির্বাহী পরিষদ সকল সদস্যদের সহযোগিতায় তাদের কার্য্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারেন তাহলে প্রবাসে বসবাসরত বাংলাদেশিরা একটি সুস্থ, সবল ও অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসাবে বিশ্বের দরবারে তাদের অবস্থান সম্মানিত করতে পারবেন বলেই আমার বিশ্বাস।
এখন প্রশ্ন হচ্ছেঃ
০১) "আবাই" প্রথম কার্য্যকরী পরিষদ কি এসকল কার্য্যক্রম আদৌ করতে পেরেছিলেন?
০২) যদি তারা কার্য্যক্রম করে থাকেন তাহলে কি কি কার্য্যক্রম তারা গ্রহণ করেছিলেন?
০৩) তাদের সফলতাগুলো কি ছিল আর ব্যার্থতাগুলো কি ছিল এবং তাদের ব্যর্থতার কারনসপমূহ কি ছিল?
আমি মনে করি এসকল প্রশ্নের উত্তর সকল আগ্রহী সদস্যের জানানো উচিত যাতে ভবিষ্যৎ কার্য্যক্রম গ্রহণ আরও সহজ ও সফল হয়। এই পশ্নগুলোর উত্তর আমি আমার পরবর্তী লিখায় উপস্থাপনের চেষ্টা করবো ইন শা আল্লাহ। আমি আশা করবো আমার লিখার পরে একটি মানসম্পন্ন আলোচনা কিংবা বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হবো।
লেখক পরিচিতিঃ
ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গীরদার
এম বি বি এস, ডি এ, এফ সি পি এস, এম ডি, এফ সি এ (আর সি এস আই)
এম এস সি (লিডারশীপ ও মেনেজম্যান্ট ডেভেলপমেন্ট)
কনসালট্যান্ট, এনেসথেশিয়া এন্ড ইন্টেন্সিভ কেয়ার
অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অব আয়ারল্যান্ড (আবাই) এর সাথে সম্পৃক্ততাঃ প্রথম নির্বাচিত সভাপতি