আমরা সবাই অবগত আছি যে আয়ারল্যান্ডের দূতাবাস যেমন বাংলাদেশে নেই ঠিক তেমনি বাংলাদেশের দূতাবাসও ডাবলিনে নেই। এই সমস্যায় আইরিশদের তুলনায় বাংলাদেশীরা ভুক্তভোগী সবচাইতে বেশী।
আয়ারল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের ইংল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশী দূতাবাসের দিকে মুখাপেক্ষী হতে হয় আবার বাংলাদেশে থাকা বাংলাদেশীদের মুখাপেক্ষি হতে হয় দিল্লিতে অবস্থিত আইরিশ দূতাবাসের প্রতি।
বুঝা যাচ্ছে উভয়ক্ষেত্রেই বাংলাদেশীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছেই।
অনেক প্রবাসী বাংলাদেশীদের দীর্ঘদিনের দাবী যেন আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিন শহরে বাংলাদেশী কনসুলেট বা দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করা হয়।
এইবার আসুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো দেখা যাকঃ
বাংলাদেশ এবং আয়ারল্যান্ড উভয়ই "British" কলোনীর অধীনে ছিলো যার ফলে "British Commonwealth" এর সদস্য, যদিও আয়ারল্যান্ড যুক্ত হয় ১৮ই এপ্রিল ১৯৪৯ সালে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে কেবল ১৯৭২ সালেই স্বাধীন বাংলাদেশের সাথে আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র সম্পর্ক স্থাপিত হয়।
আর ২০০৯ সালে আয়ারল্যান্ড থেকে Mr. Conor Lenihan তার বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের একটি দল দ্বিপাক্ষিক সফল সফর করেন বাংলাদেশে।
ঐ সময়ে ১৬ই এপ্রিলের তৎকালীন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে "ড. হাসান মাহমুদ" এর সাথে Mr. Conor Lenihan এর সাথে একটি সফল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক আলোচনা হয়।
তৎকালীন সময়ে তথ্যপ্রযুক্তি, এনার্জি, ফাইন্যান্স ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডের পক্ষ থেকে ইনভেস্টমেন্ট এবং বাংলাদেশ থেকে দক্ষ মানবসম্পদের ব্যাপারে কথাবার্তা চলে। যেখানে অপার সম্ভাবনার দিকগুলো তুলে ধরা হয়।
ঐ সময়ে ড. হাসান মাহমুদ বলেন, "We can cooperate with each other in different issues in international arena. Steps should also be taken to further strengthen relations between the two countries."
বুঝা গেল মোটামুটি দুই দেশের সামান্য হলেও পররাষ্ট্র ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও যোগাযোগ হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ-২ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য সম্মানিত জনাব ডা. হাবিবে মিল্লাত তার ফেইসবুকে একটি স্টেটাস দেন (১৭ই এপ্রিল ২০২০) যে বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় আয়ারল্যান্ডে বাংলাদেশী দূতাবাস প্রতিষ্ঠা করার ব্যাপারে উদ্দ্যেগ নিয়েছে!
সংবাদটি সোস্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়ে যায় কারন এটি আয়ারল্যান্ড প্রবাসীদের জন্যে অবশ্যই আশাতীত সুসংবাদ।
আবার অনেকে এই সংবাদের পিছনে ইংল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশী দুতাবাসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের প্রচেষ্টাকেও সাধুবাদ জানান।
আসি এইবার কিছু কথায়-
আয়ারল্যান্ডে বসবাসরত নতুন তরুন শিক্ষিত সমাজ যারা আইরিশ সরকার এবং বাংলাদেশ সরকারের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক স্খাপনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে পারে যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাংকিং, এনার্জি, মেডিক্যাল পণ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নমুলক কাজ করে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
কনসুলেট বা দুতাবাস তৈরিতে স্ব স্ব দেশের জনসংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায় !
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে-
আয়ারল্যান্ডে কতজন বাংলাদেশী স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং কতজন আইরিশ জনগন বাংলাদেশে স্থায়ী/অস্থায়ীভাবে বসবাস করেন?
হিসাব অনুযায়ী কমপক্ষে ১০,০০০ এর উপরে জনসংখ্যা হলে কনসুলেট এবং এর বেশী সংখ্যক জনসংখ্যা হলে দুতাবাস প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন হয় তবে এর সাথে আর্থিক-বাণিজ্যিক-সাংস্কৃতিক তদুপর দ্বিপাক্ষিক কুটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন দরকার হয়।
বাংলাদেশ সরকারের দরকার হবে আইরিশ সরকার কে নিমন্ত্রণ দিয়ে একটি কনসুলেট বিল্ডিং প্রতিষ্ঠা করা বাংলাদেশের কুটনৈতিক পাড়ায়।
কারন আমরা ভালো করে জানি যে, “End of the Day, Business Matters!”
তাই “ফেলো কড়ি মাখো তেল” এই নীতিতে বাংলাদেশ সরকার যদি আগে এগিয়ে এসে আইরিশ সরকারকে প্রায় বিনামূল্যে সরকারী কনসুলেট ভবন তৈরীসহ দেশের দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিগত মানবসম্পদ দেয়ার ধীর প্রস্তাব দেয় এবং সেইসাথে দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত শিল্পের বাজার প্রসার করতে প্রস্তুতি দেয় দ্বিপাক্ষিকভাবে তাহলে অনেক কিছু সম্ভব।
এতে লাভ হবে বাংলাদেশের অনেক প্রতিভাবন জ্ঞানী, পরিশ্রমী, শিক্ষিত তরুন যুব সমাজ অন্তত শ্রমবাজারের দিক দিয়েও।
আইরিশ অনেক কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের Pharmaceutical পণ্য, Information & Technology, Banking এবং সিলেটের গ্যাস ফিল্ডের সাথে যুক্ত!
সেই তুলনায় বাংলাদেশের বিশেষ কোন ব্র্যান্ডই নেই আয়ারল্যান্ডের বাজার যা স্বল্পসময়ের জন্য হলেও হতাশাজনক।
তাই শিক্ষিত বাংলাদেশী যুব সমাজকেই আয়ারল্যান্ড থেকে এবং বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আসতে হবে কেবল "তান্দুরি চিকেন, নান রুটি" দিয়ে নয়।
যুগ বদলে গেছে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নোবেল বিজয়ী কবিগুরু শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাথে যে আয়ারল্যান্ডে আরেক নোবেল বিজয়ী কবি "William Butler Yeats" এর যে বন্ধুত্ব সেই ১৯১৩ সালের আগেই ছিলো তাও আমাদের তুলে ধরতে হবে আয়ারল্যান্ড-বাংলাদেশের সংস্কৃতির সেতু বন্ধন তৈরিতে।
এই সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধনে ভারত যথেষ্ট এগিয়ে বিশ্বব্যাপী তাই আমাদেরকেও এগিয়ে আসা উচিৎ।
ডাবলিনে বাংলাদেশী দূতাবাস প্রতিষ্ঠা হলে যেসব বাংলাদেশীরা আয়ারল্যান্ডে Asylum বা স্বরনার্থী আবেদন করবেন তাদের অদুর ভবিষ্যতে কষ্টকর হবে বিভিন্ন কারনে!
সর্বোপরি আশা থাকবে অদূরভবিষ্যতে যখন আয়ারল্যান্ডের রাজধানীতে যে বাংলাদেশী দূতাবাস দেখবো তাতে তরুন "সৎ-দক্ষ-শিক্ষিত" বাংলাদেশীদেরকেই দেখবো যারা বাংলাদেশের সুনাম উত্তর উত্তর বৃদ্ধি করবেন।
সকলের মনে রাখতে হবে ব্যক্তি থেকে সংগঠন বড় আর সংগঠন থেকে দেশের স্বার্থ সবচাইতে বড়।
সমীর কুমার ধর
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড