প্রয়োজনের তাগিদে জন্মভূমির মাটি ছেড়ে বিমান উড্ডয়নের সাথে সাথেই দেশের সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে- প্রতক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে।
ইউরোপ, আমেরিকা অথবা যে সকল উন্নত রাস্ট্রে অনুমোদন সূত্রে নাগরিকত্ব নিয়ে প্রবাসীরা বসবাস করেন, তারা অনেকটা এসব দেশের নাগরিক সুবিধা, নিরাপত্তা ও সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এ দেশেই অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন। অনেকের আবার দেশে ফেরার সুযোগ থাকলেও অনিশ্চিত ভবিষ্যতে পথ রুদ্ধ করে দেয়।
যেহেতু এ সব দেশের মূলধারার সংস্কৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে গরমিল বেঁধে যায়, তাই দেশীয় সংস্কৃতি এরা লালন করেন শ্রদ্ধা ও যত্ন ভরে। বিপত্তি এসে ভর করে তখন- যখন দীর্য সময় এ সব দেশে থেকে বার্ধক্যে এসে মৃত্যু ভয় ভর করে অবচেতন মনে, তখন- জীবনের শেষ নিদ্রার স্থানটুকু হিসেবে জন্মভূমির মাটিকে বেছে নেয়ার ক্ষেত্রেও হাজির হয় নানান জটিলতা। যেহেতু স্ত্রী, সন্তানরা এখানেই থাকবেন, তাহলে লাশ দেশে নিলে তারা সবসময় কবর দেখে তাকে মনে করা থেকে বঞ্চিত হবেন। একদিকে দেশ, আরেক দিকে পরিবার, সব নিয়ে মৃত্যুর ক্ষনটাও সুখকর নয় প্রবাসীদের। অনেকেই যানেননা তার শেষ আশ্রয়স্থলের ঠিকানা।
প্রবাসে অর্থনৈতিক মুক্তি মিললেও মিলেনা বাস্তব জীবনের অনেক হিসেব নিকাশই। দেশের ও বিদেশের অর্থনীতি সচল রাখতে গিয়ে নিজের জীবনের চাকাই একসময় অচল হয়ে যায়। একসময় যে মানুষটি উজ্বল ভবিষ্যতে রঙিন স্বপ্নে তার জীবনকে সাজিয়ে তুলতো, আজ জীবনের পরন্ত বেলায় এসে বিবেকের জানালায় প্রশ্ন ভর করে-প্রবাসীদের কি আদৌ কোন দেশ আছে? মৃত্যুর পরে মাত্র সাড়ে তিন হাত জায়গার অন্ধকার ঘরটি প্রবাসে না দেশে?
বেশ কিছুদিন আগে আয়ারল্যান্ডে এক বাংলাদেশী ভাইয়ের আকস্মিক মৃত্যুর পরে তার মায়ের ইচ্ছে ছিল সন্তানের লাশকে শেষবারের জন্য একটু দেখার, একটু ছুঁয়ে দেখার। যে মা এই সন্তানটিকে দশমাস গর্ভে ধারন করেছেন প্রসব করতে গিয়ে মৃত্যুর কাছ থেকে ফিরে এসেছেন- তার সে সন্তানের মৃত্যুর পরে তার মুখটা একটু ছুঁয়ে দেখা, খুব কি বেশী চাওয়া? কিন্তু ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ঐ মায়ের শেষ চাওয়া টুকু পূরন হয়নি। বাধ্য হয়ে এখানেই দাফন করতে হয়েছিলো। এটাই হলো প্রবাস।
আমরা কেউই যানিনা আমাদের অন্তিম যাত্রার খাটিয়া কোন গন্তব্যে এসে থামবে। অনিশ্চিত ভবিষ্যেেতর এক আলো আঁধারির খেলায় অতিবাহিত হচ্ছে প্রবাসের প্রতিটি মানুষের ছন্দপতনের জীবন, যে জীবনের প্রতিটি বাঁকে এসে একটি প্রশ্নই উঁকি দেয় আবেগী মনে- প্রবাসীদের দেশ, সে কোথায়….!!
সৈয়দ জুয়েল
গলওয়ে, আয়ারল্যান্ড