বৃটেনকে বলা হয় কসমোপলিটান রাষ্ট্র, সেখানে বহুদেশের বহু সংস্কৃতির মানুষ পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালবাসা নিয়ে যুগ যুগ ধরে সহাবস্থান করে আসছেন।

আজকের গ্রেট ব্রিটেনের বিশ্ব জুড়ে যে খ্যাতি ও সুনাম তার পেছনের গল্পের কুশীলরা হলেন অভিবাসী, সেদেশের সরকারের গৃহীত সামাজিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নীতি সহজেই অভিবাসীদের নতুন পরিবেশে নিজেদের মানিয়ে নিতে সহায়তা করছে। একজন বৃটিশ বাংলাদেশী সেদেশে নিজেকে বাঙালি পরিচয় দেয়ার চেয়ে বৃটিশ পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। যেসব প্রজন্ম বৃটেনে জন্ম নিয়ে বেড়ে উঠেছেন তাদের অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, কেউ কেউ বৃটেনের রাজনীতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

বৃটেনের এই বহু জাতির বহুসংস্কৃতির বৈচিত্র্যময় সমাজব্যবস্থা বিভিন্ন দেশে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে কমনওয়েলথভুক্ত অভিবাসী অধ্যুষিত উন্নত দেশগুলোতে যেমন: অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ডে।

আয়ারল্যান্ডের অভিবাসী জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে কেননা স্বাস্থ্য ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আয়ারল্যান্ড বহুলাংশে বিদেশী দক্ষ কর্মীদের উপর নির্ভরশীল। আয়ারল্যান্ডের সর্বশেষ ২০১৬ সালের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে ৫ লক্ষ ৩৫ হাজার ৪৭৫ জন অভিবাসী এদেশে বসবাস করছেন। সেখানে বৈধ বাংলাদেশীর সংখ্যা দেখানো হয়েছে ১০ হাজার। ধারণা করা হচ্ছে এই সংখ্যা বর্তমানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশের ক্রমবর্ধমান অভিবাসীদের সামাজিক অন্তর্ভুক্তির অংশ হিসেবে তাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বিভিন্নভাবে পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। গত বছর আইরিশ পুলিশ (গার্ডা) বিভাগে মুসলমানদের হিজাব ও শিকদের পাগড়ি কর্মক্ষেত্রে অভিন্ন পোশাক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন অভিবাসন বান্ধব বেসরকারি সংস্থা ও মানবাধিকার সংগঠন বহুজাতিক সাংস্কৃতিকে অকুন্ঠ সমর্থন জানিয়ে আসছে, আইরিশ সরকারও চাচ্ছেন এদেশে বসবাসরত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে মূলধারার সাথে সম্পৃক্ত করতে। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে স্থানীয়ভাবে কমিউনিটির সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিতকরণের জন্য বিভিন্ন ফোরাম গঠন করা হয়েছে যেমন কমিউনিটি হেলথ ফোরাম, নারীর ক্ষমতায়ণ শীর্ষক ফোরাম, আইন শৃঙ্খলা বিষয়ক ফোরাম। অনেক সময় এসব ফোরামে বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। নিজেদের বিভিন্ন সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলতে পারেন। এছাড়াও আমাদের বিভিন্ন কাউন্টির কমিউনিটি অনুষ্ঠানে স্থানীয় আইরিশ ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিজেদের সংস্কৃতি ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারেন। কিলকেনীর বৈশাখী মেলা এক্ষেত্রে উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে এছাড়াও ডুনেগাল বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন আন্তঃসাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেমন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ১লা বৈশাখ বহুজাতির সম্প্রীতির আয়ারল্যান্ড গড়তে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করছে।

এরকম সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের মাধ্যমে স্থানীয় আইরিশ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় একে অপরের সাথে পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও ঋদ্ধতার বন্ধনে আবদ্ধ হবে। এভাবেই সমাজ থেকে বিলুপ্ত হবে বর্ণবাদ, বৈষম্য ও ঘৃণা।

ওবায়দুর রহমান রুহেল
ডুনেগাল, আয়ারল্যান্ড