আমাদের হিরোদের কথা বলছিঃ বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা সবাই আতঙ্কিত শংকিত আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে আমরা প্রয়োজন ছাড়া তেমন বের হচ্ছি না আবার অন্যদিকে জীবিকার তাগিদে অনেকের বের হতে হচ্ছে ছুটে যাচ্ছে নানা গন্তব্যে কেউ হয়তো নিজস্ব গাড়ি নিয়ে নয়তোবা বাসে ট্রেনে করে কর্মক্ষেত্র যাতায়াত করতে হচ্ছে।

যেখানে প্রতি মুহূর্ত একটা অশনিসংকেত আমরা কতটুকু পারছি আমাদেরকে এই সংক্রামক- মহামারী থেকে নিজেকে সুরক্ষা করে রাখতে বাড়ি থেকে বের হয়ে চাকরি শেষ করে বাসায় এসে নিজেকে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছ থেকে একটু আলাদা রাখা পরিচ্ছন্ন রাখা, কত মানসিক চাপের মধ্যে দিনগুলো অতিবাহিত হচ্ছে অন্যদিকে একই পরিবারের দুই তিনজন সদস্য যেখানে চাকুরীরত অবস্থায় আছেন তাদের জন্য আরো কত ভয়ঙ্কর অবস্থা সেটা নির্ণয় করা খুব কঠিন ব্যাপার।

পরিবারের জন্য কেনাকাটাঃ
ঘর থেকে বের হওয়া মানেই ভয় কত মানুষ কত পন্থা অবলম্বন করতেছে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে আমরা আসলে কি পারতেছি নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সুপার মার্কেটের লম্বা সারিতে দুই মিটার দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়িয়ে ভিতরে ঢুকতেই সবাই ভুলে যায় দূরত্বের ব্যাখ্যা হাড্ডা হাড্ডি করে যে যেমন পারছে নিচ্ছে কেনাকাটায় ব্যস্ত সবাই কি করে বুঝবেন আপনার পাশের দাঁড়ানো ব্যক্তি সংক্রমিত কিনা যেই ফ্রেশ সবজি টা আপনি বেছে নিলেন তার আগে কতজন এই সবজিতে হাত দিয়েছে তার কোন সদুত্তর আপনার জানা নেই.

কেনাকাটা অথবা অনলাইন ভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাঃ
অনেক সুপার মার্কেট অনলাইন বাজারের ব্যবস্থা চালু রেখেছেন এই পন্থা অবলম্বন করলে আপনাকে বাজারে না গিয়ে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো আপনি কিনতে পারছেন ঠিকই কিন্তু ডেলিভারি নেয়ার পরে প্যাকেট থেকে আলাদা করা আবার অনেক জিনিস ধুয়ে রাখা, আলাদা করে রাখা, কত যে বিড়ম্বনা!

গৃহবন্দী কি করবোঃ
অনেকে আছেন যারা ঘরে বসে অফিসের কাজ করে যাচ্ছেন তারা অফিসের কাজ নিয়ে ব্যস্ত আর যাদের কোন কাজ নেই খেয়ে দেয়ে ঘুম তারপরও আছে নানা মাথাব্যথা এবং অশান্তি আর কদিন যাবে এভাবে, সংসার চালাবো কিভাবে, ঘর ভাড়া দিব কিভাবে, বাড়ির কিস্তি দিব কিভাবে, নানা চিন্তা শুধু মাথায় ঘুরপাক করে এটা অস্বাভাবিক কিছু নয় তবে নিজেকে ব্যস্ত রাখার নানা উপায় আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে, যেমন ধরুন এখন পরিবারকে প্রচুর পরিমানে সময় দেয়া ছেলেমেয়েদের সাথে খেলাধুলা করা, ঠিকমতো ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করা, বই পড়া, গান শোনা, ঘরবাড়ি বাগান পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং অবশ্যই নিজেকে মানসিক চাপ থেকে মুক্ত রাখার জন্য শারীরিক ব্যায়াম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

ছেলেমেয়েদের স্কুল এবং পরীক্ষাঃ
স্কুল কলেজ কখন যে স্বাভাবিক হবে কেউ এর নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা না, অনেক পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে বা স্থগিত করা হয়েছে এটা নিয়ে অভিভাবক এবং স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র ছাত্রীরদের মানসিক চাপের মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে। প্রত্যেক অভিভাবকদের উচিৎ স্কুলের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার তাদের তদারকি করা এবং ঘরের মধ্যেই পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করে দেয়া।

মসজিদ-মন্দির এবং অন্যান্য উপাসনালয়ঃ
বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক ধর্মীয় উপাসনালয় বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে এবং সংক্রামক প্রতিরোধ করতে মানুষ ঘরে বসেই নামাজ প্রার্থনা, ভাবনা চালিয়ে যাচ্ছে। মানসিক অশান্তি দুশ্চিন্তা ইত্যাদি থেকে মুক্ত রাখতে প্রতিদিন মেডিটেশন করা যেতে পারে চিন্তাবিদদের মতে মেডিটেশন (ভাবনা) মানুষকে নানারকম দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে পারে।

ভাইরাস, চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিনঃ
এই ভাইরাসের এখনো কোন টিকা আবিষ্কৃত হয়নি তবে পরীক্ষামূলকভাবে বিভিন্ন দেশে এর প্রয়োগ চলছে সাধারণ মানুষের নাগালে আসতে আরো অনেকদিন অপেক্ষা করতে হবে এই পরিস্থিতিতে প্যারাসিটামল হচ্ছে সবচেয়ে বড় মহৌষধ। রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে ডাক্তাররা তাদের চিকিৎসা পদ্ধতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

গুজবের আজব কাহিনীঃ
ভ্যাকসিন আবিষ্কার, সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন ওষুধের নাম, মাথা ন্যাড়া করা, স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ, ইত্যাদির নাম শুনে অনেকে আশান্বিত, অনেকে রাগান্বিত। সঠিক তথ্য পেতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়মাবলী অনুসরণ করুন।

অদৃশ্য বস্তুর সাথে যুদ্ধঃ
সমস্ত পৃথিবী জুড়ে সবাই যুদ্ধ করছি অদৃশ্য বস্তুর সাথে, অদেখা শত্রু কিন্তু নিরস্ত্র বিশ্বযুদ্ধ, নেই কোন গোলাবারুদের শব্দ নেই কোনো রক্তপাত কিন্তু মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়াই কারো গৃহে ফেরা কারো ইহলোকে

অতীতের ভাবনা বর্তমান কে সাথে নিয়ে ভবিষ্যতের স্বপ্নঃ
কারো স্বপ্ন কারো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সবকিছু স্তম্ভিত হয়ে গেছে স্বপ্নগুলো দুঃস্বপ্ন পরিকল্পনাগুলো মাকড়সার জালের মধ্যে আবদ্ধ মেঘাচ্ছন্ন, অপেক্ষা মেঘ গুলো সরে যাবে আড়ালে সূর্য উঁকি দেবে সবকিছু স্বাভাবিক হবে নতুন নতুন স্বপ্নে পরিপূর্ণ হবে জীবনের বাকী অধ্যায়। লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায় অথবা কোন নাটক বা কোন সিনেমায় সমাপ্ত হোক করোনার এই অধ্যায়।

দীলিপ বড়ুয়া
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড