দু:স্বপ্ন ক্ষনিকের জন্য শরীর কাঁপিয়ে দেয়, আর সে দু:স্বপ্ন যদি বাস্তবে আলিঙ্গন করে, তাহলে হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়। শরীরের ব্যাধি ঔষধে উপশম হয় সত্য।

কিন্তু বার্ধক্যের মলিন মনের ব্যাধি? যে বাবা-মা তাদের সুখ-শান্তি, চাওয়া, পাওয়ার প্রাপ্তির সুখগুলো বিসর্জন দিল সন্তানদের জন্য, সেই সন্তান বৃদ্ধ বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসেন, তখন তাদের বিবেকের অনুভূতি কি একটু জাগ্রত হয়না?

শেষ বয়সে যখন তাদের একটু ভালবাসা, সেবা, একটু কথা বলার সাথীর দরকার, তখন ছুঁড়ে দিলেন একাকীত্বের নিরবিচ্ছিন্ন কুঁপে। ছোটবেলায় আপনি যখন গাছের ঐ আমটি খাওয়ার বায়না করেছিলেন- বাবা কিন্তু ঐ উঁচু মগডাল থেকে আমটি আপনার হাতে দিয়ে আপনার রাজ্য জয়ের হাসিতে তৃপ্ত হতেন, পা পিছলে সারাজীবনের পঙ্গু হওয়ার ভাবনা একবারও তাড়িয়ে বেড়ায়নি বাবার মাঝে। আজ সেই বাবাকে আপনার ঘরের চারদেয়ালের মাঝে ছোট্ট একটু খাটিয়ার জায়গা হয়না?

আর মায়ের আঁচলের ছাঁয়া থেকে যে পরশগুলো আপনার জীবন চলার পথে মূল চালিকাশক্তি ছিল, আজ বয়সের ভারে সে নূহ্য। বাক্ শক্তিও কিছুটা লোপ পেয়েছে, কথাও হয়তো একটু বেশি-ই বলেন, আপনার বিরক্ত লাগে, কথা তো আগেও বেশি বলতেন, যখন আপনি ছোট ছিলেন, তখন আপনার হাজার প্রশ্নের উত্তর দিতেন। কই মা তো বিরক্ত হতেননা তখন! আজ আপনি এত বিরক্ত? বিরক্তের বহিঃপ্রকাশ বৃদ্ধাশ্রম? কয়টি বছর আর বাঁচতেন তারা, শেষ বয়সের শেষ কয়টা দিন বিষাদময় খুপরীতে পাঠানোয়, তাদের মৃত্যু আরো কাছে টেনে আনার দু:সাহসে বিবেক বোবা হয়ে চিৎকার করিতেও লজ্জা পায়। বাবা, মা, সন্তানদের উজ্বল ভবিষ্যত গঠনে বীরদর্পে পথগুলো মাড়িয়ে আজ ক্লান্ত।

ওই পথে তাদের পা আর পরবেনা। বাবা, মায়ের পূরানো ঐ পথে আমর সন্তানরা সদ্য হাঁটা শুরু করেছে। আমাদের সন্তানদের জন্যও আমাদের পরিশ্রমের শেষ নেই, ছেঁড়া জামা, স্যান্ডেলের দিকেও খেয়াল রাখার সময় হয়না, ওদের মুখের হাসি দেখেই বুকটা ভরে যায়। যেমনটা অনেক বছর আগে আমার বাবা, মাও করেছিলেন। আজ তাদের সুখগুলো খেলা করে বৃদ্ধাশ্রমের চারদেয়ালের মাঝে। এই তো আর কয়টা দিন। এরপর তো আমার বাবা, মার মত আমার সুখগুলিও বৃদ্ধা শ্রমের ইট-শুরকির ভিতর খেলা করবে। বৃদ্ধাশ্রমের পাশ থেকে হাঁটি আর ভাবি-আসছি আমরা সন্তানরা, খুব দ্রুতই আসছি।

সৈয়দ জুয়েল (লেখক ও সাংবাদিক) গলওয়ে, আয়রল্যান্ড