গত ১৬ই সেপ্টেম্বর “ALL BANGLADESHI ASSOCIATION OF IRELAND” এর বর্ষপূর্তি ও অভিষেক অনুষ্ঠানের শেষে আমার পদত্যাগ করার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে বুঝানো যে ABAI এর NATIONAL EXECUTIVE COMMITTEE কিংবা প্রেসিডেন্ট ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার সাহেব এর সাথে কোন কলহ বা বিবাদের কারনে আমি পদত্যাগ করি নাই।

আমি পদত্যাগ করেছি আমার ব্যাক্তিগত নীতিগত কারণে। আমার ইচ্ছা ছিল সুন্দর ভাবে সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া। আল্লাহ্ সাক্ষী, সাক্ষী আমার ঘনিষ্ট কিছু বন্ধু আমার পদত্যাগের সিদ্ধান্ত ১৬ই সেপ্টেম্বর এ নেওয়া না। সিদ্ধান্তটি অনেক আগেই নেয়া ছিল। 

আমি যদি অনুষ্ঠানের পরে কোন মিটিং এ পদত্যাগ করতাম, তাহলে লোকজনের মুখে নানা কথা সৃষ্টি হত। সবাই মনে করত, কমিটির মধ্যে কোন সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। কমিটির ভবিষ্যৎ পড়ে যেতো হুমকির মুখে। এত কষ্টের অর্জন এই কমিটির জন্য এটা আমি কখনই মেনে নিতে পারতাম না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আমাকে ছাড়াই এ কমিটি এগিয়ে যেতে সক্ষম। কমিটিতে রয়েছে ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার সাহেব এর মত যথেষ্ট যোগ্য ব্যাক্তি। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি আমাদের প্রেসিডেন্ট ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার সাহেবকে অত্যন্ত পছন্দ করি। নির্বাচিত হওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে উনার অনেক সাহায্য প্রয়োজন ছিল। যার প্রধান কারন নির্বাচনের পূর্বে উনি বাংলাদেশি কমিউনিটির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন না। গত এক বছরে সাধ্যমতো সততার সাথে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। আর এই সাহায্য অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করছি। তবে তা হবে সংগঠনের বাইরে থেকে। নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে আমার কাছে আয়ারল্যান্ড এ বসবাস রত বাংলাদেশীদের দাবি থাকতে পারে, আমার পদত্যাগ এর কারন জানার। নিচে আমি বোঝাতে চেষ্টা করবো আমার পদত্যাগ করার কারন গুলো ব্যাখ্যা করারঃ


পূর্বকথাঃ

২০০৬/২০০৭ BANGLADESH ASSOCIATION OF IRELAND (BAI) এর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই সংগঠনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে প্রধান লক্ষ্য ছিল আয়ারল্যান্ড এর সকল বাংলাদেশীদের কে নিয়ে একটি মাত্র সংগঠন গড়ে তোলার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেমন বাংলাদেশীরা বিভক্ত হয়ে হাজার হাজার সংগঠন গড়ে তোলে আয়ারল্যান্ড এ যেন এমনটি না হয়। সেই লক্ষ্য পূরণে ২০১০ সালের শেষের দিকে BAI এর তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মুস্তাফিজুর রাহমান সাহেবের নেতৃত্বে সমগ্র আয়ারল্যান্ড জুড়ে যখন নির্বাচন এর মাধ্যমে একটি NATIONAL EXECUTIVE COMMITTEE নির্বাচিত করার প্রয়াস নেয়া হয়, তখন শুরু হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশের বাংলাদেশীদের মত বিভিন্ন জটিলতা। বাংলাদেশীরা হতে থাকে বিভক্ত বিভিন্ন ছোট ছোট সংগঠনের মাধ্যমে। তখন শুরু হয় আন্দোলন বিভিন্ন ছোট ছোট সংগঠন কে এক করার।

ধন্যবাদ জানাই সেই সব ব্যাক্তি যেমন ব্যারিস্টার জাকির সাহেব, নাছির মজুমদার, হামিদ নাছির, টম ভাই, জামাল বাশীর ভাই, মোনেম রানা ভাই, মিরাজ শিকদার ভাই, আবু ভাই সহ এর সাথে জড়িত সবাইকে যারা সেই সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সমগ্র ছোট ছোট সংগঠন কে বিলুপ্ত করে ALL BANGLADESHI ASSOCIATION OF IRELAND এর নামে BANGLADESH ASSOCIATION OF IRELAND এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার পদক্ষেপ নেন। অত্যন্ত ত্রুটি বিচ্যুতি থাকা সত্বেও ধন্যবাদ জানাই ১৬ অক্টোবর ২০১১ তে প্রথম বারের মতো অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইকবাল হোসেন লিটন ভাই কে। তাঁর স্বদিচ্ছার কোন অভাব ছিল না। সমস্যা গুলো হয়েছিল মূলত অভিজ্ঞতার অভাবে।

মূল কথা ও পদত্যাগ এর প্রধান প্রধান কারনঃ
ABAI এর নামকরনঃ 
প্রথম থেকে একজন শিক্ষিত ব্যাক্তি হিসেবে সংগঠনের এই নামটি মেনে নিতে পারছি না। বাংলাদেশের কোন প্রদেশ কিংবা অঙ্গ রাজ্য নেই। যে কারণে INDIA এর ক্ষেত্রে ২৬ টি প্রদেশ মিলে কিছু করা হলে বলা হয় ALL INDIA, NORTHERN IRELAND ও REP. OF IRELAND মিলে কিছু করা হলে বলা হয় ALL IRELAND. বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ রকম কিছুর সুযোগ নেই। সমস্ত বাংলাদেশী মিলে সমগ্র আয়ারল্যান্ড-এ কিছু বোঝানোর ক্ষেত্রে সংগঠন টির নাম হতে পারত BANGLADESH ASSOCIATION OF ALL IRELAND। All Bangladeshi বলতে বোঝায় বাংলাদেশের সংখ্যা একাধিক আর সব কয়টা বাংলাদেশের লোকজনদেরকে এক সাথে All Bangladeshi বলা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।প্রেসিডেন্ট ডাঃ জিন্নুরাইন সাহেবের অনুরোধে বৃহৎ স্বার্থে প্রাথমিক ভাবে এই ভূল নামকরন মেনে নিয়ে কাজ করতে রাজি হই। কিন্তু বর্তমানে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে আমি আমাকে আর বোঝাতে সক্ষম হচ্ছি না যে কেন একটি ভূল জিনিস মেনে কাজ করতে হবে।

১৪ই জুলাই ২০১১ সমঝোতা কমিটির ত্রুটিঃ 
১৪ই জুলাই ২০১১ তারিখে রেডকাও হোটেলে ঐক্য ঘোষণার পূর্বে যারা তখনকার সমঝোতা কমিটির সদস্য ছিলেন তারা যে সমাধান বের করে ছিলেন সেটি কোন স্থায়ী সমাধান ছিল না। তারা তরিঘড়ি করে একটি নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি কমিটি নির্বাচিত করে দিয়েই তাদের দায়িত্ব শেষ করে দিতে চেয়েছিলেন। তারা তখন চিন্তা করেন নাই, যে সমস্যা গুলো তারা রেখে যাচ্ছেন সেগুলো থাকলে ABAI এর ভবিষ্যতে কি হবে। সমস্যা গুলো হচ্ছে-

  • ABAI এর নামকরণ। 
  • ABAI এর ইতিহাস স্পষ্ট করে না যাওয়া। যেমন BAI এবং অন্য সংগঠন গুলো মিলে ABAI এর জন্ম দেয়। ABAI কোন এক ব্যাক্তি বা কোন একটি সংগঠনের সৃষ্টি নয়। 
  • ABAI এর রেজিস্ট্রেশন সংক্রান্ত জটিলতা রেখে যাওয়ার কারণে আজ ও আমরা অবগত না ABAI এর আসল রেজিস্ট্রেশন কার কাছে। 
  • নির্বাচন কমিশনের জবাব দিহিতা নিশ্চিত না করার কারণে আমরা আজও নির্বাচনের ব্যয়ের কোন হিসাব পাইনি।
  • ABAI এর সংবিধান সম্পর্কে কোন দিক নির্দেশনা না দিয়ে যাওয়ার কারণে নির্বাচনোত্তর শুরু হয় বিভিন্ন জটিলতা। যা ৩৫ জনের এই নতুন কমিটির জন্য একটি অভিশাপ। 
  • আমার মতে উপরোক্ত সমস্যা গুলো থেকে সুবিধা নিয়ে ঐ সমঝোতার কমিটির কেউ কেউ তখন কোন মতে অনুষ্ঠিত যে নির্বাচন তাতে অংশ গ্রহন করে নির্বাচিত কমিটির বড় বড় পোস্ট এ আসন গ্রহন করার স্বপ্ন দেখছিলেন। এ সমস্ত বিষয়ে প্রতিবাদ না করতে পারার কারনে অন্তর্দাহনে জ্বলছিলাম বহু দিন থেকে। আমার এই পদত্যাগ সেই প্রতিবাদ এর একটি অংশ যা ABAI এর সদস্য থাকলে সম্ভব হত না।

একটি প্যানেল এর হয়ে নির্বাচন এ অংশ গ্রহনঃ
আমি আমার জানা মতে অন্যায় ও অসংগত কোন কিছুর কাছে কোন দিন আপোষ করি নাই। যে সংগঠনের জন্য এত কষ্ট করা সেই সংগঠনের নির্বাচনে দুইটি প্যানেল তৈরি হয়ে যাওয়া আমার জীবনের একটি বড় ব্যর্থতা। আর সেই নির্বাচনে একটি প্যানেল এর পক্ষে অংশ নিয়ে অন্যায়ের কাছে আপোষ করে নিজের নীতিতে আঘাত হানার কারণে নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। কিন্তু সেই মুস্তাফিজ ভাই যার আদর্শে আমি অনুপ্রানিত তাঁর সম্মান রক্ষার্থে এবং নিজেকে যাচাই করার লোভে যে আয়ারল্যান্ড এর বাংলাদেশীরা আমাকে কতটুকু ভালবাসে তা পরখ করে দেখার উদ্দেশ্যে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করি। যারা আমার ঘনিষ্ট বন্ধু তারা জানবেন আমার প্রতিজ্ঞা ছিল ঐ নির্বাচনে কোন রকম প্রচার আমি করবো না। মোবাইলে কোন মেসেজ আমি দেই নাই, কোন পোস্টার ব্যানার ছাপাই নাই, ভোট চাইতে মানুষের বাড়ি বাড়িও আমি যাই নাই আর আমার ফেসবুকেও কোন স্ট্যাটসেও একবারের জন্যও নির্বাচনে অংশ গ্রহন করার কথা বলি নাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশীরা যদি ভালবাসে আর পছন্দ করে তাহলে তারা ঠিকই আমাকে ভোট দিবে। আর তারা প্রমান করেছে যে তারা আমাকে পছন্দ করে ও ভালবাসে। তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

মিথ্যা বলবো না ইলেকশানের ঠিক পরপরই আমার পদত্যাগ এর ইচ্ছা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর পরই প্রেসি. ডাঃ জিন্নুরাইন জায়গিরদার সাহেবের সাথে প্রথম সাক্ষাতের সময় পূর্ব ইতিহাস, আমাদের সংগঠনের ঐতিহ্য ও তা কিভাবে ধরে রাখা যায় সে প্রসঙ্গে আলোচনার সময় তিনি আমাকে বোঝাতে সক্ষম হন যে নির্বাচিত হয়ে কোন কাজ না করে পদত্যাগ করলে তা আয়ারল্যান্ড এর বাংলাদেশীদের সাথে বিশেষ করে যারা আমাকে ভোট দিয়েছে তাদের সাথে বেইমানী করা হবে। তাছাড়া তিনি আমাকে প্রতিশ্রুতি দেন যে যেই আদর্শে এই সংগঠনের জন্ম সেই আদর্শে সততার সাথে কাজ করবেন। সে জন্য তিনি নিজেকে প্রমান করার একটি সুযোগ চেয়েছিলেন। আর আমার মনে হয় উনি নিজেকে প্রমান করতে সক্ষম হয়েছেন।  শুধু মাত্র উনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারনেই আমি এই এক বছর ধরে কাজ করে যাই। এই অভিষেক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে নিজেকেও বোঝাতে সক্ষম হয়েছি যে সংগঠনের সাথে বেইমানী করি নাই। কিন্তু আমার নিজের নীতির বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করায় নিজের বিবেক কে নিজে কিছুতেই মানাতে সক্ষম হচ্ছি না।

বিত্ত্বশালী ব্যাক্তিদের এবং রাজনৈতিক দল গুলোর উত্থান ও প্রভাবঃ
নির্বাচন হওয়ার পরে গত এক বছরে দেখা গেল বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল গুলোর উত্থান ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রভাব ও কলহ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিত্ত্বশালী ব্যাক্তিদের অন্যায় ও অনৈতিক হস্তক্ষেপ ও প্রভাব। বিভিন্ন সমস্যা ও জটিলতা সৃষ্টি করে অনবরত বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয় ABAI এর কার্যক্রমকে।
সংগঠনের স্বার্থে সেগুলোকে সহ্য করে কাজ করে যেতে হয়েছে। প্রতিবাদ করার কোন উপায় ছিল না। 
সংগঠনের বাইরে থেকে সেগুলো প্রতিবাদ করার লক্ষ্য পদত্যাগের অন্যতম একটি কারন।

কমিউনিটির অন্য সংগঠনের অনিয়মের প্রতিরোধ না করতে পারাঃ
BANGLADESH SPORTS ASSOCIATION OF IRELAND (BSAI) এর কার্যক্রমে বিভিন্ন অনিয়ম ও পর পর তিন বছর ইনসিওরেন্স জালিয়াতি করার পর এ বছরেও টুর্নামেন্টের সময় বিভিন্ন খেলোয়াড় আঘাত প্রাপ্ত হলে তাদের জন্য ABAI এর পক্ষ থেকে কিছু করতে না পারার ক্ষোভও পদত্যাগের একটি কারন।

কমিটির অন্য সদস্যদের উদ্দেশ্যঃ
যখন আমাকে বলা হয় নির্বাচিত হওয়ার সার্থকতা প্রমান করার জন্য একটি জমকালো অনুষ্ঠান আয়োজন করে জনগন কে দেখিয়ে দিতে হবে। তার সাথে আমি এক মত ছিলাম না। আমার মতে জনগনের জন্য কিছু করতে হলে সততার সাথে জনগনের সেবা করলে জনগন এমনিতেই মনে রাখবে। 
সারা বছর কিছু না করে হঠাৎ হাজার হাজার ইউরো খরচ করে একটি অনুষ্ঠান করলেই নির্বাচিত হওয়ার সার্থকতা প্রমান হয় না।সংগঠনের বাইরে থেকে কোন বাধ্যবাধকতা ছাড়া জনগনের সেই সেবা করার উদ্দেশ্য পদত্যাগের অন্যতম একটি কারন।

ইতিকথাঃ
এখন আমি বুঝতে পেরেছি যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীরা কেন বিভক্ত আর একটি দেশে কেন বাংলাদেশীদের হাজারটি সংগঠন গড়ে উঠে। তার প্রধান কারন সমাজের বিভিন্ন ক্ষমতালোভী ব্যাক্তি, কিছু রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব ও কিছু বিত্ত্বশালী ব্যাক্তিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও অসৎ উদ্দেশ্য আদায় করার লক্ষ্য।  এগুলো থামানো প্রয়োজন, থামানোর সময়ও হয়ে এসেছে। আর এগুলো থামাতে প্রয়োজন একটি বিপ্লব এর (REVOLUTION)। আর আমি সব সময় বলি বিপ্লব একা একা আসে না, কাউকে না কাউকে বিপ্লব আনার দায়িত্ব নিতে হয়। আর বিপ্লবের প্রধান শর্ত হচ্ছে পরিবর্তন। আর পরিবর্তনের প্রধান শর্ত হচ্ছে পদত্যাগ। যারা আমাকে বলতে শুনেছেন “I AM NOT A QUITTER, I AM A FIGHTER” তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই পদত্যাগের মাধ্যমে আমি হার মেনে নিচ্ছি না। ABAI এর বর্তমান কমিটিকে পূর্ন সমর্থন দিয়েই বলতে চাই আমার এই পদত্যাগের মাধ্যমে শুরু করতে চাই সেই বিপ্লবের যেই বিপ্লব থামিয়ে দিবে আমার এই স্বপ্নের সংগঠনের বিরুদ্ধে সমস্ত কার্যক্রম।

কাজী আহমেদুল কবির