সাহিত্যিক আরম্ভরে না গিয়ে সহজ ভাষায় চলে আসি: ১৯৭৫ সাল টি ছিলো বাংলাদেশের ইতিহাস একটি অন্যতম কালো বছর!!

সেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট, ০৩রা নভেম্বর, ৭ ই নভেম্বর তিন তিনটে তথাকথিত সেনা বিদ্রোহ এবং অভ্যুন্থান সংগঠিত হয়েছিলো!

স্বাধীনতা যু্দ্ধে S Force এর প্রধান সফিউল্লাহ, K Force এর প্রধান খালেদ মোশাররফ আর Z Force এর প্রধান জিয়াউর রহমান এদের স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ের ভুমিকা একেকজনের একেক রকমের এবং পরিনিতীও ভিন্ন হয়!

যদি এর পর হিসাব করেন জেনারেল জিয়ার পাঁচ বৎসর ক্ষমতাশীন অবস্থায় সর্বমোট ২১ টি সেনা অভ্যুন্থানে নিজেকে রক্ষা করেন কিন্তু ২২তম সেনা অভ্যুন্থানে নিহত হোন। বলা যায় ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল ছিলো দেশের জন্যে আরেকটি ক্রান্তিকাল!!

১৯৮১ সালের ৩০শে মে বন্দর নগরী চট্রগ্রামে একটি ক্যু সংগঠিত করেন প্রয়াত জেনারেল এরশাদ কিন্তু দোষ পড়ে জেনারেল মন্জুর উপরে!

দেশের সামরিক বাহিনীর ইতিহাসে সবচাইতে চালাক এবং অনেকটা বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটান অন্যতম দুইজন ব্যক্তি!! এরা হলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান এবং তার হাতেই গড়ে উঠা পরিবর্তিতে জেনারেল এবং প্রেসিডেন্ট ধুর্ত এরশাদ!!

মাঝখানে আন্তজার্তিক চক্রে ক্রিয়ানক হিসাবে কাজ করে যায় ১৯৭৫ সালের দিকে মেজর ফারুক, মেজর রশিদ, ডালিম, খন্দকার মোশতাকেরা।

অনেক দেশপ্রেমি লোকজন বলেন যে ১৯৭১ সালের আগে পশ্চিম পাকিস্তানে সামরিক ট্রেনিংয়ের পর ফেরত আর্মির কর্নেল, মেজর সৈন্যরাই অনেক সেনা বিদ্রোহ-অভ্যুন্থান করিয়ে থাকে দেশে!

আর ৭ই নভেম্বরে ১৯৭৫ এ জিয়ার বেঈমানিতে ধরা খেয়ে বেকুব বনে যান কর্নেল তাহের এবং উনার বাসদ সমর্থকগোষ্টি লোকেরা!

বলা রাখা দরকার যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট এবং ০৩রা নভেম্বর সেনা বিদ্রোহ বা অভ্যুন্থান বলা যাবে না! কারন ঐ দুইদিনে যা হয়েছিলো তা ছিলো সেনাবাহিনীর ক্ষু্দ্র একাংশের কাজ! আর ৭ই নভেম্বর ছিলো বামপন্থী বাসদের সমর্থনে সেনাবাহিনীর একটি বিশাল অংশের বিদ্রোহ!

১৯৮২ সালের ২৫শে মার্চ খালেদ মোশারফের মতো রক্তপাতহীন সেনা অভ্যুন্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন এরশাদ! আর এই এরশাদই IMF (International Monetary Fund) কে অনুমতি দেয় বাংলাদেশে (পড়তে থাকুন নিচের লেখা বুঝতে পারবেন!)! জেনারেল এরশাদ ১৯৮৮ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম ঘোষণা করে অন্যান্য ধর্মকে অপমান করেন আর স্বাধীনতা যু্দ্ধের মুলস্তম্ভে আঘাত করেন ধর্ম নিরপেক্ষ বাংলাদেশে! আর এই ধুর্ত অপরাধী এরশাদ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতা উপভোগ করে যে সম্পুর্ণ জীবনযাপন পার করে অত্যান্ত বৃদ্ধ বয়সে মারা যান!

১৯৯৬ সালে জেনারেল এ.এস.এম নাসিম ব্যর্থ চেষ্টা করেন আর ১১ জানুয়ারী ২০০৭ সালে যাকে #ওয়াল_ইলেভেন আরেকটি চেষ্টা করা হয়!

স্বাধীনতা পরবর্তি কালের ইতিহাস নিয়ে লেখা বইয়ের মধ্যে প্রয়াত কর্নেল (অব:) এম.এ. হামিদ পিএসপি র বেশ কয়েকটি বই উল্লেখ্য: উনার “তিনটি সেনা অভ্যুন্থান ও কিছু না বলা কথা”, “পাকিস্তান থেকে পলায়ন”, “ফেলে আসা সৈনিক জীবন”, “একাত্তরের যুদ্ধে জয় পরাজয়”, ইত্যাদি । উনি ছিলেন জেনারেল জিয়ার সহপাঠি! রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের এবং উনার ভাষ্যমতে জেনারেল এরশাদের ষড়যন্ত্রের বাধ্য হোওন চাকুরী ইস্তোফা দিতে তার সহপাঠি জেনারেল জিয়া দ্বারা অর্থাৎ চাকুরিচুত্য হতে বাধ্য হওন!

এম এ হামিদের স্ত্রী “রাণী হামিদ” বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক নারী দাবারু যিনি টানা ১৫বার জাতীয় দাবারু চ্যাম্পিয়ন! উনার বড় ছেলে কায়সার হামিদ দেশের মোহামেডান দলের এবং জাতীয় দলের ফুটবলার! উনার ছোট ছেলে জাতীয় স্কোয়াস দলের চ্যাম্পিয়ন এবং উনার ছোট মেয়েও নারী ফুটবলার!

অনেকে এম এ হামিদকে চিনেন না তাই একটু পরিবার পরিচিতি টেনে আনা, লেখকের ““তিনটি সেনা অভ্যুন্থান ও কিছু না বলা কথা” এই বইটি অনেকটা নিরপেক্ষ যাতে তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট সেনা বিদ্রোহ, ৩রা নভেম্বর সেনা বিদ্রোহ এবং ৭ই নভেম্বরে ঘটে যাওয়া সেনা অভ্যুন্থানের ঘটনা এবং কার্যকারন তুলে ধরেছেন! বইটি পড়লাম ভালো তথ্যবহুল লেখা তবে উনার আন্তর্জাতিক রাজনিতির বিশাল পর্ব তুলে ধরেন নাই যদিও উনি স্বীকার করেছেন যে উনার আন্তর্জাতিক রাজনিতী জ্ঞান কম। রক্ষীবাহিনীর ঐ সময়ের প্রধান নুরুদ্দিনকে যে ইংল্যান্ডে তথাকথিত ট্রেনিং পাঠানো হয়েছিলো ১৫ই আগষ্টের আগেই তা তিনি তার বইয়ে উল্লেখ্য করেন নাই! তিনি আরও উল্লেখ্য করেন নাই যে ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ে প্রায় ০৩২টি দিকভ্রষ্ট বামদলগুলো কে কি কি করার প্রয়াশে ছিলো বাংলাদেশে!

যতটুকু অনুসন্ধান করে বুঝা যায় যে স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পাকিস্থান ফেরত সেনাদের মাঝে দেশে একটি অসম প্রতিযোগিতা, মতাদর্শগত সমস্যা ইত্যাদি দানা বেঁধে উঠতে থাকে! বিদেশের মতো Wife Shopping অর্থাৎ প্রমোশনের জন্যে নিজের স্ত্রীকে ব্যবহার করার রিতী-রেওয়াজ নিয়ে প্রশ্ন আমরা কেউ তুলছি না!

গভীরভাবে হিসাব নিকেশ করলে অনেকে বুঝতে পারবে যে কারনে ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগষ্টের ভোরে স্বাধীন বাংলাদেশের জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সহপরিবারে হত্যা করা হয় আর ভারতে প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী গান্ধীকে হত্যা করা হয় ৩১ শে অক্টোবর ১৯৮৪ সালে!

মুলত রাশিয়া পন্থা অবলম্বন করে সমাজতন্ত্র কাঠামো দেশে প্রচলন যা বাংলাদেশে “বাকশাল” যা ৪/৫ মাস টিকে ছিলো অর্থাৎ দেশের ব্যাংকসহ অন্যান্য শিল্প-অর্থনৈতিক অবকাঠামো রাষ্ট্রত্বকরন যেমনটা ভারতের ইন্দিরাগান্ধীও করেছিলেন!

ধনতন্ত্র (পুঁজিবাদ) দেশের মহাপরাক্রম আমেরিকার মদদপুষ্ট সংগঠন IMF (International Monetary Fund) আর কুটনিতীবিদদের নিকট চক্ষুশুল হয় বাংলাদেশ ও ভারত। শান্তিতে নোবেল জয়ী “হেনরি কিসিন্জার” প্ল্যান করে অনেকে দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ষড়যন্ত্র করে হত্যা করে এবং এর মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট ছিলো! তেমনি ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা যারা করেছিলো তাতে “অপারেশন ব্লু ষ্টার” বা শিখ যোদ্ধা “বিন্দ্রাওয়াল” এর তীর ধনুক নয় বরং আন্তজার্তিক ব্যাংকিং চক্রের মাফিয়ারা জড়িত!

বলা হয় “রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় আর মাঝখানে উলু ঘাগড়ার প্রান যায়”!

প্রতিটি “ভৌগলিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক গুরুত্বপুর্ন দেশ” গুলোর মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সদা তৎপর যা চলমান সময়েও! ভবিষ্যতে যে আবারোও নতুন কোন সেনা বিদ্রোহ-অভ্যুন্থান দেখবো যে না এর কি গ্যারান্টি কে দিতে পারবে ?

১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্টের অনেক আগেই বঙ্গবন্ধুকে সর্তক করে দেয় একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা! কিন্তু দেশ ও দেশের জনগনকে অন্ধভাবে ভালবাসতেন যিনি তিনি আগাম সর্তকতা উপেক্ষা করেন! যার ফলাফলের চরম মুল্য দিতে হয় জাতিকে!

দেশপ্রেমি বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন এক সভায় “নতুন দেশের জন্ম হলে অনেকে পায় সোনার খনি আর আমি পাইছি চোরের খনি!”

আর “Bangladesh: A Legacy of Bloodshed” (বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ) বইটির লেখক অ্যান্থনী ম্যাসকার্নহাস যা আমাদের একটি ঐতিহাসিক দলিল যা পঠনীয়!

আমার এই লেখাটি অত্যান্ত সংক্ষেপে লেখা এবং অবশ্যই অসমাপ্ত যা থেকে অনেকগুলো লেখা তৈরী করা সম্ভব! হয়তো তা করবো পৃথকভাবে বা বই আকারে!


লেখকঃ সমীর কুমার ধর
ডাবলিন, আয়ারল্যান্ডে