করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে চলমান সাধারণ ছুটি শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগামীকাল রোববার থেকে খুলছে সরকারি-বেসরকারি সব অফিস। একই সঙ্গে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ ও ট্রেন বা গণপরিবহনও চালু হচ্ছে। তবে দূরপাল্লার বাস ও ৪ টি অভ্যন্তরীন রুটের বিমান চলাচল আগামী ১লা জুন থেকে শুরু হবে।
আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত অফিস, গণপরিবহনসহ অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কীভাবে পরিচালিত হবে এবং কোন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে সেই বিষয়ে নির্দেশনা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এসব প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী গত ২৩ মার্চ জারি করা নিষেধাজ্ঞা বহালই থাকছে। তবে এ নিষেধাজ্ঞা থেকে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহনকে বের করে আনা হয়েছে। এ সময়ে শর্তসাপেক্ষে সীমিত পরিসরে নির্দিষ্টসংখ্যক যাত্রী নিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত বিধিনিষেধ নিশ্চিত করে গণপরিবহন, যাত্রীবাহী নৌযান ও রেল চলাচল করতে পারবে। তবে সর্বাবস্থায় মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলা নিশ্চিত করতে হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি, অসুস্থ কর্মচারী ও সন্তানসম্ভবা নারীরা কর্মস্থলে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকবেন। জরুরি অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্র ছাড়া সব সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে আয়োজন করতে হবে।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। ইতিমধ্যে সাত দফায় ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এক মাস রোজা শেষে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হওয়ার পর চলমান এ ছুটি শেষ হয়েছে।
মন্ত্রী পরিষদের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার সময় এক জেলা থেকে অন্য জেলায় জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত থাকবে। প্রতিটি জেলার প্রবেশ ও বহির্গমন পথে চেকপোস্টের ব্যবস্থা থাকবে। জেলা প্রশাসন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় এ নিয়ন্ত্রণ সতর্কভাবে বাস্তবায়ন করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধ করার জন্য নিষেধাজ্ঞাকালে জনগণকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। রাত ৮টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয়, কর্মস্থলে যাতায়াত, ওষুধ কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন বা সৎকার এসব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। বাইরে চলাচলের ক্ষেত্রে সবসময়ই মাস্ক পরিধানসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার কথা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জনসাধারণ ছাড়াও সব কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের জারি করা নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে।
হাটবাজার, দোকানপাটে কেনা-বেচার সময় পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানতে হবে। শপিং মলের প্রবেশমুখে হাত ধোয়ার ব্যবস্থাসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শপিং মলে যাওয়া যানবাহনগুলোকে অবশ্যই জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে। হাটবাজার, দোকানপাট ও শপিং মল বাধ্যতামূলকভাবে বিকেল ৪টার মধ্যে বন্ধ করতে হবে।
আইনশৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কাজে নিয়োজিত সংস্থার অফিস, তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত থাকবে। ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দর, নদীবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরের মতো জরুরি পরিষেবা কার্যক্রমও নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। এমনকি টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরাও নির্দেশনার আওতামুক্ত থাকবে।
সড়ক ও নৌপথে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত যানবাহন ট্রাক, লরি ও কার্গো ভেসেল চলাচল অব্যাহত থাকবে। কৃষিপণ্য, সার, বীজ, কীটনাশক, খাদ্য, শিল্প পণ্য, রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের মালামাল, কাঁচাবাজার, খাবার, ওষুধের দোকান, হাসপাতাল ও জরুরি সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, নার্স ও কর্মী এবং ওষুধসহ চিকিৎসা সরঞ্জামাদি বহনকারী যানবাহন ও কর্মী, গণমাধ্যম এবং কেবল টিভি নেটওয়ার্কে নিয়োজিত কর্মীরা এ নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবেন।
ওষুধ, কৃষি উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প এবং উৎপাদন ও রপ্তানিমুখী শিল্পসহ সব কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তাদের কারখানা চালু রাখতে পারবে। এ সময় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের প্রণীত বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণে নির্দেশনা প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। নিষেধাজ্ঞাকালীন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা যাবে না। তবে অনলাইন কোর্স বা ডিসটেন্স লার্নিং অব্যাহত থাকবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা পূর্ণভাবে চালুর বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক নির্দেশনা দেবে। সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি অফিসসমূহ নিজ ব্যবস্থাপনায় সীমিত পরিসরে খোলা থাকবে। নিষেধাজ্ঞাকালে কেউ কর্মস্থল ত্যাগ করতে পারবেন না।
নিষেধাজ্ঞাকালে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত ও অনুষ্ঠান আয়োজন বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদগুলোয় জনসাধারণের জামাতে নামাজ আদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা অনুষ্ঠান অব্যাহত থাকার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।