হঠাৎ করে থেমে গেল ঢাকা। নেমে এলো কবরের নিস্তবদ্ধতা। দানবের অশুভ শক্তির পদভারে কাঁপছে পুরোদেশ। মানুষের রক্তের স্রোতে ভেসে যাচ্ছিল সোঁদা মাটি। গন্ধ মিলিয়ে গেল হাসনাহেনার। চার দিকে রক্তের গন্ধ । বাঁচার জন্যে নারি-পুরুষের আকুতি।
কোন কিছুতেই পাকিস্তানি দানব, পশুশক্তি সৈন্যদের মন গলে না। ঘরে ঘরে চলে নির্বিচার হত্যাকান্ড।
আজ সেই কালরাত। পচিঁশে মার্চ। বাঙ্গলীর জীবনে এক দগ দগে গা। যে গা ইচ্ছে করলে ও কোন দিন মুছে ফেলা যাবেনা। স্বাধীনতার লাল টুকটুকে সূর্যটাকে চিনিয়ে আনবে বলে বেরিয়ে পড়ে বাংলামায়ের দামাল ছেলেরা।
রাত ১টায় শুরু হয় পাকবাহিনীর বরর্বরচিত উন্মত্ততা।ইতিহাসের এই নিষ্টুর হত্যাকান্ডের নাম ''অপারেশন সার্চলাইট''। এই ব্লুপ্রিন্ট বাস্তবায়ন করতে ঢাকায় ডেকে আনা হয় ''বেলুচিস্তানের কসাই'' খ্যাত জেনারেল টিক্কা খান কে। বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার আলোচনা ছিল একটি শঠতা, সময়ক্ষেপন মাত্র । নইলে আলোচনার ফলাফল জানার জন্য যখন উদগ্রীব সারা বিশ্ববাসী তখন চোরের মত পালিয়ে গেল কেন ইয়াহিয়া?
ইয়াহিয়া পালিয়ে ঢাকা ত্যগের সাথে সাথে শুরু হয় ঘুমন্ত নিরস্র জনতার উপর হানাদার বাহিনীর পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ কাপুরোষোচিত ক্রেকডাউনের পর পরই বাঙ্গলীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানম্ডির ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বরের বাড়ী থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। এর কিছুক্ষন পরই পাকবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে ক্যান্টমেন্টে নিয়ে যায়। সেখান থেকে পরবর্তিতে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গবন্ধুকে।
অন্যদিকে এইদিনেই বঙ্গবন্ধু ৩২ নম্বরের বাড়ীর সামনে আগত জনতার উদ্দ্যেশ্যে বলেন, ''বিশ্বের কোন শক্তিই পূর্ব বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবীকে নস্যাত করতে পারবে না ''। তিনি বলেন, জনতার দাবীকে শক্তির দাপটে যদি কেউ রক্তচক্ষু দেখায় আমরা তা বরদাশত করব না। তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিব।
বঙ্গবন্ধুর ডাকে উজ্জীবিত বাঙ্গালী ২৫শে মার্চের পর নতুন করে উজ্জীবিত হয়। প্রস্তুত হয় পৃথিবীর ইতিহাসের নৃশংস হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেয়ার। ঝাঁপিয়ে পড়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে প্রিয় স্বাধীনতা। লাল-সবুজের পাতাকা নিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে জন্মনেয় বাংলাদেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ।