আজ ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। আজ থেকে ৪৯ বছর আগে একাত্তর সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত বাঙালী জাতির আলোকবর্তিকা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। সরকারের শপথগ্রহণ আর মুক্তির সনদ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে কবর রচিত হয় অখণ্ড পাকিস্তানের।
রচিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নেয় স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।
আজ সেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম তথা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। স্বাধীনতা অর্জনের পথে ১৭ এপ্রিল এক ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত দিন। বাংলাদেশের স্বাধীন সরকারের শপথ নেবার দিন, স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠের দিন। বাঙালী জাতি সুদীর্ঘ দুই শতাব্দীরও অধিককাল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ও পাকিস্তানের শাসনে শৃঙ্খলিত ছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত বাঙালী জাতির আলোকবর্তিকা হিসেবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। রচিত হয় স্বাধীন বাংলাদেশের নতুন ইতিহাস। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক করে এদিন গঠিত হয় প্রবাসী বিপ্লবী সরকার। বিশ্ব মানচিত্রে স্থান পায় স্বাধীন বাংলাদেশের নাম। পরবর্তীতে ঐতিহাসিক এ দিবসটি মুজিবনগর দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এ কারণে মুজিবনগর ও ১৭ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু নয়, বিশ্ব মানুষের মুক্তির ইতিহাসে আলাদা বিশেষত্ব বহন করে। কারণ এখানে ঘোষিত হয়েছিল একটি জাতির মুক্তির জন্য স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী নেতৃত্বে গড়ে ওঠা স্বাধীনতা আন্দোলন নস্যাত করতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাংলাদেশে নৃশংস গণহত্যা শুরু করে। গণহত্যা শুরুর পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর থেকেই একাত্তরের অগ্নিঝরা দিনগুলোতে মুক্তিকামী বাঙালীর সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু হয় সর্বত্র। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে ধোঁকা দিতে আওয়ামী লীগ নেতারা ঢাকা থেকে সরে গিয়ে ১০ এপ্রিল প্রবাসী অস্থায়ী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। যার ধারাবাহিকতায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল। সেদিন ছিল শনিবার। সীমান্তবর্তী বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আমবাগানের চারদিকে রাইফেল হাতে কড়া প্রহরায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হাজার হাজার মুক্তিকামী বাঙালীর উপচেপড়া ভিড় চারদিকে। মুক্ত আকাশের নিচে চৌকি পেতে তৈরি করা হয়েছে শপথ মঞ্চ। মঞ্চের ওপর সাজানো ৬ খানা চেয়ার। অনুষ্ঠানের প্রবেশপথে বাংলায় লেখা স্বাগতম। স্থানীয় সময় ১১টা বেজে ৫০ মিনিটে আসে সেই মাহেদ্রক্ষণ। নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের নেতারা একে একে আসতে থাকেন। ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে প্রকম্পিত চারদিক। প্রথম শপথ মঞ্চে উঠে এলেন বঙ্গবন্ধুর আজীবনের ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাঁর পেছনে তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেম এম মনসুর আলী, এএইচএম কামরুজ্জামান, বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ ও জেনারেল এমএজি ওসমানী। স্থানীয় শিল্পী এবং হাজারো মানুষের কণ্ঠে গাওয়া হয় বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি।’ এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম উত্তোলন করেন মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। নতুন সরকারের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের নাম স্থান পায়। এই মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে ও দক্ষ পরিচালনায় মুক্তিপাগল বাঙালী জাতি নয় মাস মরণপণ সশস্ত্র যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনেন মহামূল্যবান বাংলাদেশের স্বাধীনতা।