মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল৷ এখনও সেখানকার রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হচ্ছে৷ তাই মানবিক কারণে তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷

বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশ সরকারের মতভেদ সুস্পষ্ট হয়ে উঠল।এর আগে বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে বলা হয় বেশ কয়েক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী ইতোমধ্যে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে বাস করছে। এবং রোহিঙ্গাদের কারণে দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিনষ্ট হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে আরো বলা হয়, ঘনবসতি দেশ হবার কারণে আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় দেয়াও সম্ভব নয়। কিন্তু মার্কিন প্রতিনিধি দল বলছে, মানবিক দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া।

তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে আসছেন, রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধান না হলে এবং তারা ফের আসতে থাকলে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্যাতন না করতে পশ্চিমা বিশ্ব ও জাতিসংঘকে চাপ দেয়ার আহবানও জানানো হয়। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দল প্রথমে মিয়ানমার এবং পরে বাংলাদেশ সফর করেন৷ গত ৮ই সেপ্টেম্বর থেকে তাদের এই সফর শুরু হয়৷ বাংলাদেশ ৩ দিনের সফরে তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন৷ তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সাথে মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক করলেও সে সম্পর্কে সরকারের তরফ থেকে কিছুই জানানো হয়নি।

সফরের শেষ দিনে গতকাল বিকেলে তাঁরা ঢাকার অ্যামেরিকান সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন৷ তাঁদের পক্ষ থেকে ডেপুটি সেক্রেটারি কেলি ক্লেমেন্ট বলেন, তাঁরা মিয়ানমার সফরে দেখেছেন সেখানকার রাখাইন রাজ্যে এখনো অস্থিরতা আছে৷ তিনি বলেন, সেখানে এখনো অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে৷ কিছু ঘটনা তাদের অনুভূতি এবং আবেগকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে৷ সেখানে এখনো ঘরবাড়ি হারিয়ে রোহিঙ্গারা উদ্বাস্তু হচ্ছেন৷

এই পরিস্থিতিতে তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক কারণে বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার আহ্বান জানান৷ তবে তারা মনে করেন, এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়৷ তাদের আশা, মিয়ানমারে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে রোহিঙ্গারা তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যাবেন৷ তারা মনে করেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে আলোচনা চলেছে তাতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিয়ে সংকট কেটে যাবে৷ কেলি ক্লেমেন্ট বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে তারা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেছে৷ তাঁর কাছে মনে হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের জন্য সেখানকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সমঝোতা প্রয়োজন৷

বাংলাদেশে এখন নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার৷ আর অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা কয়েক লাখ৷ কিন্তু গত জুনে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জাতিগত দাঙ্গায় বিপর্যস্ত রোহিঙ্গাদের খাদ্য, বস্ত্র ও ওষুধ এমনকি চিকিৎসা দিয়ে সহায়তা করলেও আশ্রয় দেয়নি বাংলাদেশ৷ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশের অতীতের আচরণের প্রশংসা করেন মার্কিন প্রতিনিধি দল৷ সংবাদ সম্মেলনে ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মোজেনাও উপস্থিত ছিলেন৷

গত জুন মাসে মিয়ানমারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নির্যাতনে এ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান নিহত হয়েছে এবং আশি হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চলে গেছে। হাজার হাজার রোহিঙ্গা মুসলমানের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকজন।

মনিরুজ্জামান মানিক – বার্তা সম্পাদক