আবারও স্বপ্ন দেখতে উদ্বুদ্ধ করলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। স্বপ্ন দেখালেনও। তার এ স্বপ্ন দেখানো যাদের নিয়ে, তারা এ দেশের তরুণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। আর যে স্বপ্ন দেখালেন তিনি, তা-ও একেবারে নতুন। ক্ষুদ্রঋণের মতো নতুন একটি ধারণা তৈরির আহ্বান জানালেন তিনি। বললেন, সায়েন্স ফিকশন আছে।
বিজ্ঞান নিয়ে নানা কল্পকাহিনীও কম নয়। আজ থেকে ৫০ বছর পর পৃথিবী কোথায় থাকবে? কি হবে? কেমন হবে? তার সবই আছে সেই সব বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে। কিন্তু আজ থেকে ২০ বা ৫০ বছর পরে মানুষ কোথায় যাবে, কি সামাজিক পরিবর্তন হবে তার কোন ফিকশন আমরা এখনও করতে পারিনি। এটা যে করা যাবে না তা-ও নয়। তাই তোমাদের এখনই সামাজিক ফিকশনগুলো তৈরি করতে হবে। যাতে তোমরাই এর বাস্তবায়ন করতে পারো। আর আমি জানি এবং বিশ্বাস করি, তোমরা তা পারবে। সন্দেহ নেই, তোমাদের সেই যোগ্যতা ও মননশক্তি দু’টিই রয়েছে।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ সামাজিক ব্যবসাবিষয়ক একক বক্তৃতা করছিলেন রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে। আয়োজক ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এন্টারপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট ও এন্টারপ্রেনরশিপ ডেভেলপমেন্ট ফোরাম। বক্তৃতায় ড. ইউনূস ব্যবসাকে দু’ভাগে ভাগ করেন।তিনি বলেন, একটি হচ্ছে অর্থ উপার্জনের ব্যবসা আর অপরটি সামাজিক সমস্যা সমাধানের ব্যবসা।
আমরা অর্থ উপার্জনের ব্যবসা বেশি গুরুত্ব দিই। ফলে কেউ সম্পদের উঁচু স্তরে পৌঁছালেও আমাদের সামাজিক সমস্যা সেই আগের জায়গায় থেকে যায়। ড. ইউনূস বলেন, সামাজিক ব্যবসায় মুনাফা নেয়ার রেওয়াজ নেই। এটা মানুষের মঙ্গলের জন্য। এখান থেকে উদ্যোক্তারা মুনাফা নিতে পারবে না। আমরা টাকা উপার্জন করে যেমন আনন্দ পাই, তেমনি মানুষের সমস্যা দূর করতে পারলেও আনন্দ পাই। আর এ দুই তৃপ্তির মধ্যে সমন্বয় করতে পারে সামাজিক ব্যবসা। তিনি তরুণদের সেই তৃপ্তি লাভের আহ্বান জানান। যেখানে মঙ্গল ও স্বপ্ন উভয়ই লুকিয়ে আছে; যা দেখতে পারে আর দেখাতে পারে তরুণরাই।
তিনি বলেন, আগামী ২০ বছর পরের প্রজন্ম হয়তো দারিদ্র্য কি জিনিস তা জানবে না। তাদের বিষয়টি বোঝাতে হবে। অথবা বেকারত্ব শব্দটির মানে তাদের কাছে বোধগম্য হবে না। এভাবে ২০ কিংবা ৫০ বছর পরে কি হবে তার ফিকশন রচনা তরুণ প্রজন্মকেই করতে হবে। ‘চিন্তা ও পরিকল্পনা’ তোমাদেরকেই করতে হবে। সামাজিক ব্যবসা মানে স্রেফ অর্থ নয়, এটি একটি চিন্তা। তিনি বলেন, সম্ভব ও অসম্ভবের মধ্যে পার্থক্য দিনে দিনে কমে আসছে। আজ যে কাজ অসম্ভব কাল তা সম্ভব হচ্ছে। আর এজন্য কৃতিত্বের দাবিদার তরুণরাই।
আমরা ভারত থেকে ডিম কিনি। যেদিন আমরা ভারতে ডিম বিক্রি করতে পারবো, সেই দিন আমাদের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। তাই মাছ, কৃষিসহ যে কোন পণ্য উৎপাদন আমাদের বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, কেউ দরিদ্র নয়, কিংবা দরিদ্ররা দারিদ্র্যের জন্য দায়ীও নয়। এজন্য দায়ী পদ্ধতি। যে বা যারা এই পদ্ধতি তৈরি করছে, সে-ই এজন্য দায়ী। তাই পদ্ধতি বদলাতে হবে। আসলে প্রতিটি মানুষই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, পরিকল্পনার মাধ্যমে একটি সমস্যার সমাধান করতে হবে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. আকবর আলি খান।
অনলাইন ডেস্ক